- বাংলাদেশ
- অন্তঃসত্ত্বা নারীদের টিকাদানের বিষয়ে জানতে চায় হাইকোর্ট
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের টিকাদানের বিষয়ে জানতে চায় হাইকোর্ট

করোনা সুরক্ষায় অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
তাদের করোনার টিকা দেওয়া যাবে কীনা এবং দেওয়া সম্ভব হলে ৭২ ঘন্টার মধ্যে এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন ও তা ঘোষণারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের একক বিশেষ ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল সোমবার এই আদেশ দেন। রাষ্ট্রপক্ষকে হাইকোর্টের আদেশের বিষয়টি স্বাস্থ্য সচিবসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করতেও আদেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। অন্যদিকে রিটের ওপর শুনানি করেন আইনজীবী হুমায়ুন কবির পল্লব।
এর আগে গত ৩১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের চারজন আইনজীবী অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকা প্রদানের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। চার আইনজীবী হলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমাযু়ন কবির পল্লব, রাশিদা চৌধুরী, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার এবং ব্যারিস্টার মোঃ মোজাম্মেল হক এ রিটটি দায়ের করেন। রিটে
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং আইইডিসিআর এর পরিচালককে বিবাদী করা হয়।
রিটে বলা হয়, রিট আবেদনকারীদের একজন রাশিদা চৌধুরী নিজে একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী। দীর্ঘদিন যাবৎ করণা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু কোনভাবেই করণা ভ্যাকসিন নিতে পারছে না। তিনি তার অনাগত সন্তান এবং নিজেকে নিয়ে শঙ্কিত।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রতিবছর প্রায় ৩৫ লাখ নারী অন্তঃসত্ত্বা হয়। অর্থাৎ ৩৫ লাখ অন্তঃসত্ত্বা নারী আরও ৩৫ লক্ষ মানুষের অস্তিত্ব বহন করে। কিন্তু করোনা মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং শিশুরা মারা যাচ্ছে। সঠিকভাবে অন্তঃসত্ত্বা নারীদের করোনার টিকা ব্যবস্থা করা গেলে অনেক হতাহত কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে অন্তঃসত্ত্বাদের করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অন্তঃসত্ত্বাদের ফাইজার এবং মর্ডানার উৎপাদিত কোভিড ভ্যাকসিন দেওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
রিটে আরও বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন যাবৎ ওইসব দেশের অন্তঃসত্ত্বা নারীরা করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে আসছে। কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। গবেষণা অনুযায়ী অন্তঃসত্ত্বা নারীরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ার অধিক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। কোনো কারণে আক্রান্ত হলে তাদের এবং শিশুর জীবন বিপদাপন্ন হয়ে পড়ে। অথচ অত্যন্ত দুঃখের বিষয় সরকারের নির্ধারিত করোণা ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশনের সুরক্ষা অ্যাপে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিবন্ধন করার জন্য অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য কোন সুযোগ রাখা হয়নি। অথচ তাদের চেয়েও কম ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্তঃসত্ত্বাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোণা টিকা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। তাদেরকে অগ্রাধিকার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না করা একটি নিপীড়নমূলক, বৈষম্যমূলক এবং তাদের জীবনধারণের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা প্রদানের জন্য সুরক্ষা অ্যাপে সুযোগ করে দেওয়া সরকারের অন্যতম দায়িত্ব বলে রিটে উল্লেখ করা হয়েছে।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
অন্তঃসত্ত্বাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা একটি রিট আবেদনের শুনানি হয় সোমবার। শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার এ মৌখিক আদেশ দেয়। আদেশে অ্যাটর্নি জেনারেলকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্রনাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার।
শুনানির এক পর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিচারক বলেন, “অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ব্যাপারে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন যে টিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আমার মনে হয় এ বিষয়টির একটি সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আসা প্রয়োজন। অ্যাটর্নি জেনারেলকে বলবেন, তিনি যাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যাতে তারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস এ সময় বলেন, আদালতের কার্যক্রম শেষ হলেই তিনি অ্যাটর্নি জেনারেলকে বিষয়টি জানাবেন। এরপর রিট আবেদনের শুনানি মুলতবি রাখে আদালত।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবীর পক্ষে স্বাস্থ্যসচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং আইইডিসিআরের পরিচালককে উকিল নোটিস পাঠানো হয়েছিল।
নোটিসের জবাব না পেয়ে গত ৩১ জুলাই হাই কোর্টে এই রিট আবেদন করা হয়। আবেদনকারীদের মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা একজন নারী আইনজীবীও আছেন। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয় রিটে।
দেশে গত ফেব্রুয়ারি মাসে যখন গণটিকাদান শুরু হল, তখন থেকেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলে এসেছে, অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এ টিকা দেওয়া হবে না, কারণ তাদের ওপর এ টিকার পরীক্ষামূলক কোনো প্রয়োগ কোথাও হয়নি।
মন্তব্য করুন