সাভারের আশুলিয়ার আলোচিত সেই ছোট্ট গরু ‘রানী’র মৃত্যুর তথ্য অবশেষে নিশ্চিত করলো খামার কর্তৃপক্ষ। শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিডেট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অপেক্ষায় থাকা ‘রাণী’ মারা গেছে। মাত্র ২০ ইঞ্চি উচ্চতা, লম্বায় ২৩ ইঞ্চি এবং ২৬ কেজি ওজনের বক্সার ভূট্টি জাতের খর্বাকায় এই ছোট গরুটির নাম ‘রাণী’। 

গরুটির মালিক ‘শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ এর স্বত্তাধিকারী আবু সুফিয়ান রাণীকে বিশ্ব রেকর্ডে জায়গা করে দিতে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছেন। তাদের পরীক্ষা নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে বিশ্বে ছোট গরুর রেকর্ডে ভারতকে পেছনে ফেলবে বাংলাদেশ।

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘রাণী’র মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করে সাভার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে  যোগাযোগ করা হলে তারা এটিকে ‘গুজব’ দাবি করেন।

বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় ‘শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’ এর ফেসবুক পেজে ‘রাণী’র মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করে পোস্ট দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক মুজতাবা আবুল আহাদ লেখেন, অতিরিক্ত গ্যাসের কারণে পেট ফোলা নজরে এলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শে ‘রাণী’কে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা রাণীর সুস্থতার জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন। কিছুক্ষণ ভালো থাকার পর রাণী মারা যায়।

তিনি লিখেছেন, পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট গরু হিসেবে বাংলাদেশের হয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের স্বীকৃতি পাওয়ার আগেই মারা গেল শিকড় এগ্রোর ‘রাণী’। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া তৃতীয় ইমেইলের উত্তর দেওয়ার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে তাদের প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তা শিকড় এগ্রোর সাভার শাখায় আসেন। রানীর মৃত্যুর খবর গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে। 

এদিকে চিকিৎসা চলাকালে জীবিত থাকা অবস্থায়ই রাণীর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয় বলে ওই পোস্টে মন্তব্য করেন তিনি।

এর আগে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাণীর মৃত্যুর সংবাদ নিয়ে ‘রানীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য’ ‘রানীর’ মৃত্যু নিয়ে রহস্য’ শিরোমামে সমকালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চিকিৎসকরা গরুটির মৃত্যুর কথা জানালেও মালিক শিকড় এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, গরুটি মারা যায়নি। ফলে চিকিৎসক ও গরুর মালিকের দুই ধরনের বক্তব্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। 

গরুর মালিক সুফিয়ান জানান, গরুটির চিকিৎসা চলছে। তবে বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভার প্রাণিসম্পদ দফতর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালের উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) আব্দুল মোতালিব গরুটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই রাণীর মৃত্যুর খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় সাংবাদিকরা শিকড় এগ্রো ফার্মে যান।  ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানায়, গরুটিকে ফার্ম থেকে অন্যত্র নেয়া হয়েছে। ফার্মের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তবে রানীকে কোথায় রাখা হয়েছে সেটাও ফার্ম কর্তৃপক্ষ জানে না বলে জানান। 

শিকড় এগ্রো ফার্মটির নিজস্ব পশুচিকিৎসক আতিকুজ্জামান জুয়েল বলেন, বুধবার ‘রানী’ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তখন থেকেই রানীর চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি না হওয়ায় বৃহস্পতিবার সকালে তাকে সাভারের প্রাণিসম্পদ দফতর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে নেয়া হয়। চিকিৎসা চলাকালে দুপুর ২টার দিকে গরুটি মারা যায়।

উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ) আব্দুল মোতালিব জানান, গরুটির পেট ফোলা ছিল। আমাদের ভেটেরিনারি সার্জনসহ কয়েকজন মিলে চিকিৎসা দেন। এরপরও ছোট গরুটির কোনো উন্নতি হয়নি। পরে দুপুর ২টার দিকে মারা যায়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে গরুটির মালিক কাজী সুফিয়ান সমকালকে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কয়েকটি গণমাধ্যমে গরুটির মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে।  রানী সকালে অসুস্থ হয়ে পড়ায় স্থানীয় এক চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হয়েছিল। এরপর ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

রাণীকে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে রেকর্ডভুক্ত করতে গত ২ জুলাই রাত ১২টার পর আবেদন জানানো হয়েছে। আবেদনের পর গিনেস বুক কর্তৃপক্ষ একটি রিপ্লাই দিয়ে জানিয়েছে- তাদের নিজস্ব কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। ওই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগামী ৯০ দিনের মধ্যে পরবর্তী কার্যক্রমগুলো শেষ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে তারা।

গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী- এখন পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ছোট গরুটি রয়েছে ভারতের কেরালা রাজ্যে। ৪ বছর বয়সী ওই গরুটি লাল রঙের। যেটির উচ্চতা ২৪ ইঞ্চি (২ ফুট)। আর ওজন ৪০ কেজি। গরুটির নাম ‘মানিকিয়াম’। ভারতের গরুটি ল্যাব্রাডার কুকুরের চেয়েও ছোট। এর মালিক অক্ষয় এনভি নামের এক ব্যক্তি।