চিত্রনায়িকা পরীমণি, মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ এবং প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলোর তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, মোটা অংকের ঋণ পাস করাতে মডেল-অভিনেত্রীদের কাজে লাগাতেন প্রভাবশালী অনেক ঋণগ্রহীতা। এছাড়া আপত্তিকর ভিডিও-ছবি ধারণ করে পরে সংশ্লিষ্ট ব্ল্যাকমেইল করতেন তারা।

পরীমণি, পিয়াসা, মৌ ও রাজকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পেশার মানুষের নাম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিআইডির এডিশনাল ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক। 

রোববার সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, পরীমণি, পিয়াসা ও মৌকে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তারা ব্ল্যাকমেইলসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছে। তবে নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত তাদের নাম প্রকাশ করা যাবে না।

তিনি আরও বলেন, যেসব নাম পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে এবং সত্যিকার অর্থে যারা এসব অপরাধে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। 

পরীমণি-পিয়াসার সঙ্গে ব্যাংকের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সখ্যতার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিআইডির এই কর্মকর্তা বলেন, অনেক নাম পাওয়া যাচ্ছে। তবে তদন্তের স্বার্থে কারো নাম বলা যাচ্ছে না। খুবই গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন- এমন কেউ রোববার পর্যন্ত সিআইডির কাছে লিখিত অভিযোগ করেননি বলেও জানান তিনি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পরীমণি, পিয়াসা ও মৌসহ ওই চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার কেউ কেউ মৌখিক অভিযোগ করলেও মানসম্মানের ভয়ে লিখিত অভিযোগ কিংবা মামলা দায়ের করেননি এখনও। কারণ, মামলা করলে নাম প্রকাশ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, একটি বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা বেশ কয়েকজন উঠতি মডেলকে গাড়ি উপহার দিয়েছেন। সূত্রটি জানায়, পরীমণি, পিয়াসা, মৌয়ের মাধ্যেমে কারা সুবিধা পেয়েছেন তাদের নাম বেরিয়ে আসছে।

পরীমণি, পিয়াসা, মৌ, রাজ ও শরফুল হাসান মিশু ওরফে মিশু এবং আওয়ামী লীগ থেকে পদ হারানোর হেলেনা জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মোট সাতটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। এর মধ্যে গুলশান থানার দুটি, ভাটারা থানার একটি, মো‏হাম্মদপুর থানার একটি, পল্লবী থানার একটি এবং বনানী থানার দুটি মামলা, যার মধ্যে মাদক মামলা পাঁচটি। পরীমণি, পিয়াসা ও মৌ মাদক মামলার আসামি।

গত ৪ আগস্ট বনানীতে পরীমণির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে র‌্যাব। বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসা জব্দ করার কথা জানায় র‌্যাব। একইদিন পরীমণির ঘনিষ্ঠজন ও প্রযোজক নজরুল ইসলামের রাজের বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। তার বাসা থেকেও মাদক পাওয়ার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। পরে তাদের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করে র‌্যাব। রাজের বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফী আইনেও মামলা করা হয়। 

এর আগে ১ আগস্ট গুলশানের বারিধারার বাসা থেকে মডেল মাহবুব হাসান পিয়াসা ও মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে মরিয়ম আক্তার মৌকে গ্রেপ্তার করে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তাদের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা ও সিসা পাওয়ার কথা জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিন মামলায় পিয়াসা আটদিনের এবং এক মামলায় মৌ চারদিনের রিমান্ডে রয়েছেন সিআইডির কাছে।

এছাড়া, গত শুক্রবার পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ করিম জিমিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।