বহুল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় অবশেষে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। সোমবার প্রথম দিন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন মামলার বাদী ও নিহতের বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। তিনি বলেন, কক্সবাজার টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের নির্দেশে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে সিনহা নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন। এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত। তিনি আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চান।

মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি ফরিদুল আলম, অতিরিক্ত পিপি মোজাফফর আহমদ, এপিপি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন আহমদ বাদী শারমিনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। পরে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা তাকে জেরা করেন। মঙ্গলবারও বাদীকে জেরা করা হবে বলে আসামি পক্ষের আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত জানিয়েছেন।


আদালতের সমন পেয়ে বাদী শারমিন, নিহত সিনহার সঙ্গী শাহেদুল ইসলাম সিপাতসহ পাঁচ সাক্ষী সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সোমবার সকালে আদালতে হাজির হন। তবে এ দিন শুধু শারমিনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। পরে আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের শারমিন বলেন, 'আমি আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি, চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত ১৫ আসামির যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয়।'

আসামি প্রদীপ কুমার ও লিয়াকত আলীর আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলায় অভিযোগ গঠন হলেও আমরা এখনও এর নকল কপি পাইনি। অভিযোগে কী বলা হয়েছে, তা না জেনে সাক্ষীদের জেরা করা সঠিক হবে না বলে আদালতকে জানিয়েছি। আদালত মঙ্গলবার সাক্ষীদের জেরা করার পরামর্শ দিয়েছেন।

বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর দাবি করেন, মামলার স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে আসামি পক্ষ। তিনি বলেন, আসামি পক্ষ ১১টি দরখাস্ত দিয়েছে। সবগুলোর সারবস্তু হলো মূল আসামির মামলা স্থগিত করা। মামলার এক নম্বর সাক্ষী বাদীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। জেরা চলছে।

সাক্ষ্য গ্রহণকালে সব আসামি আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন। এর আগে কড়া নিরাপত্তায় কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। মঙ্গল ও বুধবারও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল গত ২৭ জুন মামলার চার্জ গঠন করে সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেন। গত ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে তা পিছিয়ে যায়। এ মামলায় ৮৩ জন সাক্ষী রয়েছেন।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ কর্মকর্তা লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা। পরে তার বোন শারমিন বাদী হয়ে ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। আদালত থেকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় র‌্যাবকে। চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ডিসেম্বরে অভিযোগপত্র দাখিল করেন র‌্যাব-১৫-এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। এতে ১৫ জনকে আসামি করা হয়। অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি 'পরিকল্পিত ঘটনা' হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।