ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রী (ইভালির চেয়ারম্যান) শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় মোহাম্মদপুরে তাদের বাসার সামনে বিক্ষোভ শুরু করেছেন গ্রাহকরা। তারা প্রতিষ্ঠানটি থেকে পাওনা টাকা আদায়ে মোহাম্মদপুরের নিলয় কমপ্রিহেনসিভ হোল্ডিংয়ের বাসার সামনে (হাউজ ৫/৫এ, স্যার সৈয়দ রোড) বিক্ষোভ করতে থাকেন। 

ইভ্যালির সিইও রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন গ্রেপ্তার

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে র‍্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) মোহাম্মদপুরে তাদের বাসায় সামনে অভিযান শুরু করলে বাড়ির সামনে ভিড় করতে শুরু করেন গ্রাহকরা। পণ্যের জন্য অগ্রিম যে টাকা দিয়েছেন তা কীভাবে পাবেন তা জানতে চান। গ্রাহকদের বিক্ষোভ বিকাল পৌনে ৬টা পর্যন্ত চলছে। 

রাসেল ও তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিকালে ব্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়। এ সময় বাড়ির গেট দিয়ে কাউকে ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ওই সময় বাড়ির সামনে অবস্থান করতে দেখা যায় র‍্যাব সদস্যদের।  মোহাম্মদ রাসেল ও তার স্ত্রীকে বাসা থেকে বের হতে র‍্যাব সদস্যদের বাধা দেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। 

ইভ্যালির রাসেল ও শামীমার বিরুদ্ধে প্রতারণা মামলা

মোহাম্মদ রাসেলের বাসায় অভিযানের খবর পেয়ে বেশ কয়েকজন গ্রাহক বাসার সামনে চলে যান। গ্রাহকদের কেউ কেউ বলছেন, রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হলে তারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্ণধারদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠান দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত কেউই তাদের অর্থ ফেরত পাননি। 

রেদোয়ান নামে একজন গ্রাহক বলেন, ইভ্যালির রাসেলকে যথাযথ নজরদারির মধ্যে রেখে আরও কিছুদিন সময় দেয়া উচিত। একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে তাকে গ্রাহকদের টাকা ফেরত বা পণ্য দিতে বাধ্য করা যেতে পারে। তাকে ধরে নিয়ে গেলে গ্রাহকরা পণ্য বা টাকা কিছুই পাবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, দুইটি মোটরসাইকেল কেনার জন্য এক লাখ ১২ হাজার টাকা ইভ্যালিকে দিয়েছিলাম। তারা আমাকে তিন লাখ ৪৮ হাজার টাকার একটি চেক দেয়। চেকের মেয়াদ আছে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত।  কিন্তু রাসেল গ্রেপ্তার হওয়ায় পাওনা টাকা আদায় নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছি। 

প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও সিইও মোহাম্মদ রাসেলের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় প্রতারণা মামলা দায়ের করেছেন এক গ্রাহক। পুলিশ জানায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বগ্রাম এলাকার বাসিন্দা মো. আরিফ বাকের এই মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ইভ্যালি এমডি মোহাম্মদ রাসেলকে এক নম্বর আসামি ও চেয়ারম্যান শামীমাকে দুই নম্বর আসামি করা হয়েছে। এই মামলায় ইভ্যালির আরও বেশকজন কর্মকর্তাকে ‘অজ্ঞাতনামা’ দেখিয়ে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে আরিফ বাকের উল্লেখ করেছেন, ইভ্যালির অনলাইন প্লাটফর্মে ৩ লাখ ১০ হাজার ৫৯৭ টাকার পণ্য অর্ডার করেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা পাননি তিনি। নিরুপায় হয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেন তিনি।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের 

লিখিত অভিযোগে বলা হয়, গত ২৯ মে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির চমকপ্রদ বিজ্ঞাপনে আকৃষ্ট হয়ে অভিযোগকারী আরিফ বাকের ও তার বন্ধুরা চলতি বছরের মে ও জুন মাসে কিছু পণ্য অর্ডার করেন। পণ্যের অর্ডার বাবদ সব মূল্য বিকাশ, নগদ ও সিটি ব্যাংকের কার্ডের মাধ্যমে সম্পূর্ন পরিশোধ করেন তারা। 

পণ্যগুলো ৭ থেকে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে ডেলিভারি ও নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠান সমপরিমাণ টাকা ফেরত দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ওই সময়সীমার মধ্যে পণ্যগুলো ডেলিভারি না পাওয়ায় বহুবার ইভ্যালির কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধিকে ফোন করা হয়। সর্বশেষ গত ৫ সেপ্টেম্বর যোগাযোগ করে অর্ডার করা পণ্যগুলো পাওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন আরিফরা।