নাসির উদ্দীন ইউসুফ। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও বরেণ্য নির্দেশক। তার হাতে গড়া নাট্যদল 'ঢাকা থিয়েটার'-এর সম্প্রতি চার যুগ পূর্তি হয়েছে। চার যুগ পূর্তি ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তার সঙ্গে-

যে স্বপ্ন নিয়ে 'ঢাকা থিয়েটার'-এর যাত্রা হয়েছিল, তা কতটা পূরণ হয়েছে?

১৯৭৩ সালের ২৯ জুলাই 'মৌলিক নাটক মঞ্চায়নের মধ্যে বাংলা নাটকের মুক্তি' স্লোগান নিয়ে ঢাকা থিয়েটারের যাত্রা শুরু হয়। দেখতে দেখতে এতটি বছর পার হলো টেরই পাইনি! প্রয়াত নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের নেতৃত্বে ঔপনিবেশিকতামুক্ত বাংলা ও বাঙালির নাট্যরীতি এবং আঙ্গিকের উদ্যোক্তা এই দল। মুক্তিযুদ্ধ উৎসারিত এবং রাজনৈতিক আদর্শে আমরা বাংলা নাটক নির্মাণ করতে চেয়েছি। আমরা চেয়েছি ঔপনিবেশিক নাট্যরীতির অনুকরণ থেকে বেরিয়ে আসতে। মুক্ত-স্বাধীন এই দেশের মানুষের নাট্যরীতি ও শিল্পবোধ তৈরিতে লড়াই চালিয়ে যাব- এই ছিল আমাদের মানসিকতা। এ লড়াই এখনও অব্যাহত রয়েছে। ৪৮ বছরে ভালো ভালো নাটক উপহার দিয়েছে দলটি। গ্লোব থিয়েটারে নাটক মঞ্চায়ন করে ঢাকা থিয়েটার অনেকের প্রশংসা পেয়েছে। বিদেশে এটি ঢাকা থিয়েটার ও আমাদের দেশের নাটকের বড় অর্জন বলে মনে করি। যে কাজ হাতে নিয়েছি, তা একজীবনে পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। আশা করছি, নতুনদের নিয়ে ঢাকা থিয়েটার বহুদূর এগিয়ে যাবে।

ঢাকা থিয়েটারের তত্ত্বাবধানে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে বাংলা সংস্কৃৃতি ছড়িয়ে দিতে এ থিয়েটার কতটা ভূমিকা রাখছে?

গ্রাম থিয়েটার একটি আদর্শিক সংগঠন। দীর্ঘদিনের পথচলায় এটি সফলতা ধরে রেখেছে। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার সৃষ্টির মধ্য দিয়ে এই দল আমাদের নাট্য আন্দোলনে একটি বিপ্লবী পরিবর্তন ঘটিয়েছে। ১৯৮২ সালে ঢাকা থিয়েটারের নেতৃত্বে আমি ও সেলিম আল দীন মিলে সংগঠনটি তৈরি করেছি। আমাদের সাড়ে তিনশরও বেশি সংগঠন রয়েছে সারাদেশে। তারা সফলভাবে বর্ণনাত্মক নাট্যরীতি, পাঁচালি রীতি অথবা পালাগানের রীতি অনুসরণ করে নাটক মঞ্চায়ন করে। আমাদের ইচ্ছা গ্রামে-গ্রামে মঞ্চ গড়ে তোলা। জীবদ্দশায় হয়তো সব দেখে যেতে পারব না' আমার বয়স এখন ৭১। সারাদেশে গ্রামগুলোতে আমরা যদি অন্তত ৫০০ মঞ্চ তৈরি করতে পারি, তা নাটকের জন্য অনেক বড় কাজ হবে।

শুনেছি, অবহেলিত জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজ শুরু করেছেন-

হ্যাঁ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের সহায়তায় 'বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন' মানুষের জন্য 'সুন্দরম' প্রকল্পের মাধ্যমে অবহেলিত এই জনগোষ্ঠীকে মূলধারায় সংযুক্ত করার এক মানবিক উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা থিয়েটার।

থিয়েটারে নতুন কোনো আয়োজনের পরিকল্পনা আছে কি?

মহামারিকালে নাট্যাঙ্গনে সরব রয়েছে ঢাকা থিয়েটার। 'একটি লৌকিক অথবা অলৌকিক স্টিমার' নামে নতুন একটি নাটক নিয়ে এসেছে দলটি। নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন শহীদুজ্জামান সেলিম। অনলাইনে 'পেন্ডুলাম' নামে একটি নাটকের মহড়া করেছি। মাসুম রেজা রচিত এ নাটকের নির্দেশনা দিচ্ছি আমি। নাটকটি যৌথভাবে প্রযোজনা করছে ঢাকা থিয়েটার ও দেশ নাটক। করোনার প্রাদুর্ভাব কমলেই এটি মঞ্চে আসবে বলে আশা করছি।