দেশে বিভিন্ন সময়ে গুম ও নিখোঁজদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের একটাই আকুতি বাবা, সন্তান কিংবা ভাইকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে খুন, গুম ও অপহৃত হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়।

তিতুমীর কলেজের ফাইন্যান্স বিভাগের ছাত্র আবদুল কাদের মাসুমের মা আয়েশা আলী বলেন, আমার ছেলে নিখোঁজ হওয়ার আট বছর পেরিয়ে গেছে। এখনও প্রতীক্ষায় আছি। একমাত্র ছেলে ফিরে আসবে সেই আশা তার এখনও।

২০১৩ সালের ৪ ডিসেম্বর ঢাকার শাহীনবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ সাজেদুল ইসলামের মেয়ে হাফসা ইসলাম বলেন, আমি আট বছর ধরে এখানে দাঁড়িয়ে একই কথা বলছি। আমি আমার বাবাকে ফেরত চাই। আমি গতবছর বলেছিলাম, আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে না পারলে আমাকেও গুম করে দিন। আমি আজও একই কথা বলছি। আমি এখানে আর আসতে চাই না। আমি শুধু আমার বাবাকে ফিরে পেতে চাই।

মিরপুর এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী ইসমাইল হোসেন বাতেন নিখোঁজ হন ২০১৯ সালের জুনে। তার মেয়ে আনিসা ইসলাম বলেন, বাবাকে ফিরে পেতে আর কতবছর লাগবে জানি না। আদৌ ফিরে পাব কি-না, সেটাও বলতে পারছি না। বাবা বেঁচে আছেন কি-না, এটাও আমরা বলতে পারছি না। বাবা যখন নিখোঁজ হন, আমার ছোটভাই মো. ইনামের বয়স তখন মাত্র আড়াই বছর। এখন তার বয়স পাঁচ বছর ছুঁইছুঁই। সে আমাকে যখন প্রশ্ন করে বাবা কোথায়, আমি নির্বাক হয়ে যাই। চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। আমি তাকিয়ে থাকি। আমার খুব কষ্ট হয়। আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রথমে ‘মায়ের ডাক’ পরিবারের সব সদস্য এবং গুম-খুন হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যদের কাছে নিজের অপারগতার কথা স্বীকার করেন এবং দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চান।

তিনি বলেন, নিজেকে আমার অপরাধী মনে হয়। লজ্জা পাই। কারণ এ দেশের জন্য আমারও অবদান আছে। আমরা গুম-খুনের জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করিনি।

গুম-খুনের তথ্য উদঘাটনের জন্য প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের প্রধান বিচারপতির নৈতিক দায়িত্ব বিবেকের কর্তব্য- প্রধানমন্ত্রীকে এজলাসে দাঁড় করিয়ে সর্বসম্মুখে জিজ্ঞাসা করা, এসব (গুম হওয়া) ব্যক্তির তথ্য। প্রধান বিচারপতি যদি সেটা না করতে পারেন, তবে তার কোনো অধিকার নেই এত গুরুত্বপূর্ণ আসনে বসার।

জাফরুল্লাহ বলেন, আজকে এ জিনিসের (গুম) অবসান প্রয়োজন। সেজন্য প্রাক্তন বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ, এটিএম আফজাল, এমনকি ফজলুল করিমও হতে পারেন, এর সঙ্গে আমাদের অধ্যাপক আসিফ নজরুলকে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করে এটা পরিষ্কার করা হোক। জাতিকে পরিষ্কার করে বলুক এ ঘটনার আর পুনরাবৃত্তি হবে না। আমি সবসময় প্রধানমন্ত্রীর মঙ্গল কামনাই করি। তার পিতার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের লোকজন কাঁদেনি। কিন্তু অজান্তে আমি কেঁদেছিলাম। তাই শেখ হাসিনার কাছে এ জাতীয় ঘটনা প্রত্যাশা করি না।