খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করতে হবে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত যে কোনো ধানের চাল খেতে হবে। দেশে মিনিকেট নামে কোনো ধানের জাত নেই। এটা একটি ব্র্যান্ডের নাম। মিলাররা বিভিন্ন জাতের ধান ছাঁটাই করে এই ব্র্যান্ডের চাল বাজারজাত করছে। এতে চালের গুণাগুণ ঠিক থাকছে না।

বুধবার রাজধানীর ইস্কাটনে প্রবাসীকল্যাণ ভবনের বিজয় একাত্তর হলে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। 

এ সময় জানানো হয়, আগামীকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে 'চতুর্থ নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০২১' উদযাপন করা হবে। এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে বিশেষ অতিথি থাকবেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, 'নিরাপদ চাল খেতে চাইলে লাল চাল খেতে হবে। চকচক করলেই সোনা হয় না, এটা বোধ হয় আমরা ভুলে গেছি। চকচক চাল খেতেই আমরা পছন্দ করি। আর ব্যবসায়ীরা এই সুযোগ নিয়ে কারসাজির আশ্রয় নেয়। তারা বিভিন্ন জাতের চাল কেটে-ছেঁটে এসব চাল প্রস্তুত করছে। চাল যত বেশি পলিশ করা হয় দামও তত বেশি হয়, সেটা প্যাকেটজাত করলে দাম আরও বেশি হয়।' 

চকচকে চাল খাওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'মিনিকেট চালের বিষয়ে জরিপ করতে একটি কমিটি করা হয়েছিল। তাদের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই। মিনিকেট আসলে একটি ব্র্যান্ডের নাম। বিভিন্ন জাতের ধান ছাঁটাই করে পলিশ, ফাইন পলিশ, মিডিয়াম পলিশের মাধ্যমে মিলাররা এই ব্র্যান্ডের চাল তৈরি করে বাজারজাত করছে।'

মন্ত্রী আরও বলেন, 'এটি চাইলেই বন্ধ করা সম্ভব নয়। মিলাররা কৃষকদের কাছ থেকে একই জাতের ধান পায় না। কৃষকরা একই বস্তায় বিভিন্ন জাতের ধান ভরে মিলারদের সরবরাহ করেন। সেখানে জাতের স্বকীয়তা থাকে না। এরপর তারা পলিশ করে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে বাজারজাত করে। তাই এটি চাইলেই বন্ধ করা যাবে না, তবে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হবে।'

এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, 'দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ১৮টি মন্ত্রণালয় এবং মোট ৪৮৬টি সংস্থা কাজ করছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ সবাইকে নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে সমন্বয়ের কাজ করছে। এখন প্রতিনিয়ত নজরদারি করা হচ্ছে। দেশের প্রতিটি জেলায় নিরাপদ খাদ্য মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এই পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ৯ হাজার ৪৭৫টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছে।'

খাদ্য সচিব মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম বলেন, 'খাদ্যের নিরাপত্তা ও গুণগতমান পরীক্ষণের জন্য দেশের ৬টি বিভাগে ৬টি ল্যাবরেটরি নির্মাণ করা হচ্ছে। এফএও সহযোগিতায় একটি মোবাইল ল্যাবরেটরি ভ্যানের কার্যক্রম চালু করা হয়েছে।' 

তিনি আরও বলেন, 'কারও একার পক্ষে খাদ্য নিরাপদ করা সম্ভব নয়। সব সংস্থাকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করছে বিএফএসএ। এজন্য আলাদা কমিটি করা হয়েছে। বিএসটিআই, মৎস, প্রাণী ও কৃষিসহ অন্য সব সংস্থার সমন্বয়ে এ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।'

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল কাইউম সরকার বলেন, 'স্ট্রিটফুড এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। বিশ্বের উন্নত দেশেও স্ট্রিটফুড রয়েছে। তবে, দেশের ফুটপাতে বিক্রি হওয়া খাবার স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এটি নিশ্চিত করার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে অনেককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সচেতনতা বাড়াতে টিভিসি তৈরি করা হয়েছে। তাছাড়া রেস্তোঁরা প্রবিধানমালা তৈরি করা হয়েছে।' 

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমানে খাদ্যে বড় সমস্যা ট্রান্সফ্যাট। এই সমস্যা সমাধানে বিধিমালা করা হচ্ছে।'

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদসহ খাদ্য মন্ত্রণালয় ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।