বিদেশ থেকে একজন আত্মীয় দেশে ফিরবেন। নামবেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে। তাকে আনতে কিশোরগঞ্জ থেকে যেতে হবে। বিমানবন্দরে স্বজনকে নেওয়ার জন্য কিশোরগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড থেকে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে হাবিব মিয়া নামে এক ব্যক্তি। কিশোরগঞ্জ থেকে হাবিবকে নিয়ে চালক আবুল বাশার বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হন। পথিমধ্যে করিমগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার উদ্দেশে আরও চার যাত্রী উঠে তাতে। রাতে গাড়িটি উত্তরার আব্দুল্লাহপুর আসামাত্র চালকের হাত-পা বেঁধে ফেলে যাত্রীবেশি ছিনতাইকারীরা। এরপর তাদের একজন চালকের আসনে বসে গাড়ি নিয়ে রওনা হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের দিকে। পথে চালক আবুল বাশারকে ফেলে দিয়ে তারা গাড়ি নিয়ে চলে যায় কুমিল্লায়। এ ঘটনা ঘটে ২২ এপ্রিল।

এরপর গত শুক্রবার রাতে মাইক্রোবাস ছিনতাইয়ে জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। শনিবার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মীর মিজান মিয়া, হাবিব মিয়া, কামাল মিয়া, ফারুক, মোবারক ও আলামিন। কুমিল্লা ও নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। তাদের কাছ থেকে মাইক্রোবাসটি উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, মাইক্রোবাসটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২৭ এপ্রিল উত্তরা পূর্ব থানায় মামলা করেন গাড়িটির মালিক আজহারুল ইসলাম। ডিবির মিরপুর বিভাগ তদন্ত শুরু করে। তিনি বলেন, হাবিব মিয়া ২১ এপ্রিল কিশোরগঞ্জে হাইয়েস মাইক্রোবাসটি ভাড়া করে। আব্দুল্লাহপুরে লুঙ্গি, গামছা ও দড়ি দিয়ে চালক আবুল বাশারের হাত-পা বেঁধে ফেলে মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণে নেয় চক্রটি। পূর্বপরিকল্পিতভাবে ভাড়ার নামে মাইক্রোবাসটি ঢাকায় এনে সেটি ছিনতাই করা হয়। চক্রের সদস্য ফারুক মাইক্রোবাসটি চালিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার গাউছিয়া দরিকান্দী রোডে নিয়ে যায়। সেখানে চালক আবুল বাশারকে চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়। পরে হাবিব মিয়া গাড়িটি চালিয়ে নিয়ে যায় কুমিল্লার চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। মিজান নামে এক ব্যক্তির কাছে এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয় সেটি। মিজান গাড়িটির নকল নম্বর প্লেট ও কাগজপত্র সংগ্রহ করে। পরে দেবিদ্বার থানার বিভিন্ন এলাকায় ভাড়ায় চালানো হচ্ছিল গাড়িটি। হাবিব মিয়া পেশাদার ছিনতাইকারী। গাড়ি ছিনতাইয়ের একটি মামলায় সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। একাধিকবার সে গাড়ি ছিনতাইয়ের ঘটনায় জেলে গেছে। জামিনে বেরিয়ে আবার একই কাজে জড়িত হয়। ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, পুলিশকে এড়ানোর জন্য এ চক্রের সদস্যরা অন্যের নামে রেজিস্ট্রেশন করা মোবাইল সিম কার্ড ব্যবহার করে। এ সময় পুরোনো গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে গাড়ির কাগজপত্র বিআরটিএর মাধ্যমে যথাযথভাবে যাচাই করে গাড়ি ক্রয়ের জন্য অনুরোধ জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।ডিবির মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মানস কুমার পোদ্দার সমকালকে জানান, গ্রেপ্তার ছয়জনকে গতকাল আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। ছিনতাইয়ের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাদের।