বরিশাল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির সঙ্গে সচিবসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা একমত নন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এসব কথা বলেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ রোববার একটা মিটিং ছিল, সেখানে আমি যখন কথা বলছি তখন সব সচিবরা এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা যারা ছিলেন, তারা সবাই এই বিবৃতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এই ল্যাঙ্গুয়েজ হওয়া উচিত ছিল না। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের যারা ছিলেন তারাও একমত হয়েছেন যে, এই ধরনের ভাষা ব্যবহার ভুল হয়েছে।’

বরিশালের ওই ঘটনার বিষয়ে মন্ত্রিসভা থেকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘এটা তো আমরা ক্লোজলি অবজার্ভ করছি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে একটা মিস কমিউনিকেশন থেকে এগুলো শুরু হয়। সেটাই ইন্সট্রাকশন দিয়ে দেওয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ের সবাইকে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও বলে দেওয়া হয়েছে, কেবিনেট থেকেও বলে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা জনপ্রতিনিধি সবাইকে বলা হয়েছে, আপনারা নিয়মিত ইন্টারঅ্যাকশন (মতবিনিময়) করবেন। আমাদের বক্তিগত অভিজ্ঞতা হল, ইন্টারঅ্যাকশন যেখানে কম হয়, সেখানেই এ ধরনের মিস কমিউনিকেশনের বিব্রতকর ঘটনাগুলো ঘটে। এগুলো যাতে না ঘটে, সেজন্য তাদের বলা হয়েছে, আপনারা নিজেরা আগে বসেন। বসে দেখেন কী সমাধান করা যায়। আপনারা সমাধান করতে না পারলে, আইন তো আছেই। আপনারা দেখেন এসব ঘটনা কেন ঘটছে।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বরিশালের ঘটনা আসলে কী, আমরা জানি না। আমরা আগে তাদেরকেই দায়িত্ব দিয়েছি, নিজেরা বসেন। সব লেভেলেই বলা হয়েছে। কেন সবাইকে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে? কার কোথায় ফল্ট আছে-নিজেরা দেখেন। দেখা যাক, তারা সময় নিয়েছেন, আগে দেখি।”

পাল্টাপাল্টি মামলার পর কয়েক দিন ধরে উত্তেজনার মধ্যে রোববার রাতে ব‌রিশা‌লে বিভাগীয় কমিশনা‌রের আহ্বানে তার বাড়িতে এক সমঝোতা বৈঠকে বসেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ।

রাত ১১টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনার পর বরিশাল মহানগর আওয়ামী লী‌গের সভাপ‌তি এ কে এম জাহা‌ঙ্গীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘সমঝোতা বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ১৮ আগস্ট বুধবার রাত ১০টায় সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের পক্ষে ১৫ আগস্ট উপলক্ষে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণ করতে যান সিটি করপোরেশনের কর্মী পরিচয়ে একদল যুবলীগ-ছাত্রলীগ নেতা। এ সময় অনুমতি ছাড়া সরকারি দপ্তরে প্রবেশে বাধা দেন কর্তব্যরত আনসার সদস্যরা। এক পর্যায়ে বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মুনিবুর রহমান সেখানে উপস্থিত হলে তার সঙ্গে তর্কে জড়ান যুবলীগ ছাত্রলীগের কর্মীরা। এক পর্যায়ে তারা ইউএনওর বাসভবনে ঢুকে হামলার চেষ্টা চালালে আনসরার সদস্যরা গুলি করেন। এ নিয়ে রাত ২টা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। 

এ ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলাতেই এক নম্বর আসামি করা হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে।

পরে ২০ আগস্ট এ হামলার ঘটনায় সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তারের দাবি জানায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। 

এদিকে ২১ আগস্ট বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান পরিচ্ছন্নকর্মীরা। দাবি মানা না হলে তারা নগরীর ময়লা-আবর্জনা (বর্জ্য) পরিষ্কার করবেন না বলে হুমকিও দেন।

আর এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনও করেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, সংঘর্ষের এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। বিচারে দোষী হলে প্রয়োজনে দলীয় পদ ছেড়ে দেব। কিন্তু দলের ক্ষতি হতে দেব না।

তবে ২২ আগস্ট এ ঘটনায় সদরের ইউএনও মো. মুনিবুর রহমানের বিরুদ্ধে দুটি মামলা এবং কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন সিটি করপোরেশন কর্মকর্তা বাবুল হালদার।

এরপর রোববার রাতে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদলের আহ্বানে তার সরকারি বাসভবনে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

এবার এ ঘটনায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতির সঙ্গে সচিবসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা একমত নন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।