করোনাভাইরাসের মহামারিতে অনেক ডাক্তারের চেম্বার খোলা নেই। আবার অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামলাতে ডাক্তারদের হাসপাতালে ব্যস্তও থাকতে হচ্ছে দিনরাত। এ অবস্থায় বাসায় হঠাৎ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে উপযুক্ত একজন চিকিৎসকের সন্ধান পাওয়া ও পরামর্শ নেওয়া বেশ সমস্যা। হাসপাতালের শয্যা খালি পাওয়াও কষ্টকর হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে গেলেও ভর্তির সময় কভিড-১৯ পরীক্ষা করা আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হচ্ছে। যদি আরও গুরুতর অসুস্থ রোগী হয় তাহলে জরুরি চিকিৎসা, বিশেষ করে আইসিইউ খালি পাওয়াটা দুরূহ হয়ে উঠেছে। এই সংকটে ডাক্তার আর হাসাপাতাল সংক্রান্ত তথ্য ঘরে বসে খুঁজে নিতে বাংলাদেশি তরুণরাই তৈরি করেছে একটি নতুন অ্যাপ 'হসপিটাল ইন'।

সংশ্নিষ্টরা জানান, এই অ্যাপের মাধ্যমে ডাক্তারের কাছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়া কিংবা কোনো হাসপাতালে শয্যা, আইসিইউ খালি আছে কিনা সে তথ্য পাওয়া যাবে। এখানে 'ফাইন্ড ডক্টর' অপশনে পাওয়া যাবে ইমার্জেন্সি ডক্টর (অ্যাকটিভ নাউ) বাটন। দিনে-রাতে ২৪ ঘণ্টার যে কোনো সময় ক্লিক করলে জানা যাবে আশপাশে কোন কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এই মুহূর্তে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। প্রয়োজনে ডাক্তারের সঙ্গে অডিও বা ভিডিও কলে কথা বলা যাবে, নেওয়া যাবে প্রেসক্রিপশনসহ যাবতীয় চিকিৎসা পরামর্শ। আরও জানা যাবে কোন চিকিৎসক কোন চেম্বারে কখন বসবেন, সে অনুযায়ী অনলাইনেই সিরিয়াল দিয়ে সাক্ষাতের নির্দিষ্ট সময় জানা যাবে। আরও জানা যাবে ডাক্তারের ফি এবং চেম্বারের পথনির্দেশনা।

এই সঙ্গে প্রোফাইলস ডিটেইলসে গিয়ে জেনে নেওয়া যাবে ডাক্তারের জীবনবৃত্তান্ত, অর্থাৎ ডাক্তার কোন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ, তার মূল ডিগ্রি কী, কোন শাখায় বিশেষজ্ঞ এবং কোন মেডিকেল কলেজ থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে কোনো হাসপাতাল কিংবা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকলে তারও বিস্তারিত তথ্য মিলবে, জানা যাবে সংশ্নিষ্ট ডাক্তার বিএমডিসি (বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল) ভেরিফাইড কিনা। সার্চ 'বিএমডিসি' অপশনে গিয়ে ডাক্তারের বিএমডিসি নিবন্ধন নম্বরও যাচাই করে নেওয়া যাবে।

চার বন্ধু মিলে অ্যাপটি তৈরি করেছেন। তাদের একজন আশরাফ আসাদ সমকালকে জানান, অ্যাপটি বর্তমানে শুধু গুগল প্লেস্টোরেই পাওয়া যাচ্ছে, অর্থাৎ স্মার্টফোন ব্যবহারীরাই এখন অ্যাপটি ব্যবহার করতে পারবেন। আইফোনের জন্য কাজ চলছে। আশা করা যায় আগামী সপ্তাহ থেকেই আইওএস ব্যবহারকারীরাও আইস্টোরে পেয়ে যাবেন হসপিটালইন। এই অ্যাপে ভবিষ্যতে আরও যুক্ত হবে অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফার্মেসি ও ওষুধ সরবরাহ, নার্স সেবা, বিদেশে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্টসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবা ও সহযোগিতা।

অ্যাম্বুলেন্স সেবা যুক্ত করার বিষয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে জরুরি মুহূর্তে অ্যাম্বুলেন্স পেতে বেশিরভাগ মানুষ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছেন। জীবন বাঁচানোর প্রয়োজনে মানুষ অতিরিক্ত খরচের বিষয়টি ভাবারও সুযোগ পাচ্ছেন না। এই অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের সুযোগের জন্যই অ্যাম্বুলেন্স সেবাদাতারা এই অ্যাপে যুক্ত হতে চাচ্ছেন না। কারণ অ্যাপে সব সময়ের জন্য একটি নির্দিষ্ট ভাড়া নির্ধারণ করা হবে, যেন সেটি কোনোভাবেই অতিরিক্ত ভাড়া না হয়।

আরেক উদ্যোক্তা ড. আব্দুল্লাহ বিন সাঈদ বলেন, খুব অল্প সময়ে 'হসপিটালইন' পৌঁছে গেছে তিন হাজারের বেশি চিকিৎসকের কাছে। সব ডাক্তারের বিএমডিসি নম্বর চেক করা থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এখানে থাকছে ম্যাপে আপনার চারপাশের ডাক্তার খুঁজে পাওয়ার সুবিধা, যেটা অন্য অ্যাপে নেই।

অ্যাপটির কারিগরি দিক দেখছেন ড. জুবায়ের আহমেদ। তিনি বলেন, প্রথমে লক্ষ্য ছিল ডাক্তারদের চেম্বারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট সহজে অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ে আসা সম্ভব কিনা। পরে চিকিৎসকদের কাছ থেকে অভূতপূর্ব সাড়া পেয়ে মনে হয়েছে আমরা একটা হেলথ কমিউনিটি গড়ে তুলতে পারি হসপিটালইনের মাধ্যমে। যেখানে ডাক্তারদের একটা প্রফেশনাল অ্যাকাউন্ট থাকবে এবং রোগীরা পাবে ডাক্তারদের একটা পার্মানেন্ট লিঙ্ক।

হসপিটালিনের আরেক উদ্যোক্তা বেলায়েত হোসেন বলেন, নিজেকে শুধু চিকিৎসক পরিচয়ে আটকে রাখতে চাইনি কিছুতেই। মনের মাঝে সবসময়ই একটা কথা ঘুরেফিরে বেড়াত- এমন কিছু করতে হবে যেন মানুষ আমার চিকিৎসক পরিচয়ের বাইরেও আমার কাজ দিয়ে অন্য একটা পরিচয়ে মনে রাখে। সেটিই হসপিটালইনের মাধ্যমে সম্ভব হয়েছে।

গুগল প্লেস্টোর থেকে 'হসপিটালইন ওআরজি' নামে পাওয়া যাচ্ছে অ্যাপটি। এখান থেকে ডাউনলোড করে নিজের প্রোফাইল তৈরি করলে পাওয়া যাবে এই অ্যাপের আওতায় থাকা সব সেবা। প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত তথ্য, যেমন- উচ্চতা, ওজন, বয়স, লিঙ্গ, রক্তের গ্রুপ, পেশার তথ্য সংযোজিত থাকার কারণে আপৎকালীন চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য ডাক্তারকে ফোন করলেই ডাক্তার এই তথ্যগুলো সম্পর্কে অবগত হবেন। ফলে সময় বাঁচবে, পাশাপাশি সঠিক রোগ নির্ণয়েও সুবিধা হবে।