- বাংলাদেশ
- চিকিৎসক ঈশিতা ৬ দিনের রিমান্ডে
চিকিৎসক ঈশিতা ৬ দিনের রিমান্ডে

ইশরাত রফিক ঈশিতা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনসহ পৃথক দুই মামলায় চিকিৎসক ইশরাত রফিক ঈশিতাকে ছয়দিনের রিমান্ড দিয়েছেন দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত সোমবার এ আদেশ দেন।
মাদক রাখা ও প্রতারণার অভিযোগে রোববার রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে সহযোগী শহিদুল ইসলামসহ চিকিৎসক ঈশিতাকে গ্রেপ্তার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এরপর রাজধানীর শাহ আলী থানায় দুটি মামলা করা হয়।
এই দুই মামলায় ঈশিতা ও শহিদুলকে আদালতে হাজির করে পাঁচদিন করে মোট ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে পুলিশ। আদালত উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আসামি ঈশিতা ও শহিদুলকে দুটি মামলায় তিনদিন করে মোট ছয়দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
গ্রেপ্তারের পর সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আট বছর আগে ইশরাত রফিক ঈশিতা ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। এর বাইরে চিকিৎসা বিষয়ে তার আর কোনো সনদ কিংবা ডিগ্রি নেই। অথচ তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে একজন আলোচক, চিকিৎসাবিজ্ঞানী, গবেষক, পিএইচডি সম্পন্ন, মানবাধিকার কর্মী, সংগঠক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদ মর্যাদার এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন বলে ভুয়া পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।
ঈশিতার বাবার নাম খন্দকার রফিকুল ইসলাম। তার বাসা রাজধানীর কাফরুলে। তাদের কাছ থেকে ভুয়া আইডি কার্ড, ভুয়া ভিজিটিং কার্ড, ভুয়া সিল, ভুয়া সার্টিফিকেট, প্রত্যয়নপত্র, পাসপোর্ট, ল্যাপটপ, তিনশ’ পিস ইয়াবা, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বর্ণিত ভুয়া পরিচয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে তিনি ভুয়া নথিপত্র তৈরি ও প্রচার প্রচারণা চালান। তিনি ময়মনসিংহের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে ২০১৩ সালে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন। ২০১৪ সালের জুনে মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন তিনি। একই বছরে তিনি একটি সরকারি সংস্থায় চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে চার মাস চাকরি করার পর শৃঙ্খলাজনিত কারণে চাকরিচ্যুত হন। তিনি চিকিৎসা শাস্ত্রের বিভিন্ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষক হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। তার ভুয়া বিশেষজ্ঞ ডিগ্রিগুলো যথাক্রমে, এমপিএইচ, এমডি, ডিও ইত্যাদি। এছাড়া ভুয়া ক্যানসার বিশেষজ্ঞ হিসেবেও বিভিন্ন মতবাদ প্রচার করে থাকেন।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ঈশিতা জানিয়েছেন, তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিদেশে প্রাপ্ত ভুয়া সাফল্য স্বীকৃতের প্রচারণা করতেন। ২০২০ সালে ভারতের উত্তরপ্রদেশে হোটেল পার্ক অ্যাসেন্টে অনুষ্ঠিত জিআইএসআর ফাউন্ডেশনের প্রদত্ত ইন্টারন্যাশনাল ইন্সপিরেশনাল ওমেন অ্যাওয়ার্ড (আইআইডব্লিউ ২০২০) পেয়েছেন। যা ৩৫ বছর বয়সী চিকিৎসাবিজ্ঞানী ও গবেষকদের মধ্যে ‘বছরের সেরা নারী বিজ্ঞানী’ হিসেবে পুরস্কার। এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতে ‘রিসার্চ অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’, ‘ভারতের টেস্ট জেম অ্যাওয়ার্ড ২০২০’, থাইল্যান্ডে আন্তর্জাতিক শিক্ষা সম্মেলনে অংশ নিয়ে 'আউটস্ট্যান্ডিং সায়েন্টিস্ট অ্যান্ড রিসার্চার অ্যাওয়ার্ড’ ইত্যাদি। তিনি প্রতারণার মাধ্যমে ভুয়া নথি উপস্থাপন করে ২০১৮ সালে জার্মানিতে 'লিন্ডা ও নোবেল লরিয়েট মিট-মেডিসিনে’ অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে তিনি প্রচারণা করেন, তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। তিনি অ্যাওয়ার্ড বিষয়ক অনুষ্ঠানে উপস্থিতির এডিটিং করা ভুয়া ছবি ও সনদ তৈরি করে গণমাধ্যমে পাঠাতেন এবং নিজেই ভার্চুয়াল জগতে প্রচারণা চালাতেন। করোনা মহামারিকে পুঁজি করে ভার্চুয়াল জগতে প্রতারণায় সক্রিয় ছিলেন তিনি।
মন্তব্য করুন