করোনাভাইরাসের গণটিকাদান কর্মসূচিতে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া অব্যাহত রয়েছে। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে টিকাদানে নিম্নমুখী গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গণটিকাদানের ১৭তম দিনে শনিবার আরও এক লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৩ মানুষ টিকা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৮০ হাজার ৭৬১ জন এবং নারী ৫৩ হাজার ৭২ জন। সবমিলে এ পর্যন্ত মোট টিকা নিয়েছেন ২৯ লাখ ৮৪ হাজার ৭৭৩ জন।

তাদের মধ্যে আবার পুরুষ ১৯ লাখ ৩৭ হাজার ২৬ জন এবং নারী ১০ লাখ ৪৭ হাজার ৭৪৭ জন। টিকাগ্রহীতাদের মধ্যে ৭১১ জনের শরীরে মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তারা সবাই সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্যবিভাগ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে টিকা পেতে মানুষের আগ্রহ অব্যাহত আছে। টিকা পেতে আগ্রহ প্রকাশ করে শনিবার সন্ধ্যা সোয়া সাতটা পর্যন্ত ৪২ লাখ ১৩ হাজার ৭৫৬ জন সুরক্ষা অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে নিবন্ধিত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃপক্ষ।

এক সপ্তাহ ধরে টিকাদানে গতি কম:

শুরুতে প্রতিদিন দুই লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে স্বাস্থ্যবিভাগ। কিন্তু টিকাগ্রহীতাদের আগ্রহ কম থাকায় ওই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে প্রতিদিন এক লাখ করা হয়। তাদের সাড়া না মেলায় বয়সসীমা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৪০ বছর করা হয়। অর্থাৎ আগে নির্দিষ্ট ১৫ ক্যাটাগরির বাইরে ৫৫ বছরের ওপরের বয়সীরা টিকা নিতে পারতেন। পরে তা কমিয়ে ৪০ বছর বা তার ওপরের বয়সী করা হয়। এরপরই টিকাদান কর্মসূচিতে গতি বাড়ে।

কিন্তু ১৮ ফেব্রুয়ারির পর প্রতিদিনই টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কমছে। টিকাদান কর্মসূচির তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শুরুতে গত ২৭ ও ২৮ জানুয়ারি দুই দিন ৫৬৭ জনকে পরীক্ষামূলক টিকা দেওয়া হয়েছিল।

আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মসূচির প্রথম দিন ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকা নেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। দ্বিতীয় দিন ৮ ফেব্রুয়ারি এ সংখ্যা ছিল ৪৬ হাজার ৫০৯ জন। তৃতীয় দিন ৯ ফেব্রুয়ারি তা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে এক লাখ এক হাজার ৮২ জনে দাঁড়ায়। চতুর্থদিন ১০ ফেব্রুয়ারি টিকা নেন এক লাখ ৫৮ হাজার ৪৫১ জন।

পঞ্চম দিনে ১১ ফেব্রুয়ারি দুই লাখ চার হাজার ৫৪০ জন টিকা নেন। শুক্রবার ১২ ফেবুয়ারি টিকাদান বন্ধ ছিল। পরবর্তী দুই দিনে টিকাদান কিছুটা কমে আসে। বিশেষ করে পঞ্চম দিনে দুই লাখের বেশি টিকাগ্রহণের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রে তাৎক্ষণিক নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর টিকাগ্রহীতা কিছুটা কমে ষষ্ঠ দিনে ১৩ ফেব্রুয়ারি এক লাখ ৯৪ হাজার ৩৭১ জন টিকা নেন।

সপ্তম দিনে ১৪ ফেব্রুয়ারি এক লাখ ৬৯ হাজার ৩৫৩ জন টিকা নেন। তবে অষ্টম দিনে ১৫ ফেব্রুয়ারি টিকাগ্রহীতা আবারও বেড়ে দুই লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জনে পৌঁছায়। নবম দিনে ১৬ ফেব্রুয়ারি টিকাগ্রহীতার সংখ্যা আরও বেড়ে দুই লাখ ২৬ হাজার ৯০২ জনে পৌঁছায়। দশম দিনে ১৭ ফেব্রুয়ারি বুধবারও টিকাগ্রহীতার সংখ্যা দুই লাখ ছাড়িয়ে যায়। টিকা নেন দুই লাখ ২৬ হাজার ৭৫৫ জন। ১১তম দিনে ১৮ ফেব্রুয়ারি টিকা নেন দুই লাখ ৬১ হাজার ৯৪৫ জন। এটিই এখন পর্যন্ত একদিনে টিকাগ্রহীতাদের সর্বোচ্চ সংখ্যা।

এরপর প্রতিদিনই টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কমতে থাকে। ১৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ১২তম দিনে ২০ ফেব্রুয়ারি টিকাগ্রহীতা আগের তুলনায় কিছুটা কমে আসে। ওইদিন টিকা নেন দুই লাখ ৩৪ হাজার ৫৬৪ জন। ২১ ফেব্রুয়ারি রোববার সরকারি ছুটির দিনে টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ১৩তম দিনে ২২ ফেব্রুয়ারি টিকা নেন আরও দুই লাখ ২৫ হাজার ২৮০ জন।

১৪তম দিনে ২৩ ফেব্রুয়ারি টিকা নেন এক লাখ ৮২ হাজার ৮৯৬ জন। ১৫তম দিনে ২৪ ফেব্রুয়ারি টিকা নেন এক লাখ ৮১ হাজার ৯৮৫ জন। ১৬তম দিনে ২৫ ফেব্রুয়ারি টিকা নেন এক লাখ ৮১ হাজার ৪৩৯ জন।

শুক্রবার টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ১৭তম দিন শনিবার টিকাগ্রহীতার সংখ্যা আরও কমে এক লাখ ৩৩ হাজার ৮৩৩ জনে পৌঁছেছে।

তবে জাতীয় কভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচির কোর কমিটির সদস্য ও আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীর সমকালকে বলেন, সরকারি ছুটির পরদিন টিকাদান কিছুটা কম থাকে। পরবর্তীকালে আবার বাড়তে থাকে। এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী টিকাদান কর্মসূচি চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।