পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেছেন, দুর্নীতি একটি বড় সামাজিক সমস্যা। দুর্নীতি না থাকলে প্রবৃদ্ধি আরো বাড়তো। সরকার দুর্নীতিকে উন্নয়নের অন্তরায় হিসেবে বিবেচনা করে। এলডিসি উত্তরণের পথে দুর্নীতি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ২০২৬ পরবর্তী সময়ে শুল্কমুক্ত রপ্তানি অব্যাহত রাখতে সরকার সংশ্লিষ্ট দেশসমূহের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং ৮টি দেশের সাথে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করা হচ্ছে। 

শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওস্থ এফডিসিতে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজনে ‘এলডিসির চ্যালেঞ্জ উত্তরণে সরকারের প্রস্তুতি’ নিয়ে ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, কোভিড পরিস্থিতির কারণে দরিদ্র লোকের সংখ্যা ৪২ শতাংশ হয়েছে মর্মে কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান যে তথ্য দিয়েছে তা সঠিক নয়। তাদের সমীক্ষা পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি অনেক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে তাদের প্রক্ষেপণগুলো বাস্তবসম্মত নয়। এমনকি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম কর্তৃক অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা না করে শুধু কোভিড রেসপন্স প্ল্যান করার যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল তা সংবিধান বিরোধী। কোভিডের কারণে অর্থনীতিতে আঘাত এসেছে এবং তা উত্তরণে সরকার যথাযথ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। তবে এটি সত্য যে আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখানে দীর্ঘমেয়াদি লকডাউন বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। 

ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে এলডিসির চ্যালেঞ্জ উত্তরণে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ১০ দফা সুপারিশ প্রদান করেন। সুপারিশগুলি হচ্ছে- এলডিসি থেকে উত্তরণের পর অন্তত আরো ১২ বছর বিদ্যমান শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা প্রাপ্তির জন্য ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি জোরদার করা। বিকাশমান ওষুধ শিল্প পেটেন্ট সুবিধা বাড়ানোর জন্য জোর চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ডুয়িং বিজনেস সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আরো সুদৃঢ় করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এলডিসি থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অভিবাসন খাত থেকে রেমিটেন্স প্রাপ্তির ধারা অব্যাহত রাখার জন্য অভিবাসন কূটনীতি জোর করা। রাজস্ব আহরণে বৈচিত্রতাসহ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বৃদ্ধি করা। বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে মানবউন্নয়ন প্রতিবেদন তৈরি করে মানবসম্পদ উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা। সাম্প্রতিক সময়ে কোভিড এর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা উত্তরণে নব্য দারিদ্রের জন্য আয় বর্ধণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা। জলবায়ু অর্থায়নে বৈদেশিক উৎসের ওপর নির্ভর না করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করা। বাংলাদেশের লিঙ্গ সমতা অর্জনের জন্য বাস্তবতা নিরিখে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের কারণে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থার বৃত্তি যাতে বন্ধ না হয় সেদিকে নজর দেয়া এবং বিকল্প বৃত্তির ব্যবস্থা করা। উপরোক্ত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে পরোক্ষভাবে এলডিসি গ্রাজুয়েশনে যে ৩টি মানদণ্ড মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা উত্তরণে সহায়ক হবে। 

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশকে পরাজিত করে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া চ্যাম্পিয়ন হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, উন্নয়ন যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক কাবেরী মৈত্রেয়, সাংবাদিক উম্মান নাহার আজমী এবং সাংবাদিক আবদুর রহিম হারমাছি। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।