উনসত্তরে ঐতিহাসিক আগরতলা মামলা থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ৩৫ জনের মুক্তির ঘটনা ছিল বাঙালির মুক্তিযুদ্ধের জন্য আরেকটি অনুপ্রেরণা। পাকিস্তানি স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান বাঙালিদের প্রবল আন্দোলনের মুখে তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে তার সরকারের পতন ঘটে। এ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধকে ত্বরান্বিত করেছিল।

শনিবার ঢাকা সেনানিবাসে বিজয় কেতন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ‘ঐতিহাসিক আগরতলা মামলায় অভিযুক্ত ও পরিবারবর্গের স্মৃতিচারণ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজনরা এ কথা বলেন। এটি আয়োজন করে শিশু-কিশোর সংগঠন ঘাসফুল। পাশাপাশি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়।

আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বুঝতে পেরেছিলেন, এই পাকিস্তান বাঙালিদের জন্য হয়নি। কারণ কেন্দ্রীয়ভাবে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের স্বার্থ সংরক্ষণ নিশ্চিত করা যায়নি। তখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সোহরাওয়ার্দী নির্বাচন আয়োজনে জোর দেন। এজন্য সংবিধান প্রণয়ন করা জরুরি। তবে পাকিস্তান সরকার নানাভাবে সংবিধান প্রণয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে। শেষপর্যন্ত ১৯৫৬ সালে সংবিধান গৃহীত হয়েছিল। এরপর থেকেই মূলত আইয়ুব খান দুইজন মানুষকে নিয়ে ভীত ছিলেন। একজন সোহরাওয়ার্দী। তিনি মারা গেলে আইয়ুব খান হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। এরপর তার দ্বিতীয় শঙ্কা ছিল বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। এ কারণেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নানা যড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন। তবে তিনি সফল হননি।

মেজর (অব.) ওয়াকার হাসান বীরপ্রতীক বলেন, আগরতলা মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে পাকিস্তান সরকার মূলত বাঙালিদের কাছে নতি স্বীকার করে নিয়েছিল। এটি পরে বাঙালির সত্তরের নির্বাচন ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল।

আগরতলা মামলার স্মৃতিচারণ করে সার্জেন্ট (অব.) আবদুল জলিল বলেন, খেলোয়াড়, শিল্পীরাও মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখায় মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তবে আমরা আগরতলা মামলার আসামিরা আজও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাইনি। এটি আমাদের পীড়িত করে।

সংগঠনের সভাপতি হাসান আবদুল্লাহ বিপ্লবের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন আগরতলা মামলার বৈরী সাক্ষী আবুল হোসেন ও সার্জেন্ট জহুরুল হকের ভাতিজি নাজনীন হক মিমি।