বৈশ্বিক মহামারি করোনার ভয়াবহতা দক্ষতার সঙ্গে মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রা সচল রাখায় দেশে-বিদেশে শেখ হাসিনা প্রশংসিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা। সোমবার জাতীয় সংসদে ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এ কথা বলেন। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়। 

সরকারি দলের অন্য সদস্যরা বলেন, করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতির কথা বিবেচনায় রেখে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্য নিয়েই বাস্তবসম্মত, সময়োপযোগী এবং বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট দেয়া হয়েছে। এ বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমান সরকার সূচিত গত এক যুগের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা সম্ভব হবে। 

তারা বলেন, বৈশ্বিক মহামারি সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে সফলভাবে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। তার বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী পদক্ষেপে দেশের আর্থ-সামাজিক কর্মকাণ্ড সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। করোনাকালে বিশ্বের প্রায় সব দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক। আর বর্তমান সরকারের পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫.২ শতাংশ অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.২ নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত আর্থ-সামাজিক অবস্থা পুনরুদ্ধারে ২৩টি খাতে প্রণোদনা দেওয়ার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।

বাজেট আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম শিমুল, এম এ মতিন, আনোয়ার হোসেন হেলাল, কাজিম উদ্দিন আহমেদ, জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, রস্তম আলী ফরাজী, বিএনপির জাহিদুর রহমান ও গণফোরামের মোকাব্বির খান। গত ৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করেন। গত ৭ জুন সংসদে চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট পাস করা হয়। 

আলোচনায় অংশ নিয়ে সরকারি দলের সংসদ সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ছিল ৯৪ ডলার। এখন তা দুই হাজার ২২৭ ডলার। তখন রিজার্ভ ছিল নামমাত্র, এখন ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রিজার্ভ। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ। করোনাকালে অনেকে হাল ছেড়ে দিলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাল ছাড়েননি। যে কারণে অর্থনীতির চাকা সচল। সারা পৃথিবী বাংলাদেশের প্রশংসা করছে। 

রাজনীতিবিদরাই দুর্দিনে বাতি জ্বালায় 

অনেকে কথায় কথায় রাজনৈতিক সরকারকে গালাগালি করেন-এমন মন্তব্য করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘তাদের হাতেও আমরা দেখেছি, আমলাদের হাতেও দেখেছি, গামলাদের হাতেও আমরা দেখছি, সামলাদের হাতেও আমরা দেখেছি। কেউই দেশের চেহারা ভালো করতে পারেন নাই। এই রাজনীতিবিদরাই দুর্দিনে বাতি জ্বালায়।’

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১২ বছরে দেশের সব খাতে বিস্ময়কর অগ্রগতি হয়েছে। স্বাধীনতার আগে দেশে দরিদ্রের হার ছিল ৮০ শতাংশ। বর্তমানে তা ২৯ দশমিক ৫ শতাংশ। দেশের প্রথম বাজেট ছিল মাত্র ৭১৯ কোটি টাকা। আর সে বাজেট এখন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকায়। স্বাধীনতার পর বিশেষ করে ৭৫ এর পর বাজেটগুলো ছিল বিদেশি সাহায্য নির্ভর। আর এখন বাজেট হয় নিজেদের অর্থে। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল নামমাত্র। আর এখন তা ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

জাতীয় পার্টির সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, করোনাকালে এবার একটি ভিন্নধর্মী বাজেট হবে বলে তারা আশা করেছিলেন। কিন্তু বাজেটে কিছু দেখা যায়নি। করোনার কোনো প্রভাব আছে তা বাজেটে পাওয়া যায়নি।