- বাংলাদেশ
- নানা আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপিত
নানা আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উদযাপিত

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষ্যে দেশজুড়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়- ফোকাস বাংলা
'সোনার বাংলা' প্রতিষ্ঠার শপথের মধ্য দিয়ে বুধবার সারাদেশে উদযাপিত হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। একই সঙ্গে দিনটিকে 'জাতীয় শিশু দিবস' হিসেবেও পালন করা হয়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও সারাদেশে নানা কর্মসূচিতে মানুষের স্বতঃস্ম্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল।
বাঙালির অনন্য গৌরবের দিনটি পালিত হয়েছে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায়। ছিল সরকারি ছুটি। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে ঢাকার পুরাতন বিমানবন্দর এলাকায় ১০১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়। সারাদেশে সব সরকারি-বেসরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অফিস-আদালতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ভোরে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের কর্মসূচি শুরু হয়।
দেশজুড়ে দিনব্যাপী কর্মসূচিতে আরও ছিল, জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জন্মদিনের কেক কাটা, র্যালি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, মোনাজাত, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বইমেলা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, পুরস্কার বিতরণ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, পোস্টার প্রদর্শনী প্রভৃতি।
বুধবার সকালে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ সেখানে নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। জাতির পিতার ছোট মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানা, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শ্রদ্ধা নিবেদনের পর রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফাতেহা পাঠ করেন এবং মোনাজাতে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট হত্যাযজ্ঞে শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। এছাড়া দেশ ও জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়। পরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক বাড়িতে '৭৫-এর ১৫ আগস্টের কালরাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ পড়ে থাকার স্মৃতিবিজড়িত সিঁড়িতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু ভবন ত্যাগ করার পর সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারে হাজার হাজার মানুষের কণ্ঠে উচ্চারিত নানা স্লোগানে গোটা এলাকা মুখর হয়। সেখানে একে একে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, মহিলা আওয়ামী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগ, ছাত্রলীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ, তাঁতী লীগ, আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বিএমএ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, আইডিইবি, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, খেলাঘর, কচি-কাঁচার মেলা, জয়বাংলা সাংস্কৃতিক ঐক্যজোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মহিলা শ্রমিক লীগ, যুব শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ, বঙ্গবন্ধু ললিতকলা একাডেমি এবং আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ অসংখ্য দল ও সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম সালাউদ্দিন ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমেদ চৌধুরী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খানের নেতৃত্বে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও দলের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। আওয়ামী লীগের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রদ্ধা জানায়। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ কমপ্লেপে জাতীয় শিশু দিবসের অনুষ্ঠানমালায় তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার এবং সংবাদপত্রগুলোতে বিশেষ ক্রোড়পত্র ও নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর রুহের মাগফিরাত কামনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত এবং ১০০ জন কোরআনে হাফেজের মাধ্যমে ১০০ বার কোরআন খতম সম্পন্ন হয়। সারাদেশের মসজিদ, মাদ্রাসা ও মক্তবে অনুরূপ কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা সভায় জাতির পিতার আত্মার শান্তি ও সদগতি কামনা করা হয়। বিভিন্ন মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। সারাদেশের সব সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিশেষ স্বাস্থ্য সেবাদান কর্মসূচি ও রোগীদের উন্নতমানের খাবার পরিবেশন এবং মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র অলিগলিতে মাইকে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ এবং স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদায়ক গান বেজেছে। বিদেশে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও দূতাবাসগুলো নানা কর্মসূচি পালন করেছে।
আরও আয়োজন : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে জাতির পিতার ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীর নেতৃত্বে কমিটির কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শ্রদ্ধা জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় ছিল জন্মদিনের কেক কাটা, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা, সংগীতানুষ্ঠান প্রভৃতি। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদসহ আবাসিক হল, হোস্টেল, মসজিদ ও উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনা করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল নির্বাচন প্রস্তুতি কমিটির ব্যানারে মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও কেক কাটা ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের প্রথম প্রহরে রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সামনে কেক কাটা, আতশবাজি ও ফানুস উড্ডয়ন উৎসব, সংবাদচিত্র প্রদর্শনী এবং আলোচনা সভা করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ।
জাতীয় প্রেস ক্লাবে জাতীয় পতাকা ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন, কেক কাটা, দিনব্যাপী মিষ্টি মুখ, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার এবং আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। দিনের শুরুতেই সংগঠনের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে জাতীয় প্রেস ক্লাবে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এছাড়া মোল্লা জালাল ও আবদুল মজিদের নেতৃত্বে বিএফইউজে-বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাজ্জাদ আলম খান তপুর নেতৃত্বে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, সুভাষ চন্দ বাদল ও আবু সাঈদের নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিক পরিষদ, জিহাদুর রহমান জিহাদ ও মহিউদ্দিন কাদেরের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সাংবাদিক ফোরাম এবং গোলাম মোস্তফা ও কাজল হাজরার নেতৃত্বে ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, কামরুজ্জামান বাবুর নেতৃত্বে চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সদস্য সন্তানদের অংশগ্রহণে দিনব্যাপী চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও গানের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ করেন শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান লাকী ইনাম। সংগঠনের সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মাইদুর রহমান রুবেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মিজান চৌধুরী, ক্রীড়া সম্পাদক মাকসুদা লিসা, কার্যনির্বাহী সদস্য এম এম জসিম, রহমান আজিজ প্রমুখ।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে কেক কাটা ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক বাহাদুর শাহ পার্কে বঙ্গবন্ধুর শত ছবি দিয়ে 'বঙ্গবন্ধু দেওয়াল' তৈরি করা হয়। সেখানে পথশিশুদের নিয়ে চিত্রাঙ্কন, পথনাটক ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এছাড়া সূত্রাপুর বানিয়ানগর মাদ্রাসায় কোরআন খতম, বিশেষ মোনাজাত এবং ফরাশগঞ্জে 'ঢাকা অরফানেজ সোসাইটি অব হিন্দু' অনাথ আশ্রমের শিশুদের নিয়ে কেক কাটা ও খাবার বিতরণ করা হয়।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে 'শান্তি ও উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর দর্শন' শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কর্মশালা শেষে কোরআন তিলাওয়াত প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণী ও দোয়া অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়।
এছাড়া প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক), সমাজসেবা অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, মহিলা পরিষদ, টেলি কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিক্যাব), রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব), ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি এবং ওলামা লীগের একাংশসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি পালন করেছে।
মন্তব্য করুন