আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এর বাইরে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্পে বরাদ্দ করা হয়েছে ১১ হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এ বরাদ্দ বিবেচনায় নিলে এডিপির মোট আকার দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপির তুলনায় ১৪ শতাংশ বেশি।

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এনইসির বৈঠকে নতুন এডিপি অনুমোদন করা হয়। পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে অনলাইনের মাধ্যমে বৈঠকে সংযুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।

এনইসির বৈঠক শেষে এ বিষয়ে অনলাইনে সাংবাদিকদের তথ্য দেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি জানান, নতুন এডিপির ব্যয় নির্বাহে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জোগান দেওয়া হবে এক লাখ ৩৭ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। ৮৮ হাজার ২৪ কোটি টাকা আসবে বৈদেশিক উৎস থেকে। এ ছাড়া নিজস্ব প্রকল্পের ক্ষেত্রে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশন জোগান দেবে ১১ হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।

তিনি জানান, অন্যান্য বছরের মতো এবারও দেশজ সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যালোচনা করে এডিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন ও মাথাপিছু আয় বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দারিদ্র্য হ্রাস ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা কৌশল এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

এনইসি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া নির্দেশনার কথা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, করোনার প্রভাবে যেসব প্রকল্পের কাজের বাস্তবায়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনার কারণে যেন কারও খাবারের কষ্ট না হয় সে ব্যাপারে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। যে করেই হোক খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্য খাদ্য উৎপাদন বিষয়ে আরও বেশি মনোযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। প্রত্যেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ যেন তাদের গবেষণা খাতের বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যয় করে, সে ব্যাপারেও পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সর্বোচ্চ বরাদ্দের ১০ খাত :সর্বোচ্চ ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এ বরাদ্দ আগামী এডিপির মোট বরাদ্দের ২৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট এডিপির ২০ দশমিক ৩৬ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধা খাত। এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২৩ হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ। এ ছাড়া শিক্ষা খাত পেয়েছে ২৩ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা।

স্বাস্থ্য খাতে দেওয়া হয়েছে ১৭ হাজার ৩০৭ কোটি টাকা। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৪ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পর্কিত খাত পেয়েছে ৮ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা। কৃষিতে দেওয়া হয়েছে ৭ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা। শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে ৪ হাজার ৬৩৮ কোটি টাকা। বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০টি প্রকল্প: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। আর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে থাকছে ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) পেয়েছে ৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (লাইন-৬) বা মেট্রোরেলে বরাদ্দ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে বরাদ্দ ৩ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা।

পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প পেয়েছে ৩ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এপপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্পে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৫১ কোটি টাকা। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প পেয়েছে ২ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা।