‘শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং প্রান্তিক তরুণদের সমান অধিকার নিশ্চিত করা’ এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে দুই দিনব্যাপী ছায়া যুব সংসদ-২০২১ আয়োজন করা হয়। গত শুক্র ও শনিবার জাতিসংঘ যুব ও ছাত্র সমিতি বাংলাদেশ (ইউনিস্যাব) এবং অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে এবারের আয়োজন অনুষ্ঠিত হয়।

পথশিশু, জেলে সম্প্রদায়, হিজড়া সম্প্রদায়, পার্বত্য চা-বাগানের সংখ্যালঘুদের মত সমাজের পিছিয়ে পড়া এবং অবহেলিত সকল জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তি করা হয় এবারের অধিবেশনে। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের আদলে এই অনুষ্ঠানের সব কার্যাবলি সাজানো হয়েছিল।

গত ৬ আগস্ট ‘ছায়া যুব সংসদ-২০২১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছাবার্তা পাঠ করেন ইউনিস্যাবের প্রেসিডেন্ট শ্যামী ওয়াদুদ। উদ্বোধনে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নাহিম রাজ্জাক এমপি। তিনি ইউনিস্যাব এর ট্রাস্টি বোর্ডের সহ-সভাপতি।

২০১৯ সালে বাংলাদেশে যুব ছায়া সংসদ প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়। তবে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো যুব ছায়া সংসদ ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

দেশে বিদ্যমান নানাবিধ সমস্যাবলি নিয়ে তরুণদের চিন্তাভাবনা, মতামত এবং সেগুলো সমাধানে তাদের প্রস্তাবিত ধারণাকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াই এই অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ছায়া সাংসদ তাদের নিজ নিজ এলাকার সমস্যা এবং তার সমাধানের ব্যাপারে বক্তব্য রাখেন।

রাজশাহী-৩ আসনের কল্পিত সাংসদ পাঠ্যবই পরিবর্তনের কথা বলেন। দিনাজপুর-৩ আসনের সাংসদ মাদ্রাসা শিক্ষাকে বাংলা ও ইংরেজির সাথে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতি সামাজিক বৈষম্য দূরীকরণের কথা বলেন। বিশেষত, নওগাঁ-৬ আসনের সাংসদ সাঁওতালদের মাতৃভাষাকে লিখিত ভাষায় প্রণয়ন এবং পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্তির অনুরোধ করেন।

এছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয় প্রান্তিকদের ভূমি দখল, আইন ও বিচার ব্যবস্থার নিষ্ক্রিয় ভূমিকা, মাতৃত্বকালীন ভাতা দুই বছর থেকে পাঁচ বছরে উন্নীত করার কথা উল্লেখ করেন। তারা গণমাধ্যম এবং গণমানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন এবং সমাজের চলমান অসঙ্গতিগুলো নিরসনে কার্যকর বিভিন্ন সমাধানও তুলে ধরেন।

‘ছায়া যুব সংসদ ২০২১’ এ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৫০ জন তরুণ সংসদ সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। যাদেরকে হাজারেরও বেশি অংশগ্রহণেচ্ছুক তরুণের মধ্য থেকে নির্বাচিত করা হয়েছে। মনোনীত ১৫০ আসনের মাঝে ৩০টি আসন সংরক্ষিত ছিলো সমাজের অবহেলিত প্রান্তিক তরুণ সমাজের জন্য, যারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এবং বক্তব্যে নিজেদের বঞ্চনা, সামাজিক বৈষম্যসহ নানাবিধ সামাজিক সমস্যা তুলে ধরেন।

দুই দিনের এই আয়োজনটিতে ছিলো স্থায়ী কমিটি সেশন, প্রস্তাবনা পেশ, বিল উত্থাপন, ভোট গ্রহণ, প্রেস ব্রিফিং এবং ফলাফল ঘোষণাসহ নানারকম সব আয়োজন। জাতীয় সংসদের মত একজন স্পীকার সেশনগুলো পরিচালনা করেন। 

বিশেষ অতিথি হিসেবে একশন এইড বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবিরের উপস্থিতিতে এবাবের আয়জনের সমাপ্তি হয়।