আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযোগে একের পর এক গ্রেপ্তার হচ্ছেন মডেল-অভিনেত্রী এবং তাদের সহযোগীরা। আরও অনেকে আছেন নজরদারিতে। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার চলচ্চিত্র-সংশ্নিষ্টদের বিরুদ্ধে মূলত মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করা হয়েছে। তবে এবার অভিযুক্ত কারও কারও বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং মামলার প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। নামে-বেনামে থাকা তাদের অর্থ-সম্পদের খোঁজ নিচ্ছেন গোয়েন্দারা। সম্পদের তথ্যে গরমিলের তথ্য পেলে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এরই মধ্যে রিমান্ডে পরীমণি, ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে তাদের অর্থ-সম্পদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কীভাবে বিলাসবহুল গাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক হয়েছেন তারা, এর কোনো স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি। তবে পরীমণি দাবি করেন, ঋণ করে তিনি গাড়ি কিনেছেন। এদিকে গ্রেপ্তার হেলেনা জাহাঙ্গীরের বৈধ-অবৈধ সম্পদের খোঁজও নেওয়া শুরু হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, মডেলদের ব্যবহার করে যারা কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসান, প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ এবং তুহিন সিদ্দিকী অমি। অভিযোগ আছে, অমি অবৈধ পথে বিদেশ থেকে মদ এনে দেশে বিক্রি করতেন। এছাড়া রিক্রুটিং এজেন্সির ব্যবসার নামে বিদেশে নারী পাচারের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে আছে। দুবাইয়ে অঢেল সম্পদ গড়েছেন তিনি। সেখানে তার রয়েছে রিসোর্টসহ একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তার মাধ্যমে অনেকের অবৈধ অর্থ বিদেশে পাচার হতো বলে অভিযোগ আছে। এছাড়া প্রভাবশালী ব্যক্তি ও মডেল নিয়ে বিদেশে পার্টির আয়োজন করতেন অমি। বিমানবন্দরের চোরাকারবারিদের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে শুল্ক্ক ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ আনতেন তিনি। একাধিক সূত্র বলছে, মডেল ও উঠতি অভিনেত্রীদের ব্যবহার করে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানে সংশ্নিষ্ট। এর সঙ্গে কয়েকজন প্রভাবশালীর নামও পাওয়া গেছে।

এছাড়া মিশু ও রাজ নানা কৌশলে মডেলদের তাদের সিন্ডিকেটের সদস্য করে বড় বড় কাজ ভাগিয়ে নিতেন। মিশুর রয়েছে দুটি রেঞ্জ রোভার, অ্যাকুয়া, ভক্স ওয়াগন, ফেরারিসহ পাঁচটি অভিজাত গাড়ি। কয়েকটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগও রয়েছে তার। মিশু ও রাজের ব্যবসায়ে অনেক কালো টাকার মালিকও বিনিয়োগ করেছেন বলে গোয়েন্দারা তথ্য পেয়েছেন। এসব দামি গাড়ি ব্যবহারকারীদেরও পৃথক তালিকা হচ্ছে।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, পিয়াসা, মৌসহ সম্প্রতি গ্রেপ্তার মডেল ও অভিনেত্রীদের 'বড় ভাই' ছিলেন মিশু এবং রাজ। অভিজাত উচ্চবিত্তদের সঙ্গে তাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে অঢেল টাকার মালিক হন তারা। প্রতিটি পার্টিতে ১৫ থেকে ২০ জন অংশ নিতেন। এছাড়া বিদেশেও প্রমোদভ্রমণের আয়োজন করা হতো। একইভাবে উচ্চবিত্ত প্রবাসীদের জন্যেও দুবাই, ইউরোপ ও আমেরিকায় এ ধরনের পার্টির আয়োজন করা হতো। অবৈধ এসব পার্টি থেকে মিশু ও রাজের প্রচুর আয় হতো।