দুটি আইসোলেশন সেন্টার নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
ছবি: ফাইল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ এপ্রিল ২০২১ | ১২:০০ | আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২১ | ১৪:৪৩
রাজধানীর বসুন্ধরা ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মার্কেটে নির্মিত দুটি করোনা আইসোলেশন সেন্টার নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল রোববার সমকালের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আইসোলেশন সেন্টার দুটি সম্পর্কে সঠিক ঘটনা না জেনে একটি গণমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন প্রচার করা হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে আইসোলেশন সেন্টার দুটিকে হাসপাতাল বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে একটি হাসপাতালকে বিলুপ্ত এবং একটি হাসপাতালকে বাদ রেখে পাশের ভবনে নতুন হাসপাতাল তৈরি করার কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, পুরো প্রতিবেদনটি মিথ্যা ও বানোয়াট। বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টারের তথ্য তুলে ধরে জাহিদ মালেক বলেন, গত বছর করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে বসুন্ধরা গ্রুপের আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার সংলগ্ন এলাকায় ২ হাজার ১৭ শয্যার এটি চালু করা হয়। এর মধ্যে ৫০টি আইসিইউ শয্যা ছিল। এখানে ১২০ জন চিকিৎসক, ১৬৬ জন নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীসহ ৩৪৯ জনবলের পদায়ন করা হয়।
মন্ত্রী জানান, আইসোলেশন সেন্টারটি তৈরি করতে ৪১ কোটি টাকা, গ্যাস, পানি, ওষুধ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করতে ৪ কোটি টাকা, এসএসএম সামগ্রী কিনতে ৪০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৩৫ লাখ টাকা এবং পানির জন্য ১৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়। কিন্তু এই হাসপাতালে মাত্র ৯২১ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। এক দিনে সর্বোচ্চ ৩২ জনের মতো রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। হিসাব করলে দেখা যায়, রোগীপ্রতি ৯ লাখ ২৮ হাজার টাকার ওপরে ব্যয় হয়েছে।
আইসোলেশন সেন্টারটি বন্ধ করার কারণ উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, করোনার উপসর্গ আছে, এমন রোগীদের বিচ্ছিন্ন করে রাখার জন্য সেটি তৈরি করা হয়। ওইসব রোগীর জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসার জন্য চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য জনবল নিয়োগ করা হয়। হঠাৎ কোনো রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তার আইসিইউর প্রয়োজন হতে পারে- সে ভাবনা থেকে ৫০ শয্যার আইসিইউ ইউনিটও চালু করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেল, সেখানে রোগী যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, এর মধ্যেই আবার সংক্রমণ কমতে শুরু করল। একে একে করোনা চিকিৎসায় যুক্ত হাসপাতালগুলোর কয়েকটি বাদ দিয়ে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসায় ফেরানো হলো। কিন্তু বসুন্ধরার ওই আইসোলেশন সেন্টারটি সাধারণ চিকিৎসায় ফেরানো সম্ভব নয়। কারণ ওই সেন্টারটিতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা হয়নি। চিকিৎসা দেওয়া না গেলে পদায়ন করা জনবলেরও অপচয় হবে। এর পর সার্বিকভাবে হাসপাতালটি নিয়ে আলোচনা করা হয়। বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকেও অবহিত করা হয়। সবার সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে স্থাপন করা শয্যাসহ অন্যান্য সামগ্রী সরিয়ে আনা হয়। ওইসব সামগ্রী প্রয়োজনীয়তার ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়।
মন্ত্রী বলেন, যেসব হাসপাতালে ওইসব সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে, সেগুলো চিকিৎসার কাজে এসেছে। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে, হাসপাতালটি আর নেই। বিষয়টি বিভ্রান্তিকর।
মহাখালীতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আইসোলেশন সেন্টার সম্পর্কে জাহিদ মালেক বলেন, বসুন্ধরার মতো সেখানেও এক হাজার শয্যার একটি আইসোলেশন সেন্টার চালু করা হয়েছিল। পরে সেটি করোনা নমুনা সংগ্রহের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন ওই এক হাজার শয্যার সঙ্গে সমন্বয় করে এটিকে ১ হাজার ৫০০ শয্যার কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তর করা হচ্ছে। অথচ ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওইসব শয্যা বাদ রেখে অন্য একটি ভবনে নতুন করে হাসপাতাল তৈরির কাজ চলছে। এর পেছনে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির ইঙ্গিত করা হয়েছে। বিষয়টি দুঃখজনক।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, অন্য ভবনে হাসপাতালটি তৈরি করা হচ্ছে না। আগের এক হাজার শয্যার আইসোলেশন সেন্টারের সঙ্গে সমন্বয় করে এক হাজার ৫০০ শয্যার কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল তৈরি করা হচ্ছে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন করা হয়েছে। ১০০টি আইসিইউ শয্যা এবং ২০০ এইচডিইউ শয্যা থাকবে। করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় এটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। সুতরাং বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত না জেনে গণমাধ্যমে এ বিষয়ে ভুল তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে সব বিতর্ক ও বিভ্রান্তির অবসান ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করেন মন্ত্রী।
- বিষয় :
- স্বাস্থ্যমন্ত্রী
- আইসোলেশন সেন্টার