লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হওয়ার পরও সেই প্রার্থীকে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে। আবার মৌখিক পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন এক প্রার্থী। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ১০৮টি পদে নিয়োগে এমন ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীদের দাবি, মোটা অঙ্কের অর্থের লেনদেনে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অকৃতকার্যদের। তাই নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন তারা। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
১৮ ক্যাটাগরির ১০৮টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর মতিঝিলের একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ৩০ আগস্ট জুনিয়র সহকারী পরিচালক ক্যাটাগরির ১১টি পদে পরীক্ষা দেওয়া পাঁচ হাজার একজন পরীক্ষার্থীর লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দেওয়া হয়। এরপর ৪, ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর পর্যায়ক্রমে তাদের সবার মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সিপিপির চূড়ান্ত ফলাফলে জুনিয়র সহকারী পরিচালক পদে অনেকের সঙ্গে উত্তীর্ণ হন সাবাহ বিন হোসাইন। একইভাবে সহকারী কাম রেডিও অপারেটর পদে নিয়োগের সুপারিশ পান মো. সুমন। অনুসান্ধানে জানা গেছে, এ দু'জন লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেননি। তারপরও তারা নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছেন।
শুধু তাই নয়, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করার পরও নতুন করে আরও দু'জনের নাম যুক্ত করে আবার ফলাফল প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া সিপিপির কর্মকর্তার সন্তানের নামও একই কায়দায় ঢোকানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সিপিপির পরিচালক (অপারেশন) ও নিয়োগ বোর্ডের সদস্য মো. নুরুল ইসলাম। তার ছেলে মুহাইমিনুল ইসলামও চাকরি পেয়েছেন। অবশ্য এ বিষয়ে নুরুল ইসলাম জানান, তার ছেলে চাকরিতে আবেদন করার পর তিনি নিয়োগ বোর্ডের সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
অভিযোগের বিষয়ে সিপিপির পরিচালক (প্রশাসন) ও জনবল নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব আহমদুল হক বলেন, এ নিয়োগ নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমরা মন্ত্রণালয়ে সব তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছি। ১১৩ জনের মৌখিক পরীক্ষা হলেও ১১২ জনের তালিকা দিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পর যারা এ কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করা হবে।
অভিযোগ ওঠার পর সিপিপির ওয়েবসাইট থেকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকা সরিয়ে ফেলা প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর আগের তালিকা ওয়েবসাইটে রাখার কোনো দরকার নেই। তাই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
পরীক্ষা বাতিল করা হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়োগ নিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি। তবে ত্রুটিগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা চেক করছি, মন্ত্রণালয়ও করছে। দায়ী হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ দিকে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় নিয়োগের পরবর্তী কার্যক্রম স্থগিত করেছে। গঠন করেছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
এক পরীক্ষার্থী বলেন, এরকম প্রহসনমূলক নিয়োগ বাতিল করতে হবে। ১০৮টি পদে দুর্নীতি হয়েছে। এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না হলে অন্য নিয়োগেও দুর্নীতি হতে পারে। নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, কয়েকজনের ক্ষেত্রে দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু সবাই কেন এর শাস্তি পাবেন? যাদের বিষয়ে অভিযোগ শুধু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
এ বিষয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহ মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এ নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য করব না। অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মন্তব্য করব।
অতিরক্তি সচিব রনজিৎ কুমার সেন বলেন, এমন অভিযোগ পাওয়ার পর আমাদের যে কত কষ্ট লাগছে, তা বোঝাতে পারব না। মন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ সবাই এটা নিয়ে কাজ করছেন। আশাকরি খারাপ কিছু পাওয়া যাবে না। তদন্ত চলছে। তদন্ত রিপোর্ট দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরীক্ষা বাতিল করে ফের পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের যদি নিয়োগ দেওয়া হয় বা নিয়োগ দেওয়ার জন্য সুপারিশ করা হয়, তাহলে সেটি সম্পূর্ণ অনৈতিক, অবৈধ এবং একই সঙ্গে সংবিধানের লঙ্ঘন। নীতিমালা লঙ্ঘন করে যারা এ কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বিতর্কিত নিয়োগ বাতিল করতে হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স বাস্তবায়নে সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি।

বিষয় : ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি

মন্তব্য করুন