বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নতুন চাকরি প্রবিধানমালায় কৃষিবিদের পদে অন্য বিভাগের কর্মকর্তাদেরও পদোন্নতির সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে চরম হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে পাউবোতে কর্মরত কৃষিবিদদের মধ্যে। 

জানা গেছে, ১৯৫৬ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের যাত্রা শুরুর প্রথম থেকেই এ প্রতিষ্ঠানে সেচ ও নিস্কাশন প্রকল্পে কৃষিবিদরা কাজ করে আসছেন। তাদের এই বিভাগটি সম্প্রসারণ বিভাগ নামে প্রকল্পগুলোতে বহুল পরিচিত।

২০১৩ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাকরি প্রবিধানমালা অনুমোদন হয়। ওই প্রবিধানমালায় কৃষিবিদদের সর্বোচ্চ পদোন্নতিযোগ্য 'প্রধান পানি ব্যবস্থাপনা' পদে পাউবোতে কর্মরত সমাজবিজ্ঞান, বন ও পরিবেশ, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, মৎস্য এবং গবেষণা কর্মকর্তা (কৃষি) ইত্যাদি পদের কর্মকর্তারাও পদোন্নতি পাবেন।

তবে এ বিষয়ে কৃষিবিদদের কয়েকজন অভিযোগ করেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে অনেকে এখানে কৃষিবিদ হিসেবে চাকরি করছেন। অন্য বিষয়ে পড়ে এসে কেউ তো কৃষিবিদ হতে পারে না।

পাউবোতে কর্মরত কৃষিবিদদের অভিযোগ, ওই কর্মকর্তারা সংশ্নিষ্ট সবাইকে তদবিরের মাধ্যমে সন্তুষ্ট করে কাজ হাসিল করে নিয়েছেন। কারিগরি বিষয়ের পদ অন্য কোনো বিষয়ের চাকরিজীবীরা পেতে পারে এমন নজির নেই। এদিকে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারির পর কৃষিবিদরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে লেখালেখি ও ধরনা দিয়েছেন। কিন্তু এতে কোনো সুরাহা হয়নি। তাদের সমস্যা কেউ আমলে নেয়নি। বরং বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। তাদের অভিযোগ, এটা কৃষিবিদদের সঙ্গে প্রতারণা ও অন্যায় করা হচ্ছে। তারা এর প্রতিকার দাবি করেন।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডে নিউ সেটআপ অনুমোদন হয়েছে। এতে কৃষিবিদদের পদের নামের পরিবর্তন হয়েছে। সেটআপ অনুযায়ী চাকরির প্রবিধানমালা অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন। নতুন প্রবিধানমালা খসড়া প্রণয়ন কমিটিতে কৃষিবিদদের পক্ষে 'পানি ব্যবস্থাপনা' ক্যাডারে পানি ব্যবস্থাপনা কাজে জড়িত সম্প্রসারণ উপদর্শক (কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট), সহকারী সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ক.ডে.), সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ক.ডে.), উপ-প্রধান সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ক.ডে.), মুখ্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা (ক.ডে.) ও প্রধান পানি ব্যবস্থাপনা (ক.ডে.) পদগুলো রেখে একটি প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এ ছাড়া সমাজবিজ্ঞান, বন ও পরিবেশ, মৃত্তিকাবিজ্ঞান ও গবেষণা কর্মকর্তাসহ (কৃষি) সংশ্নিষ্ট উচ্চ পদগুলো পানি ব্যবস্থাপনা ক্যাডারের কাজের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট না হওয়ায় তাদের আলাদা ক্যাডারে সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু ওই কর্মকর্তাদের তদবিরে প্রবিধানমালা প্রণয়ন কমিটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্নিষ্ট ব্যক্তিরা সন্তুষ্ট হয়ে প্রধান পানি ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব আমলে না নিয়ে ২০১৩ সালে অনুমোদন হওয়া প্রবিধানমালার মতো পানি ব্যবস্থাপনা ক্যাডারে ওই পদধারীদের একীভূত ও প্রধান পানি ব্যবস্থাপনা পদে তাদের পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য করে খসড়া প্রস্তাব পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। কৃষিবিদদের দাবি এ প্রস্তাব অনুমোদন হলে তারা অধিকার বঞ্চিত হবেন।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, সরকারি বিধিমালা মেনেই পদোন্নতি কিংবা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এখানে কারও ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছায় কিছু হচ্ছে না।