- বাংলাদেশ
- বিচার শেষ হয়নি ১৭ বছরেও
বিচার শেষ হয়নি ১৭ বছরেও

ড. হুমায়ুন আজাদ -ফাইল ছবি
বহুমাত্রিক লেখক ও অধ্যাপক ড. হুমায়ুন আজাদ হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়নি ১৭ বছরেও। ২০১২ সালের ২০ এপ্রিল পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় সিআইডি। এরপর নয় বছরে ৫৮ সাক্ষীর মধ্যে ৪১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আশা, এ বছরই রায় পাওয়া যাবে।
রাষ্ট্রপক্ষের ভাষ্য, আসামিপক্ষ নানাভাবে বিচার বিলম্বিত করে চলেছে। আগামী ৪ মার্চ ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মাকছুদা পারভীনের আদালতে পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপনের দিন ধার্য রয়েছে। এ প্রক্রিয়া শেষ হলেই মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসবে।
হুমায়ুন আজাদের বড় মেয়ে মৌলি আজাদ সমকালকে বলেন, 'বাবার হত্যাকাণ্ডের অনেক পরে অভিজিৎ ও দীপন হত্যাকাণ্ড হলেও তার বিচার শেষ হয়েছে। এটি আমাদের আশাবাদী করেছে। আমাদের পরিবারের প্রত্যাশা, বাবার আগামী মৃত্যুবার্ষিকীর (১২ আগস্ট) আগে বিচার পাব। এবার যেন আমাদের বিচারের অপেক্ষা ফুরায়।'
২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির রাতে বাংলা একাডেমির উল্টো পাশের ফুটপাতে আক্রান্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। তাকে চাপাতি ও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। পরদিন হুমায়ুন আজাদের ভাই মঞ্জুর কবির রমনা থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন।
হুমায়ুন আজাদ ২২ দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং ৪৮ দিন ব্যাংককে চিকিৎসা নেন। সবশেষ জার্মানির মিউনিখে যান এক আমন্ত্রণে। ওই বছরের ১২ আগস্ট সেখানে তিনি রহস্যজনকভাবে মারা যান। তার মৃত্যুর পর মামলাটি আদালতের নির্দেশে হত্যা মামলায় রূপান্তর হয়। একই ঘটনায় হত্যা মামলার পাশাপাশি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনেও পৃথক মামলা হয়।
মামলার আসামিরা হলো- জেএমবির শূরা সদস্য মিজানুর রহমান ওরফে মিনহাজ ওরফে শফিক, আনোয়ার আলম ওরফে ভাগ্নে শহিদ, সালেহীন ওরফে সালাহউদ্দিন, হাফিজ মাহমুদ ও নুর মোহাম্মদ ওরফে সাবু। এর মধ্যে মিনহাজ ও আনোয়ার কারাগারে আছে। তারা দু'জনই ঘটনায় সম্পৃক্ততার বিষয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
সালাহউদ্দিন ও নুর মোহাম্মদ পলাতক। সালাহউদ্দিন ও হাফিজ মাহমুদ গ্রেপ্তার হলেও ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে তাদের ছিনিয়ে নিয়েছিল জঙ্গিরা। সালেহীন পালিয়ে যেতে পারলেও হাফেজ মাহমুদ পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। আলোচিত এই মামলায় প্রথমে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে ওয়াজ করা জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকেও আসামি করা হয়। পরে তার নাম বাদ দেওয়া হয়।
ঢাকার মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু সমকালকে বলেন, আসামি পক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষ হলেই মামলাটি রায়ের পর্যায়ে চলে আসবে।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সাইফুল ইসলাম হেলাল বলেন, সাক্ষীদের জবানবন্দি, মামলার আলামত এবং আসামির জবানবন্দির ভিত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। এখন পলাতক আসামিদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হলে আদালত রায় ঘোষণার দিন ঠিক করবেন।
বিস্ফোরক মামলার বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিস্ফোরক মামলায় ১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। সাক্ষীদের আদালতে আনতে আমরা কাজ করছি।
মন্তব্য করুন