বহুল আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণির সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি সামনে আসার পর পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনকে ঘিরে নানামুখী তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই বিষয়ে রোববার পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ বিভাগ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি করা না হলেও অনানুষ্ঠানিক তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।

সাকলাইয়েন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগে এডিসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ৪ আগস্ট মাদককাণ্ডে পরীমণি গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার সঙ্গে ওই কর্মকর্তার সম্পর্ক ও এ সংক্রান্ত ভিডিও ফুটেজ গণমাধ্যমে প্রকাশ হলে তোলপাড় শুরু হয়। এরপরই তাকে ওই পদ থেকে সরিয়ে পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট (পিওএম)-পশ্চিম বিভাগে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

অবশ্য পিওএম-পশ্চিম বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, রোববার পর্যন্ত পুলিশের ওই কর্মকর্তা তার নতুন কর্মস্থলে যোগ দেননি।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, এডিসি গোলাম সাকলায়েনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগটি উঠেছে, সেটি নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধ। এ বিষয়ে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুলিশ সূত্র জানায়, গত জুনে উত্তরায় বোট ক্লাবে পরীমণির সঙ্গে ব্যবসায়ী নাসির ইউ মাহমুদের ঝামেলার পর ওই ঘটনায় কয়েকটি মামলা হয়। এরপর অভিযান চালিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর একটি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এডিসি গোলাম সাকলায়েন। মামলা তদন্তের কারণেই পরীমণির কাছাকাছি আসেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।

অবশ্য ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেছেন, সাকলায়েনের সঙ্গে পরীমণির কতোদিনের সম্পর্ক, কীভাবে তিনি সম্পর্কে জড়ালেন, মামলার তদন্তে এ সম্পর্কের কোনো প্রভাব পড়েছে কি-না, এসব বিষয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত করা হবে। পাশাপাশি ডিবিতে দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্ব পালনকালে তিনি অনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছিলেন কি-না, সে বিষয়ে যাচাই করা হবে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, পরীমণি ইস্যুর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েনের বিষয়টি জড়িয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার পর পুলিশ সদস্যরাও বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন। অনেককে সমাজে, বন্ধুদের কাছে, এমনকি পরিবারের কাছেও হেয় হতে হচ্ছে। নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এসব কারণেই আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিটি না হলেও তারা অভ্যন্তরীণভাবে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছেন।

পরীমণিকে মাদকের মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। পুলিশ কর্মকর্তা গোলাম সাকলায়েনের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে পরীমণি কিছু বলেছেন কি-না, জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, সিআইডি পরীমণিকে মাদক সংক্রান্ত মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে। এর বাইরে যদি অন্য কোনো বিষয় থেকে থাকে, তা তদন্তের মধ্যে নিয়ে আসা হবে।

পরীমণি গত ১ আগস্ট সকাল থেকে পুলিশ কর্মকর্তা সাকলায়েনের সরকারি বাসায় একটানা ১৮ ঘণ্টা অবস্থান করেন। রাজধানীর রাজারবাগে মধুমতি আবাসিক ভবনের ১০তলায় ওই কর্মকর্তার বাসা। ওই বিষয়টি সিসিটিভিতে ধরা পড়ে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ১ আগস্ট পরীমণির হ্যারিয়ার গাড়ি এসে থামে রাজারবাগের আবাসিক ভবন মধুমতির সামনে। প্রথমে সেই গাড়ি থেকে লাল টি-শার্ট পরা অবস্থায় নামেন পুলিশ কর্মকর্তা। তার পর নামেন সাদা গাউন পরা পরীমণি। এরপর তারা লিফটে উঠে যান। কিছুক্ষণ পর পরীমণির গাড়ি থেকে একটি ট্রলি-ব্যাগ বাসায় নেওয়া হয়। রাত দেড়টার দিকে ওই ভবনের সামনে আবার আসে পরীমণির গাড়িটি। এরপর রাত সোয়া দুইটার দিকে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে পরীমণিকে তার কুকুর ও ট্রলি-ব্যাগ নিয়ে ভবন থেকে নেমে সেই গাড়িতে উঠতে দেখা যায়।