ঢাকা শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪

সাক্ষাৎকার: সাকিব আল হাসান

আমি রাজনীতির অলরাউন্ডার হবো

আমি রাজনীতির অলরাউন্ডার হবো

সাকিব

সেকান্দার আলী

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০১:৪৮ | আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১০:৩৬

নাঈমুর রহমান দুর্জয়, মাশরাফি বিন মুর্তজার পথ অনুসরণ করে রাজনীতিতে নেমেছেন জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ (সদর উপজেলা আংশিক-শ্রীপুর) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী তিনি। গতকাল শুক্রবার বাঁহাতি এ অলরাউন্ডারের সঙ্গে রাজনীতি, নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত কথা হয় মাগুরায়। সাকিবের সঙ্গে আলাপনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ তুলে ধরছেন সমকালের বিশেষ প্রতিনিধি সেকান্দার আলী

সমকাল: ক্রিকেটের মাঠ থেকে রাজনীতিতে; কেমন লাগছে?

সাকিব: ভালোই তো লাগছে। ক্রিকেট মাঠে ছিলাম, থাকব। সেখান থেকে রাজনীতিতে এলাম নিজের এলাকার মানুষের জন্য কাজ করতে। আমরা ক্রিকেট খেলে দেশের জন্য কাজ করি। মানুষ আমাদের খেলা উপভোগ করে। খেলা থেকে বিনোদন নেয়। কিন্তু রাজনীতি সরাসরি মানুষের পাশে থাকার সুযোগ করে দেয়। এ জন্যই নির্বাচন করা।

সমকাল: দেশসেরা ক্রিকেটার হিসেবে দেশ-বিদেশে আপনার যাপিত জীবন ছিল উন্নত। ওঠাবসা করেছেন সমাজের উঁচু স্তরের সঙ্গে। এখন তো প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে কাজ–

সাকিব: ক্রিকেটার হওয়ার আগের একটা জীবন আছে। সেই মধ্যবিত্ত জীবনের সঙ্গে আমি ভালোভাবে পরিচিত। আমার বাবা-মা তো মাগুরাতেই থাকতেন। ২৫ বছর মাগুরাকেন্দ্রিক সবকিছু ছিল। এ ছাড়া তারকা হতেও তো আমার সময় লেগেছে। বড় ক্রিকেটার হওয়ার পরও আমি পেছনের সবকিছু ভুলে যাইনি। কেউ কোনোদিন ভুলতে পারেও না। দেখুন, মাঠে কোন শ্রেণির মানুষ বেশি খেলা দেখতে আসে? সাধারণ এবং মধ্যবিত্ত। যারা সেলফি তোলে, রাস্তায় দেখা হলে হাসি দিয়ে কুশল জানতে চায়, তাদের প্রায় সবাই সাধারণ মানুষ। কিছু দিন পরই দেখতে পাবেন, আমি এলাকার মানুষকে নিয়ে কীভাবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করি।

সমকাল: সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে মানুষের অনেক চাওয়া-পাওয়া থাকবে। সে প্রত্যাশা পূরণ করার চ্যালেঞ্জও তো রয়েছে।

সাকিব: দেখুন, মানুষ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে কিছু উদ্দেশ্য নিয়ে। তাদের কিছু চাওয়া-পাওয়া থাকে। যেমন রাস্তাঘাট নির্মাণ, সংস্কার; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালে চিকিৎসা সুবিধা; এ রকম অনেক কিছু। এই জিনিসগুলো একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়। একজন গ্রামের মানুষ ইচ্ছা করলেই কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে না। কিন্তু জনপ্রতিনিধি সেটা পারে। এ জন্যই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করে তারা। নির্বাচিত হলে মানুষের যৌক্তিক এবং বাস্তবসম্মত দাবিগুলো অবশ্যই মেটাতে চেষ্টা করব।

সমকাল: রাজনীতিতে বিভেদ, বিরোধ অনেক। ভিন্ন দলের বিরোধের বাইরে নিজ দলের নেতাকর্মীর মধ্যেও বিরোধ থাকে।

সাকিব: মতপার্থক্য সবখানেই থাকে। সেগুলো মেনে এবং নিজেকে মানিয়ে নিয়ে কাজ করতে হয়। আমি রাজনীতিতে এসেছি পাওয়ার জন্য নয়; ভালো কাজ করার জন্য। মাগুরার মানুষের ভালোবাসা থাকলে অনেক কিছু করা সম্ভব। মাগুরা জেলায় তেমন শিল্প-কারখানা নেই। কৃষিই জেলার মানুষের প্রধান পেশা। এখানে কর্মসংস্থান গড়ে তোলা সম্ভব। আমি ভালো কিছু করলে মানুষ আমাকে এবং আমার পরিবারকে মনে রাখবে। কর্ম দিয়ে মানুষের মনে শতাব্দীর পর শতাব্দী বেঁচে থাকা যায়। নির্বাচিত হলে আমি তেমন ভালো কাজ করতে চাই, যেখান থেকে মানুষ উপকৃত হবে। 

সমকাল: আপনি হলেন তারকা রাজনীতিবিদ। ঝানু রাজনীতিবিদের সঙ্গে তাল মেলাতে পারবেন?

সাকিব: আমি তারকা রাজনীতিবিদ, এটা ঠিক। তারকা হওয়ায় আমার জন্য রাজনীতি করা কিছুটা সহজ। কারণ মানুষ আমাকে চেনে। আমি অর্ধেক পথে আছি। বাকি অর্ধেক স্থানীয় নেতাকর্মীর কাছ থেকে শিখব। আমি সবকিছু দ্রুত শিখতে পারি। ক্রিকেট মাঠের মতো রাজনীতির মাঠেও অলরাউন্ডার হয়ে উঠব, দেখবেন (হাসি)।

সমকাল: দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর মাগুরায় বিরাট সংবর্ধনা পেলেন। মাঠে নামার আগে কারণ দর্শানোর নোটিশও পেলেন।

সাকিব: মানুষ আমাকে ভালোবেসে সংবর্ধনা দিয়েছে। সবার ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখানো আমাদের কাজ। আসলে আমার জানা ছিল না, মনোনয়নপত্র গ্রহণের পর এগুলো করা যাবে না। নির্বাচন অফিস থেকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পেয়েছি এবং জবাবও দিয়েছি। কারণ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কিছু করিনি। নির্বাচনের নিয়মের প্রতি আমার পূর্ণ সম্মান আছে। সামনে সবকিছু নিয়মমতো হবে।

সমকাল: আপনিসহ মাগুরা-১ আসনে এখন পর্যন্ত সাতজন প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে আছেন। একটু কি ভয় লাগছে?

সাকিব: ক্রিকেট মাঠে কোনোদিন ভয় পাইনি। নির্বাচনের মাঠেও নির্ভয় নিয়ে লড়ব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো বলেই দিয়েছেন– নির্বাচন উৎসবমুখর এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হতে হবে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নেত্রীর নির্দেশনা মেনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করে সফল হতে চাই।

সমকাল: আপনার প্রচারণায় নিশ্চয় ক্রিকেটাররাও আসবেন?

সাকিব: অবশ্যই আসবেন। ভাগে ভাগে অনেকেই আসবেন। মাশরাফি ভাই আসবেন। আমি তাঁর ওখানে যাব। ভিন্ন ভিন্ন অঙ্গনের সফল মানুষদের দেখতে পাবেন।

সমকাল: সংসদ সদস্য হলে আগের মতো ক্রিকেটে ফোকাস করতে পারবেন?

সাকিব: অবশ্যই পারব। মাশরাফি ভাই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে অধিনায়ক ছিলেন। আমিও ক্রিকেট খেলব। তিন সংস্করণেই খেলব।

সমকাল: আপনার পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। ক্রিকেট খেলে, রাজনীতি করে পরিবারকে সময় দিতে পারবেন?

সাকিব: আমি তো মনে করি, পারব। সন্তানরা কখনও এখানে আসবে, কখনও আমি ওখানে যাব। তবে খেলার বাইরের সময়টা মাগুরাতে দেব।

সমকাল: জেলার নেতাকর্মীর কাছ থেকে কেমন সমর্থন পাচ্ছেন?

সাকিব: সেটা তো দেখতেই পেলেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। আমার বিশ্বাস, মাগুরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী দলীয় শৃঙ্খলার প্রতি সম্মান দেখাতে জানে। নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরু হলে দেখতে পাবেন, সবাই পাশে আছে। আমি সবার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই।  

 

whatsapp follow image

আরও পড়ুন

×