- বাংলাদেশ
- টিকা উৎপাদন ঘিরেই মূল পরিকল্পনা
টিকা উৎপাদন ঘিরেই মূল পরিকল্পনা

আপৎকালীন সংকট মোকাবিলায় রাশিয়া ও চীন থেকে এক কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা কিনবে সরকার। তবে দেশেই টিকা উৎপাদনের দিকে সরকারের মনোযোগ। এটিকে ঘিরেই মূল পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি এবং চীনের সিনোফার্মের টিকা দেশি ওষুধ কোম্পানির মাধ্যমে উৎপাদন করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি যৌথ ব্যবস্থাপনায় রপ্তানিরও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ নিয়ে নিয়ে দেশ দুটির সঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা চলছে। দ্রুতই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রগুলো সমকালকে নিশ্চিত করেছে।
গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশে টিকা উৎপাদনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি কয়েক মাসের মধ্যে দেশেই করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও টিকা নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন। টিকা নিয়ে 'খুব ভালো খবর' শিগগিরই আসবে বলে জানান তিনি। স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র সমকালকে জানায়, রাশিয়া ও চীন থেকে এক কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রক্রিয়া চলছে। দুটি দেশই এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। সূত্রটি আরও জানায়, টিকা কিনে আনার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টিকা পায়নি বাংলাদেশ। তাই টিকাদান কর্মসূচি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টিকা গ্রহীতার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই অভিজ্ঞাতার কারণে সরকার দেশে টিকা উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছে। দেশের তিনটি ওষুধ কোম্পানির টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তাদের কাজে লাগিয়ে বছরে ১০০ কোটি ডোজ টিকা তৈরি করা সম্ভব হবে। টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার পাশাপাশি কম মূল্যে পাওয়া যাবে। এ কারণে সরকার টিকার উৎপাদন ঘিরেই মূল পরিকল্পনা করছে।
চীন ও রাশিয়া টিকা উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশকে এরই মধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার সেই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করছে। রাশিয়া গোপন রাখার শর্তে টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তিটি গোপন রাখতে হবে। বাংলাদেশ সেই শর্ত মেনে নিয়েছে। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার প্রতিনিধি দল সম্ভাব্য টিকা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে। চীনও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। এমনকি ভারতও সেদেশের ভারত-বায়োটেক উদ্ভাবিত টিকা কোভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য (ট্রায়াল) বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। সফল হলে বাংলাদেশেও ওই টিকা উৎপাদন করা যাবে। তবে ভারতের টিকার বিষয়টি নিয়ে এখন সরকার আগ্রহী নয়।
ভারত থেকে টিকা না পেয়ে বাংলাদেশ বিকল্প হিসেবে রাশিয়া ও চীনের টিকা পেতে আগ্রহী হয়। এর অংশ হিসেবে এপ্রিলের শেষে রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি এবং মে মাসের শুরুতে চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত ১২ মে চীনের পক্ষ থেকে সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা দেশে পৌঁছায়।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হাতে কয়েক কোটি ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা রয়েছে, যা তারা ব্যবহার করছে না। সেখান থেকে একটি অংশ এরই মধ্যে বাংলাদেশ চেয়েছে। পাশাপাশি টিকার আন্তর্জাতিক জোট কোভ্যাক্স থেকেও টিকা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।
রাশিয়া ও চীনের টিকা যাতে বাংলাদেশে উৎপাদন করা যায়, সে জন্য মন্ত্রিসভা কমিটি এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়ে রেখেছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, চলমান টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা কেনা হবে। কারণ, সরকারের লক্ষ্য মানুষকে দ্রুত টিকা দেওয়া। টিকা উৎপাদন করা সময়ের ব্যাপার। ত্বরিত গতিতে টিকা উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব নয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনের সক্ষমতা কোন পর্যায়ে রয়েছে, সেটি পর্যালোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। যদি উৎপাদন ক্ষমতা থেকে থাকে, তাহলে কম সময় লাগবে। আর সেটি না থাকলে আরও বেশি সময় লাগবে।
'দেশে টিকার উৎপাদন করা গেলে অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার পাশাপাশি মূল্যও কম পড়বে। সুতরাং দেশে টিকা উৎপাদন শুরু করাই আমাদের মূল লক্ষ্য,' বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
টিকা কেনায় যে কারণে আগ্রহ কম :টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে রাশিয়া ও চীনকে পাশে চাইলেও দেশ দুটি থেকে বেশি টিকা কিনতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ। প্রাথমিক সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকা কেনার চিন্তা করছে সরকার। সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার মোট সাড়ে ১৩ কোটির মতো মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ বা ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার তিন কোটি ডোজ কেনার চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ পাওয়া গেছে। আর ভারত সরকার ৩৩ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশে পাঠায়। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত এক কোটি তিন লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা কোভিশিল্ড হাতে পেয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র বলছে, জুলাই মাস থেকে টিকা রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে। তখন বাংলাদেশ সেরাম ও কোভ্যাক্স- দুটি উৎস থেকেই টিকা পাবে। চলতি বছরের মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে ছয় কোটি ৮০ লাখ ও সেরাম থেকে আসা তিন কোটি এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহারের ৩৩ লাখ মিলে মোট টিকা হবে ১০ কোটি ১৩ লাখ ডোজ। এই টিকা দিয়ে পাঁচ কোটি সাড়ে ছয় লাখ মানুষের টিকা দেওয়া যাবে। তা ছাড়া কোভ্যাক্স প্রস্তাব দিয়েছে, যত টিকা লাগবে তারা সরবরাহ করবে। ২০ শতাংশের বাইরে কোভ্যাক্সের টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়বে সাত ডলার করে। আর সেরাম থেকে টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়েছে পাঁচ ডলার করে। অন্যদিকে, চীনের টিকা সিনোফার্মের প্রতি ডোজের নূ্যনতম মূল্য ১৯ ডলার। বিভিন্ন দেশে এই টিকা ১৯ থেকে ৩৮ ডলার পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে। আর রাশিয়ার টিকার প্রতি ডোজ বিক্রি করা হয়েছে ১২ থেকে ২৪ ডলার করে। ওই দাম নিয়ে বর্তমানে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে দরকষাকষি চলছে। বিষয়টি অনেক দূর এগিয়েছে। একই সঙ্গে উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এমন কোনো চুক্তি করা হবে না, যাতে করে টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হয়। এ জন্য সরবরাহকারী ও ক্রেতার মধ্যে চুক্তি হবে ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী। কোনো বিরোধ দেখা দিলে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার রুলসের আলোকে তা নিষ্পত্তি করা হবে। এমনকি সালিশের স্থান হবে সিঙ্গাপুরে।
গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশে টিকা উৎপাদনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি কয়েক মাসের মধ্যে দেশেই করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও টিকা নিয়ে আশার কথা শুনিয়েছেন। টিকা নিয়ে 'খুব ভালো খবর' শিগগিরই আসবে বলে জানান তিনি। স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র সমকালকে জানায়, রাশিয়া ও চীন থেকে এক কোটি ডোজ টিকা কেনার প্রক্রিয়া চলছে। দুটি দেশই এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। টিকা কেনার বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি হয়েছে। বিষয়টি চূড়ান্ত হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। সূত্রটি আরও জানায়, টিকা কিনে আনার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষ করে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী টিকা পায়নি বাংলাদেশ। তাই টিকাদান কর্মসূচি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টিকা গ্রহীতার দ্বিতীয় ডোজ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এই অভিজ্ঞাতার কারণে সরকার দেশে টিকা উৎপাদনে আগ্রহী হয়েছে। দেশের তিনটি ওষুধ কোম্পানির টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তাদের কাজে লাগিয়ে বছরে ১০০ কোটি ডোজ টিকা তৈরি করা সম্ভব হবে। টিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার পাশাপাশি কম মূল্যে পাওয়া যাবে। এ কারণে সরকার টিকার উৎপাদন ঘিরেই মূল পরিকল্পনা করছে।
চীন ও রাশিয়া টিকা উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশকে এরই মধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে। সরকার সেই প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করছে। রাশিয়া গোপন রাখার শর্তে টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাব দিয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশকে টিকা উৎপাদনের প্রযুক্তিটি গোপন রাখতে হবে। বাংলাদেশ সেই শর্ত মেনে নিয়েছে। এখন পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে রাশিয়ার প্রতিনিধি দল সম্ভাব্য টিকা উৎপাদন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করবে। চীনও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে টিকা উৎপাদনের প্রস্তাব দিয়েছে। এমনকি ভারতও সেদেশের ভারত-বায়োটেক উদ্ভাবিত টিকা কোভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য (ট্রায়াল) বাংলাদেশকে প্রস্তাব দিয়েছে। সফল হলে বাংলাদেশেও ওই টিকা উৎপাদন করা যাবে। তবে ভারতের টিকার বিষয়টি নিয়ে এখন সরকার আগ্রহী নয়।
ভারত থেকে টিকা না পেয়ে বাংলাদেশ বিকল্প হিসেবে রাশিয়া ও চীনের টিকা পেতে আগ্রহী হয়। এর অংশ হিসেবে এপ্রিলের শেষে রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি এবং মে মাসের শুরুতে চীনের সিনোফার্মের টিকা জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন দেয় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত ১২ মে চীনের পক্ষ থেকে সিনোফার্মের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা দেশে পৌঁছায়।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের হাতে কয়েক কোটি ডোজ অক্সফোর্ডের টিকা রয়েছে, যা তারা ব্যবহার করছে না। সেখান থেকে একটি অংশ এরই মধ্যে বাংলাদেশ চেয়েছে। পাশাপাশি টিকার আন্তর্জাতিক জোট কোভ্যাক্স থেকেও টিকা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।
রাশিয়া ও চীনের টিকা যাতে বাংলাদেশে উৎপাদন করা যায়, সে জন্য মন্ত্রিসভা কমিটি এরই মধ্যে অনুমোদন দিয়ে রেখেছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সমকালকে বলেন, চলমান টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চীন ও রাশিয়া থেকে টিকা কেনা হবে। কারণ, সরকারের লক্ষ্য মানুষকে দ্রুত টিকা দেওয়া। টিকা উৎপাদন করা সময়ের ব্যাপার। ত্বরিত গতিতে টিকা উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব নয়। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনের সক্ষমতা কোন পর্যায়ে রয়েছে, সেটি পর্যালোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। যদি উৎপাদন ক্ষমতা থেকে থাকে, তাহলে কম সময় লাগবে। আর সেটি না থাকলে আরও বেশি সময় লাগবে।
'দেশে টিকার উৎপাদন করা গেলে অনিশ্চয়তা দূর হওয়ার পাশাপাশি মূল্যও কম পড়বে। সুতরাং দেশে টিকা উৎপাদন শুরু করাই আমাদের মূল লক্ষ্য,' বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
টিকা কেনায় যে কারণে আগ্রহ কম :টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে রাশিয়া ও চীনকে পাশে চাইলেও দেশ দুটি থেকে বেশি টিকা কিনতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ। প্রাথমিক সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক টিকা কেনার চিন্তা করছে সরকার। সংশ্নিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকার মোট সাড়ে ১৩ কোটির মতো মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ বা ছয় কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকা বিনামূল্যে পাওয়া যাবে। এ ছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকার তিন কোটি ডোজ কেনার চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ পাওয়া গেছে। আর ভারত সরকার ৩৩ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে বাংলাদেশে পাঠায়। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত এক কোটি তিন লাখ ডোজ করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা কোভিশিল্ড হাতে পেয়েছে বাংলাদেশ।
স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র বলছে, জুলাই মাস থেকে টিকা রপ্তানির ওপর ভারতের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হতে পারে। তখন বাংলাদেশ সেরাম ও কোভ্যাক্স- দুটি উৎস থেকেই টিকা পাবে। চলতি বছরের মধ্যে কোভ্যাক্স থেকে ছয় কোটি ৮০ লাখ ও সেরাম থেকে আসা তিন কোটি এবং ভারত সরকারের কাছ থেকে উপহারের ৩৩ লাখ মিলে মোট টিকা হবে ১০ কোটি ১৩ লাখ ডোজ। এই টিকা দিয়ে পাঁচ কোটি সাড়ে ছয় লাখ মানুষের টিকা দেওয়া যাবে। তা ছাড়া কোভ্যাক্স প্রস্তাব দিয়েছে, যত টিকা লাগবে তারা সরবরাহ করবে। ২০ শতাংশের বাইরে কোভ্যাক্সের টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়বে সাত ডলার করে। আর সেরাম থেকে টিকার প্রতি ডোজের দাম পড়েছে পাঁচ ডলার করে। অন্যদিকে, চীনের টিকা সিনোফার্মের প্রতি ডোজের নূ্যনতম মূল্য ১৯ ডলার। বিভিন্ন দেশে এই টিকা ১৯ থেকে ৩৮ ডলার পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে। আর রাশিয়ার টিকার প্রতি ডোজ বিক্রি করা হয়েছে ১২ থেকে ২৪ ডলার করে। ওই দাম নিয়ে বর্তমানে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে দরকষাকষি চলছে। বিষয়টি অনেক দূর এগিয়েছে। একই সঙ্গে উৎপাদন প্রক্রিয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে চুক্তি অনুযায়ী টিকা না পাওয়ার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করা হবে। এমন কোনো চুক্তি করা হবে না, যাতে করে টিকাদান কর্মসূচি ব্যাহত হয়। এ জন্য সরবরাহকারী ও ক্রেতার মধ্যে চুক্তি হবে ব্রিটেনের আইন অনুযায়ী। কোনো বিরোধ দেখা দিলে সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার রুলসের আলোকে তা নিষ্পত্তি করা হবে। এমনকি সালিশের স্থান হবে সিঙ্গাপুরে।
মন্তব্য করুন