- বাংলাদেশ
- কান্না থামছেই না রোজিনার মেয়ের
কান্না থামছেই না রোজিনার মেয়ের

প্রিজনভ্যানে সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম
প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদনের শুনানি আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। বাকি শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন আদালত। পাশাপাশি পুলিশের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে রোজিনাকে নিয়ে প্রিজনভ্যান কাশিমপুর কারাফটকে পৌঁছায়। তখন স্বজনরা তার জামা-কাপড় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেয়। এ সময় সেখানে উপস্থিত রোজিনার স্বামী মনিরুল ইসলাম মিঠু বলেন, ‘আমাদের একমাত্র মেয়ে আলভীনা ইসলাম খুব কাঁদছে। মাকে ছাড়া সে কখনও ঘুমায়নি।’
স্বজনরা বলেন, রোজিনার একমাত্র মেয়ের কান্না থামানো যাচ্ছে না। সে কোনোদিন তার মাকে ছাড়া থাকেনি। কোনোভাবেই তাকে বোঝানো যাচ্ছে না।
মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মোহাম্মদ জসীম এ আদেশ দেন। এছাড়া আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারাবিধি অনুযায়ী রোজিনাকে চিকিৎসাসেবা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৫ জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে।
এদিকে রোজিনা ইসলামকে সচিবালয়ে আটকে রেখে হয়রানি, নির্যাতন এবং পরে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় সারাদেশে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। রোজিনার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ।
আদালতের আদেশের পর রোজিনা ইসলামকে প্রিজনভ্যানে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে নেওয়া হয়। সরকারি নথি চুরির অভিযোগ এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের মামলায় রোজিনার পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছিল পুলিশ।
সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান রোজিনা। এরপর সরকারি নথি ‘চুরি’ করার অভিযোগে সেখানে তাকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ তাকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। এর প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়।
মামলাটি করেন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব ডা. শিব্বির আহমেদ ওসমানী। এতে দণ্ডবিধির দুটি ধারায় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথি চুরি এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের দুটি ধারায় রাষ্ট্রীয় গোপন নথি দখলে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়।
রোজিনাকে হেনস্তার প্রতিবাদে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দ্রুত তার মুক্তির দাবি জানায় তারা। এছাড়া রোজিনাকে নিপীড়নের প্রতিবাদে বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা স্বেচ্ছায় কারাবরণের আবেদন নিয়ে শাহবাগ থানায় যান।
এর আগে সোমবার রাতভর অর্ধশতাধিক গণমাধ্যমকর্মী ও রোজিনার স্বজনরা থানার সামনে অবস্থান করেন। ভোর ৪টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের থানা প্রাঙ্গণের বাইরে চলে যেতে বলেন। এ সময় সাংবাদিকরা বের হতে থাকেন। এডিসি তখন সাংবাদিক রোজিনার ছোট বোন সাবিনা ইয়াসমিনকে বের হয়ে যেতে বলেন। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকরা প্রতিবাদ জানালে তাদের সঙ্গেও পুলিশের সদস্যরা খারাপ আচরণ করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর আগে স্বজনরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রোজিনাকে নেওয়ার অনুরোধ করলে তাতে আপত্তি জানায় পুলিশ।
মন্তব্য করুন