গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডে ৩০০ কোটি ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্র
পাঁচ দফা লক্ষ্য অর্জন নিয়ে জোরালো বিতর্ক
.
আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ২৩:২২ | আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১১:৪৯
পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়ে আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, খরা, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, ভূমিকম্প, নদীভাঙন, জলাবদ্ধতা, মাটির লবণাক্ততা গত এক দশকে বহুলাংশে বেড়েছে। এই পরিবর্তন ঠেকাতে জলবায়ু সুরক্ষায় পাঁচ দফা লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন পরিবেশ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা। তবে এর বিরুদ্ধে নানা কূটকৌশলের আশ্রয় নিচ্ছেন উন্নত দেশগুলোর প্রতিনিধিরা। এ নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরে এবারের জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৮) পাল্টাপাল্টি বিতর্ক শুরু হয়েছে। গতকাল শনিবার দুবাইয়ের এক্সপো সিটি-২০২০ এ অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে এই বিতর্ক জোরালো হয়। পাঁচ দফা লক্ষ্য বিষয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন।
আলোচকরা শুরুতেই জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতির সার্বিক চিত্র নির্ণয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ দিন বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন। আলোচনায় থাকা পাঁচটি বিষয়ের মধ্যে রয়েছে অভিযোজন, কার্বন নিঃসরণ কমানো, জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থায়ন, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও সক্ষমতা বৃদ্ধি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শেষ মুহূর্তে কপ২৮ এ যোগদানের পরিকল্পনা বাতিল করায় সম্মেলনের সফলতা নিয়ে যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছিল, দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের এক ঘোষণায় নতুন আশার সঞ্চার করেছে। ১৩ দিনের এ সম্মেলনের তৃতীয় দিনে গতকাল তিনি গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ডের জন্য ৩০০ কোটি ডলার অনুদান ঘোষণা করেন, যা এ যাবৎকালে এই খাতে সবচেয়ে বড় অনুদান।
এদিন মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সম্মেলনে আলো ছড়িয়েছেন। কপ২৮-এর সভাপতি ড. সুলতান আল জাবের বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানির সক্ষমতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার ঘোষণা করেন। বৈশ্বিক উষ্ণতা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের ঘোষণায় গতকাল পর্যন্ত ১১৭টি দেশ অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। সুলতান আল জাবের একই সঙ্গে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামানোরও আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে গতকাল সম্মেলনের সাইডলাইনে ‘রাইজিং উইথ দ্য টাইড: ট্র্যাকিং রিফর্মস ইন ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্সিয়াল আর্কিটেকচার ফর এক্সিলারেটেড ডেভেলপমেন্ট-পজিটিভ ক্লাইমেট অ্যাকশন’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি জলবায়ু অভিঘাত মোকাবিলায় ক্রমবর্ধমান ব্যয় বৃদ্ধি মেটাতে একটি সমন্বিত সর্বজনীন অন্তর্ভুক্তিমূলক আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ব্যবস্থা প্রণয়নের আহ্বান জানান। মন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোও তুলে ধরেন।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম এবং ভালনারেবল ২০ দেশের জোটের বর্তমান চেয়ারম্যান ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আডোর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন ফোরামের পরবর্তী চেয়ারম্যান বার্বাডোজের প্রধানমন্ত্রী মিয়া মোটলি, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে, ফোরামের থিম্যাটিক অ্যাম্বাসাডর সায়মা ওয়াজেদ এবং প্রথম মহাসচিব মোহাম্মদ নাশিদ। ঘানার প্রেসিডেন্ট এ ফোরামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বের দুই মেয়াদে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর পক্ষে বাংলাদেশের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন।
পরে মন্ত্রী হাছান মাহমুদ কপ২৮ প্রেসিডেন্সি গোলটেবিল বৈঠকে ‘অ্যাক্সিলারেটিং ওয়াটার অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যাকশন’ বৈঠকেও অংশ নেন। এ ছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে গতকাল এমপি পর্যায়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুনানিতে কানাডা, জার্মানি ছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের মতামত তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রীর জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানিতে নতুন বিনিয়োগ হতে পারবে না। এখন আমরা যেটা করছি, বিশ্বব্যাপী একটা শুনানি করছি। এখানে পৃথিবীর সব অঞ্চল থেকে এমপিরা রয়েছেন। আশা করছি, সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি সম্ভব হবে।
একই দিন বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে সাউথ এশিয়ান ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরামের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেন সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি, ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আতিকুল ইসলাম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ।