- বাংলাদেশ
- ফেরার পথেও দুর্ভোগের শেষ নেই
ফেরার পথেও দুর্ভোগের শেষ নেই

এবার 'অগ্নিপরীক্ষা' ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফেরার। রাজধানীমুখী মানুষের স্রোত ক্রমেই বাড়ছে। রোববার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গাবতলী সংলগ্ন আমিনবাজার এলাকার ছবি-মাহবুব হোসেন নবীন
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে যেভাবে মানুষ ঢাকা ছেড়েছিল, ছুটি শেষ হতে না হতে একইভাবে রাজধানীমুখী তারা। গ্রামে যাওয়া মানুষ ঈদ উদযাপনের প্রশান্তি নিয়ে রাজধানীমুখী এখন। শত যন্ত্রণা ও ভোগান্তি সহ্য করে তারা ফিরে আসছে রাজধানীতে নিজেদের কর্মস্থলে থিতু হতে।
গতকাল রোববার ফেরিঘাট ও মহাসড়কে ছিল রাজধানীমুখী মানুষের উপচেপড়া ভিড়। এ ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের চিত্র ছিল হতাশাজনক। দূরপাল্লার বাস বন্ধ। যাত্রীরা তাই ফিরছে ভেঙে ভেঙে; এক স্থান থেকে আরেক স্থানে গিয়ে কয়েক দফা যানবাহন পরিবর্তন করে।
গতকাল মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ী ফেরিঘাটে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় ছিল উপচেপড়া। গাদাগাদি করে সবাই ফেরিতে উঠেছে। একই চিত্র ছিল পাবনার কাজীরহাট ফেরিঘাটে। এসব ঘাট থেকে যাত্রীবাহী লঞ্চ-স্পিডবোট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যক্তি অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে ট্রলার, ছোট লঞ্চ ও স্পিডবোটে যাত্রী পারাপার করেছে।
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে যাত্রীর চাপ ছিল তুলনামূলক কম। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকলেও ভ্যান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরবাইক, পণ্যবাহী ট্রাক, পিকআপ, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস এমনকি অ্যাম্বুলেন্সেও যাত্রীরা ঢাকামুখী হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সবাইকে গুনতে হয়েছে অতিরিক্ত ভাড়া। সময়ও লেগেছে অনেক বেশি। সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে প্রায় সবাইকে। প্রতিটি সড়কপথের যাতায়াতে ছিল একই চিত্র। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, টঙ্গী, গাবতলী ও বাবুবাজার ব্রিজ এলাকায় দেখা গেছে ঘরমুখী মানুষের জটলা। অবশ্য অসংখ্য মানুষ গতকালও ঢাকা ছেড়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, করোনার কারণে এক বছরে মানুষের সঞ্চয় শেষ। জীবনের চেয়ে জীবিকার দিকেই বেশি নজর দিতে হচ্ছে তাদের। তাই কাজের সন্ধানে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে। এমন অবস্থা গণপরিবহনেও। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উদযাপনের আকাঙ্ক্ষায় নিষেধাজ্ঞার পরও মানুষ ঢাকা ছেড়েছে। তারা এবার ফিরে আসছে। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি আরও বেড়ে গেছে। এর চেয়ে বরং স্বাস্থ্যবিধি মেনে যান চলাচল খুলে দেওয়া উচিত ছিল। আমরা কিন্তু সে দাবিই করেছিলাম।
শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি জানান, মাদারীপুরের শিবচরের বাংলাবাজার-মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে দু'পাশেই যাত্রীদের ঢল নেমেছে। দুর্ভোগ এড়িয়ে ঈদের পর ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরতে গতকাল রোববার ভোর থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ পদ্মা নদী পার হওয়ার জন্য ভিড় জমাতে থাকে বাংলাবাজার ফেরিঘাটে। অন্যদিকে গতকালও ঢাকা থেকে প্রচুর মানুষ গ্রামের বাড়ি যেতে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া থেকে ফেরিতে উঠে বাংলাবাজার ঘাটে নেমেছে।
বাংলাবাজার ঘাট সূত্রে জানা গেছে, করোনা মহামারির কারণে চলমান লকডাউনে এ রুটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ থাকলেও কিছু অসাধু ব্যক্তি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ট্রলার ও স্পিডবোট চালিয়েছে।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানান, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচলকারী সব ফেরি চালু থাকায় দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী কোনো যানবাহনকে আটকে থাকতে হয়নি। বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট অফিসের ব্যবস্থাপক ফিরোজ শেখ জানান, অতিরিক্ত যানবাহন ও যাত্রীর চাপ না থাকায় দৌলতদিয়া ঘাটে নদীপারের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না।
শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সকালের দিকে ঘাটে যাত্রীদের তেমন চাপ না থাকলেও বিকেলের দিকে পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যাত্রীদের চাপ বেড়ে যায়। মানুষ ফেরিতে গাদাগাদি করে পাটুরিয়া ঘাটে আসছে। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় সিএনজি, হ্যালোবাইক, অটোরিকশা, ভ্যান, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন লোকাল বাসে এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে চার-পাঁচ গুণ ভাড়া দিয়ে পৌঁছাচ্ছে। যাত্রীরা পাটুরিয়া ঘাট থেকে ঢাকায় যাওয়ার কোনো বাস না পেয়ে জনপ্রতি ৫-৬শ টাকা ভাড়া দিয়ে সিএনজি ও প্রাইভেটকারে গাদাগাদি করে উঠে পড়ছে। আবার অনেকে এত টাকা ভাড়া দিতে না পারায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘাটেই বসে থাকছে।
কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি জানান, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সকালে ফাঁকা থাকলেও দুপুরের পর থেকে প্রায় ১৮টি সড়কের দূরপাল্লার বাস কালিয়াকৈর গোয়ালবাথান হাইটেক পার্ক এলাকায় পৌঁছলে তাদের থামিয়ে দেওয়া হয়। বাসযাত্রীরা নেমে বিকল্প যানবাহনের সন্ধান করতে থাকে। কোনো পরিবহন না পেয়ে অনেকে হেঁটেই রওনা দেয়। জানা যায়, পথে পথে পরিবহন বদল করে চন্দ্রা এলাকা পর্যন্ত আসতে হয়েছে তাদের।
রংপুর থেকে আসা যাত্রী ফরিদ উদ্দিন, কামরুল ইসলাম, ময়না বেগম জানান, চার-পাঁচবার বাস বদল করে আসতে হয়েছে তাদের। বাকি গন্তব্যে যেতে আরও কতবার যে বাস বদল করতে হবে, তাদের অজানা।
বিনিময় পরিবহন ও আজমেরী গ্লোরি পরিবহনের চালক তাজুল ও সোহেল জানান, সরকারের বিধিনিষেধ মেনে এক জেলার ভেতরেই বাস চালাচ্ছি। এতে কোনোরকমে যাত্রীসেবা দিতে পারছি। তবে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে।
কোনাবাড়ী (সালনা) হাইওয়ে থানার ওসি মীর গোলাম ফারুক জানান, যাত্রীদের যাতে যানজটে পড়ে ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, সে জন্য সড়কে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
মন্তব্য করুন