জাপানি শিশুদের নিয়ে বাবা-মায়ের মধ্যে সৌহাদ্যপূর্ণ সমঝোতা করতে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের দায়িত্ব দিয়েছেন হাইকোর্ট। সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিষ্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। উভয় পক্ষ বসলে সমঝোতায় আসবে বলে আশা করেন আদালত।

এর আগে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ্য আদালত বলেন, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলে এর ভুক্তভোগী হয় বাচ্চারা। দুজন (শিশুদের মা-বাবা) বাংলাদেশের নাগরিক হলে একরকম চিন্তা করা যেত। একজন বিদেশি নাগরিক (মা) এবং একজন বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক (বাবা)। সব মিলিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান করতে পারলে সবার জন্যই ভালো হবে। আমরা চাই, বাইরের দেশের কোনো নাগরিকের মনে যাতে নেতিবাচক ধারণা না হয়। শিশুদের নিয়ে সৌহাদ্যপুর্ণ সুন্দর সমাধান হলে তাদের ভবিষ্যতও ভাল হয়, দেশের ভাবমুর্তিও উজ্জ্বল হয়।

পরে আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মামলা মুলতবি রাখেন আদালত। এ সময় পর্যন্ত গুলশানের বাসায় পালা করে একদিন করে মা এবং একদিন করে বাবা শিশুদের সঙ্গে থাকবেন বলে আদালত উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেন। আদালত বলেন, দুই শিশু ওই বাসাতেই থাকবে। ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল আটটায় মা যাবেন এবং ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল আটটায় বের হয়ে আসবেন। একই দিন সকাল আটটায় শিশুদের বাবা যাবেন, পরদিন সকাল আটটায় বের হয়ে আসবেন। এভাবে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন। শিশুদের মা জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো এবং বাবা ইমরান শরীফ বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।

দুই শিশুর অভিভাবকত্ব চেয়ে মা নাকানো এরিকো গত আগস্ট মাসে রিট আবেদন করেন। গত ১৮ আগস্ট এক আদেশে হাই কোর্ট দুই শিশুকে হাজির করতে বলেন। এর পর কয়েক দফা শুনানি হলো।

আদালতে শিশুদের বাবার পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ ও ব্যারিস্টার মোস্তাফিজুর রহমান খান। মায়ের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

এর আগে গত ৩১ আগস্ট হাইকোর্ট আদেশ দেন, বাবা-মাসহ রাজধানীর গুলশানের চার কক্ষবিশিষ্ট একটি বাসায় থাকবে জাপানি দুই শিশু জেসমিন মালিকা ও লাইলা লিনা। সেখানে তারা আপাতত ১৫ দিন থাকবে। ফ্ল্যাটের ভাড়া উভয়পক্ষ বহন করবে। সমাজসেবা অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা তাদের তত্ত্বাবধান করবেন। প্রয়োজনে এ কর্মকর্তা ওই ফ্ল্যাটে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। গুলশানের বাসায় থাকাকালে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) বলা হয়। ওই দিন এ মামলার পরবর্তী আদেশের জন্য ১৬ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করা হয়।