চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। গত বছরের মতো এবারও ঈদের আগে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে সোমবার থেকে সীমিত পরিসরে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে এবং বৃহস্পতিবার শুরু হবে কঠোর লকডাউন। ফলে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশুর হাটের আয়োজন জনমনে উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবার শুধু রাজধানী ঢাকা বা অন্যান্য বিভাগীয় শহরে নয়, জেলা এমনকি উপজেলাতেও পশু বিক্রি হবে অনলাইনে। পর্যাপ্ত দেশীয় পশু থাকায় কোনো সংকট হবে না।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় বলছে, কোরবানির পশু কিনতে অনলাইনে আস্থা রাখছেন তারা। সে অনুযায়ী ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রস্তুত করার পাশাপাশি হাটবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানতে সব রকম সতর্কতা নেওয়া হবে। পশু পরিবহনে থাকবে বিশেষ ট্রন। পর্যাপ্ত দেশীয় পশু মজুত থাকায় বিদেশ থেকে আনা পুরোপুরি বন্ধ রাখতে সীমান্ত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। এ বছর এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৯ হাজার বেশি।

গত রোববার রাজধানীর ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোরবানির পশুর অবাধ চলাচল ও পরিবহন নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত সভায় জানানো হয়, আসন্ন ঈদুল আজহায় এক কোটি ১০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। গত বছর গবাদিপশু প্রস্তুত ছিল এক কোটি ১৮ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০টি। কোরবানি হয়েছিল ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ২৬৭টি।

সভায় বলা হয়, এ বছর ৪৫ লাখ ৪৭ হাজার গরু-মহিষ, ৭৩ লাখ ৬৫ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং অন্যান্য চার হাজার ৭৬৫টি পশুসহ মোট এক কোটি ১৯ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৫টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে এবার কোরবানির পশুর ২৩টি অস্থায়ী হাট বসানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, গত চার বছর থেকে আমাদের যে পরিমাণ কোরবানির পশুর চাহিদা সে চাহিদা দেশের পশুই মেটাচ্ছে। এবারও আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। তাই সংকট হবে না। কোনোভাবেই বাইরে থেকে গরু আনতে দেওয়া যাবে না। গত বছরের মতো এবারও অনলাইনে পশু বিক্রির ওপর জোর দেওয়া হবে। মানুষ যাতে ঘরে বসে পশু ক্রয় করতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শুধু রাজধানী ঢাকা বা অন্যান্য বিভাগীয় শহরে নয়, জেলা এমনকি উপজেলাতেও পশু বিক্রি হবে অনলাইনে।

তিনি জানান, কোরবানির পশুর নিরাপদ পরিবহন ও করোনা সংকট সামনে রেখে দেশব্যাপী চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কোরবানির সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে যাতে কোরবানি হয় সে জন্য স্থানীয় সরকার ইউনিট, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মাঠ প্রশাসন সমন্বিতভাবে কাজ করবে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, দেশে এখন বেশকিছু প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যেখানে অনলাইনে বা ক্রেতারা পরিবারের লোকজন সঙ্গে নিয়েও পশু কিনতে পারেন। এখন থেকে কোরবানির পশু কিনলে কেউ ঠকবেন না।

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন বলেন, গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর খামারিরা গরু পালন বেশি করেছে। আমরা আশাবাদী আমাদের পালন করা পশু দিয়ে এবার ঠিকভাবেই কোরবানির চাহিদা মেটাতে পারবো। গবাদি পশু বিক্রি করার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন 'ডিজিটাল হাট' কয়েক দিনের মধ্যেই চালু করবে। আমরা ইতোমধ্যেই আমাদের খামার থেকে অনলাইনে গরু বিক্রি করার ব্যবস্থা রাখছি।