উদ্ভিদপ্রেমী জমিদার নরেন্দ্রনারায়ণ রায়ের এক অমর উদ্ভিদকাব্যের নাম বলধা গার্ডেন। বলধা গার্ডেনের পরতে পরতে তিনি যে জীবনকাব্য রচনা করে রেখেছেন তা এককথায় তুলনাহীন। অন্য কোনো উদ্যানে স্বল্প পরিসরে এত উদ্ভিদবৈচিত্র্য আর কোথাও চোখে পড়েনি। শুধু তা-ই নয়, সংখ্যার দিক থেকে এবং দুষ্প্রাপ্যতায়ও সেরা এই উদ্যান। 

সেখানে এমন কিছু উদ্ভিদ রয়েছে, যা দেশের আর কোথাও নেই। এ ধরনের উদ্ভিদগুলো বৃক্ষপ্রেমী জমিদার পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে সংগ্রহ করেছিলেন। সাইকিতে থাকা এমনই একটি গাছের নাম Needle Flower Tree. বাংলায় যাকে সুঁইফুল বলা যেতে পারে। লম্বা ও সরু যে ডাঁটির মাথায় তারকার মতো ফুলটি ঝুলে থাকে ইংরেজি নামকরণ সম্ভবত সেই সরু ডাঁটির কারণেই। ছবি তোলার সময় ফুলটি একেবারেই অচেনা ছিল। আমাদের উদ্ভিদবিষয়ক বইপত্রেও ফুলটির তথ্য পেলাম না। শরণাপন্ন হলাম বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বেরিয়ামের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সরদার নাসির উদ্দিনের। তিনিই গাছটি উপরোক্ত নামে শনাক্ত করেন। 

এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Posoqueria latifolia. নরেন্দ্রনারায়ণ রায় কীভাবে, কোথা থেকে গাছটি এনে লাগিয়েছিলেন সে সম্পর্কে এখন আর কোনো কিছু জানা যায় না।

সুঁইফুল গুল্ম বা ছোট আকারের চিরসবুজ গাছ। সাধারণত ৬ থেকে ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। চকচকে পাতাগুলো উপবৃত্তাকার বা আয়তাকার এবং গাঢ় সবুজ। ফুলের নল খুব সরু এবং লম্বা, যা গড়নের দিক থেকে অনেকটা হিমঝুরির মতো। 

জন্মস্থানে বছরের বেশিরভাগ সময় গাছে ফুল থাকলেও এখানে ফুল দেখেছি বসন্তে। ফুলের সুবাস চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে। ফুল শেষ হলে ছোট আকারের, গোলাকার ও কমলা রঙের ফল হয়। প্রায় ৫ সেন্টিমিটার ব্যাসের এই ফল মিষ্টি, মাংসল ও রসালো। তবে খেতে খুব সুস্বাদু না হলেও স্থানীয়ভাবে এই ফল খাওয়ার রেওয়াজ আছে।

দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল, বলিভিয়া, পেরু এবং উত্তর ও মধ্য আমেরিকা হয়ে বৃষ্টিবহুল বনগুলোয় ছড়িয়ে আছে এই গাছ। পূর্ণ সূর্য বা আংশিক ছায়াময় স্থানে এই গাছ ভালো জন্মে। গভীর ও আর্দ্রতাময় সমৃদ্ধ মাটিতে সবচেয়ে ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে। পরিণত উদ্ভিদ মোটামুটি খরা সহনশীল। 

শুষ্ক সময়ের পর যখন ভারি বৃষ্টিপাত হয় তখন ফুলগুলো ফুটতে শুরু করে। পানামায় সৌন্দর্য ও সৌরভের জন্য ঘরের আঙিনায় এ-গাছ লাগানো হয়। ঘরের কাছে থাকলে খুব সহজেই ফুলের গন্ধ উপভোগ করা যায়। এ-গাছের বাকলে রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান রয়েছে, সে কারণে আমাজন অঞ্চলে বিষতীরে সৃষ্ট ক্ষত নিরাময়ে বাকল ব্যবহূত হয়। এটি এইডস ভ্যাকসিন হিসেবেও পরীক্ষা করা হয়েছে। ফুলের শুকনো গুঁড়ো মাছি তাড়ানোর জন্য বেশ কার্যকর। গাছটির সূক্ষ্ম এবং দানাদার ঘন কাঠ হাঁটার লাঠি তৈরিতে কাজে লাগে।

বিষয় : বলধা গার্ডেন সুঁইফুল

আরও পড়ুন

মন্তব্য করুন