ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলায় ২০ জন বিশিষ্ট নাগরিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন। একই সঙ্গে স্মৃতিস্তম্ভটি যথাস্থানে পুনঃস্থাপনের অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ প্রতিবাদ জানান বিশিষ্ট নাগরিকরা।

 এতে বলা হয়েছে, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ভারত তথা ত্রিপুরার মানুষের বিশাল সমর্থন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কেন্দ্রস্থল পোস্ট অফিস চৌমোহনির ৪০ ফুট উঁচু শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি ভারত ও বাংলাদেশের গণমানুষের অভিন্ন মুক্তির আকাঙ্ক্ষার ও সৌহার্দ্যরে অন্যতম প্রধান স্মৃতিচিহ্ন, যা দুই দেশের বীর শহীদদের সম্মিলিত রাখিবন্ধনের সাক্ষী। আগরতলার এই স্মৃতি বিজড়িত স্থানটি ঘিরেই ত্রিপুরা রাজ্যের মানুষ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধরত গণমানুষকে ঐতিহাসিক ঋণবন্ধনে আবদ্ধ করেছিল। এই স্মৃতিস্তম্ভটি সম্প্রতি বিলোপ করা হয়েছে বলে আমরা গণমাধ্যমের খবরে জানতে পেরেছি। 

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দুই দেশের রক্তরঞ্জিত সম্পর্কের ইতিহাস-জড়িত স্মৃতিস্তম্ভটি সরিয়ে ফেলায় আমরা ব্যথিত বোধ করছি। আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে স্মৃতিস্তম্ভটি যথাস্থানে স্বমহিমায় পুনঃস্থাপনের অনুরোধ জানাই এবং দুই দেশের মানুষের সম্পর্কের প্রতীকী স্মৃতিস্মারকসমূহ যথাযথ সংরক্ষণের প্রয়োজন বোধ করি।  

বিবৃতিদাতারা হলেন- লেখক ও ভাষা সংগ্রামী আব্দুল গাফফার চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, অধ্যাপক ও প্রাবন্ধিক অনুপম সেন, নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী, মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, সাংবাদিক আবেদ খান, মুক্তিযোদ্ধা ও অভিনেত্রী লায়লা হাসান, কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, অধ্যাপক আবদুস সেলিম, মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লাহ খান বাদল, বীরপ্রতীক হাবীবুল আলম, লেখক ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি সভাপতি শাহরিয়ার কবির, মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর  কমান্ডারস্ ফোরাম '৭১ এর কার্যনির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ নুরুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা ও নাটক-চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মুক্তিযোদ্ধা ও লেখক-মুক্তিযুদ্ধ গবেষক হারুন হাবীব, ইতিহাসবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, প্রাবন্ধিক ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, ইতিহাসবিদ ও প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মেসবাহ কামাল এবং সংসদ সদস্য ও নাট্যব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জাম নূর।

আগরতলার কেন্দ্রস্থল পোস্ট অফিস চৌমুহনিতে ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৪০ ফুট উঁচু শহীদ স্মৃতিস্তম্ভটি গত শনিবার হঠাৎ ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেয় ত্রিপুরার বিজেপি জোট সরকার। গত বছর নভেম্বরে ওই স্থান থেকে সরানো হয় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে দখল করা একটি মার্কিন প্যাটন ট্যাংক ও একটি মার্কিন কামান। ওই স্থানে এখন একটি পানির ফোয়ারা বসবে বলে জানা গেছে।