জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার দায়ে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সানওয়ার সিরাজকে অপসারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত নিবন্ধক ও সিন্ডিকেট সচিব রহিমা কানিজ এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ওই শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর কোনো ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবেন না। অফিস বন্ধ থাকায় সানওয়ার সিরাজের কাছে অফিসাদেশ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। পরবর্তী কার্যদিবসে আদেশের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানানো হবে।

এদিকে এটিকে ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দিয়ে বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করেন অপসারিত শিক্ষক সানওয়ার সিরাজ। তিনি বলেন, 'দুই শিক্ষকের রাজনৈতিক অন্তঃকোন্দলের কারণে আমার বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মিথ্যা অভিযোগকে সম্বল করে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান আমার বিরুদ্ধে একপাক্ষিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এছাড়া অভিযোগকারী ছাত্রীর লিখিত বক্তব্য ছাড়া রিপোর্ট প্রণয়ন করে শাস্তির সুপারিশ করা একপেশে ও মহামান্য হাইকোর্টের আইনের পরিপন্থী বলে আমি মনে করছি।'

সানওয়ার সিরাজ আরও বলেন, 'সেলের অধিকাংশ সদস্য একটি বিভাগের (নৃবিজ্ঞান)। যার কারণে তারা যে কোনো সিদ্ধান্ত যে কারো বিরুদ্ধে নিতে পারেন।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয়, নিবন্ধকসহ বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিরা নিয়ে সিন্ডিকেট গঠিত। সুতরাং অপসারণের সিদ্ধান্ত যৌক্তিক।' 

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক রাশেদা আখতারকে ফোন করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ছাত্রী এবং বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ইশিতা আখতার বলেন, 'সেলের প্রধানসহ আমি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক নৃবিজ্ঞান বিভাগের সঙ্গে জড়িত। ২০২০ সালের অক্টোবর মাস থেকে এখন পর্যন্ত আমি মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছি। সর্বশেষ কী তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। সুতরাং এ অভিযোগ ভিত্তিহীন।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম বলেন, 'উপর্যুক্ত প্রমাণের ভিত্তিতে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদি এটি তার কাছে ন্যায়বিচার বলে মনে না হয় তবে তিনি উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারেন। সেখানে ন্যায়বিচার দাবি করতে পারেন।'

২০১৯ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর নিজ বিভাগের শিক্ষক সানওয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক ছাত্রী। এর বিচার চেয়ে বিভাগের সভাপতির কাছে একটি অভিযোগও দায়ের করেন তিনি। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে সিন্ডিকেটের সভায় অভিযুক্ত শিক্ষক সানোয়ার সিরাজকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।