মসজিদ, মন্দির, গির্জাসহ সব ধরনের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং কবরস্থান ও শ্মশান বাঁধাই করতে সরকারের অনুমতি অবশ্যই নিতে হবে। এমন বিধান রেখে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের একটি খসড়া নীতিমালা সংসদীয় কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ব্যক্তি উদ্যোগে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান-শ্মশান তৈরিতেও সরকারের অনুমতি নিতে হবে এবং উদ্যোক্তার আয়ের উৎসও জানাতে হবে।

গতকাল রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এই খসড়া নীতিমালা উপস্থাপন করা হয়। কমিটির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, শাহে আলম, ছানোয়ার হোসেন এবং আব্দুস সালাম মুর্শেদী অংশ নেন।

সংসদীয় কমিটির এ-সংক্রান্ত সুপারিশের আলোকে এমন বিধান করে নীতিমালা চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। গতকালের বৈঠকে খসড়া নীতিমালায় ৯ দফা প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।

খসড়া নীতিমালায় প্রতিযোগিতামূলকভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান/শ্মশান স্থাপন না করার এবং স্থাপনা তৈরিতে সংশ্নিষ্ট কমিটির অনুমতি নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে, খাসজমিতে এসব স্থাপনা তৈরি না করতে; এবং প্রস্তাবিত ইউনিয়ন পরিষদের মাস্টারপ্ল্যান তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর নির্মাণের আগে ইউনিয়ন পরিষদকে জানাতে।

এর আগে সংসদীয় কমিটির ২৫ মার্চের বৈঠকে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণে এবং কবরস্থান/শ্মশান স্থাপনে সরকারের অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা এবং মাস্টারপ্ল্যান তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘর নির্মাণে ইউনিয়ন পরিষদকে অবহিত করার সুপারিশ করা হয়। অবশ্য সংসদীয় কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি না হওয়া পর্যন্ত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর তৈরি করতে হলে সংশ্নিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদকে জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে দেশের সব জেলা প্রশাসককে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপনে শৃঙ্খলা আনতে এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করতে কমিটি নীতিমালার কথা বলেছে। এজন্য যদি আইন সংশোধনের দরকার হয়, সেটাও করতে বলা হয়েছে কমিটির পক্ষ থেকে।

খসড়া নীতিমালার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ করতে সংশ্নিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র/সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরের কাছে আবেদন করতে হবে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাকা/স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ করতে অভিজ্ঞ প্রকৌশলীর তৈরি করা প্ল্যান ও ডিজাইন আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। ইউপি চেয়ারম্যান সেটা যৌক্তিক মনে করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠাবেন। ওই আবেদন উপজেলা সমন্বয় সভায় অনুমোদন দেওয়া হবে। পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণে পৃথক কমিটি থাকবে। কমিটির সদস্য হবে- ইউনিয়নের ক্ষেত্রে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপদেষ্টা, নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতিসহ আটজন; পৌরসভার ক্ষেত্রে মেয়র সভাপতিসহ ১০ জন; সিটি করপোরেশনের ক্ষেত্রে সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর সভাপতিসহ সাতজন। প্রতিটি কমিটির কার্যপরিধিও প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সরকারি বা খাস জমিতে এবং পরিত্যক্ত/অর্পিত সম্পত্তিতে কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনা এবং কবরস্থান কিংবা শ্মশান নির্মাণ করা যাবে না। অনুমোদনহীন স্থাপনা উচ্ছেদ করার পাশাপাশি নির্মাতাকে জবর-দখলকারী হিসেবে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। ভবিষ্যতে রাস্তা প্রশস্ত হতে পারে, এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এসব স্থাপনা রাস্তা থেকে যৌক্তিক দূরত্বে নির্মাণ করতে হবে।

কোনো জমি ওয়াকফ, দান, কেনা বা আইন অনুযায়ী যথাযথ কর্তৃপক্ষ থেকে বরাদ্দ পেলে সেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান/শ্মশান নির্মাণ করা যাবে। তবে আদালতে মামলা থাকলে নির্মাণ করা যাবে না।

সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব জমিতে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও কবরস্থান নির্মাণ করতে চাইলে সংশ্নিষ্ট কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কমপক্ষে দুই কিলোমিটার বা যৌক্তিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ঈদগাহ উন্মুক্ত স্থানে থাকবে এবং বছরের অন্য সময় ধর্মীয় ও সামাজিক কাজে ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে।

খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এলাকার জনসংখ্যা ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা নির্মাণ করতে হবে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে। প্রতিযোগিতামূলকভাবে এসব করা যাবে না। ব্যক্তিগতভাবে এসব করতে গেলে ব্যক্তিকে আয়ের উৎস জানাতে হবে। উদ্যোক্তা আয়কর দেন কিনা, তাও বিবেচনায় আনতে হবে। মসজিদ নির্মাণে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের 'মসজিদ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা-২০০৬' যথাযথ অনুসরণ করতে হবে।

এ বিষয়ে কমিটির সদস্য ও বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বলেন, মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি কমিটি করে দিয়েছে। কমিটি নীতিমালা চূড়ান্ত করতে বলেছে। নীতিমালা করার আগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের পরামর্শ এতে যুক্ত করতে বলা হয়েছে।

বৈঠক শেষে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- কমিটি প্রতিটি ইউনিয়নে পরিষদের নিয়ন্ত্রণে একটি করে কবরস্থান স্থাপনের জন্য নীতিমালা তৈরির সুপারিশ করেছে।