- বাংলাদেশ
- ক্লিনফিড নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী
ক্লিনফিড নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা হয়েছে: তথ্যমন্ত্রী

আইন অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বা ক্লিনফিড বাস্তবায়নের জন্য একটি মহল থেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সোমবার দুপুরে দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্স-অ্যাটকো প্রতিনিধিরা ক্লিনফিড বাস্তবায়নের পদক্ষেপের জন্য তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাতে এলে হাছান মাহমুদ তাদের বৈঠক শেষে একথা বলেন।
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মকবুল হোসেন এসময় উপস্থিত ছিলেন।
অ্যাটকো সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু, ডিবিসি২৪ চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সময় টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ জোবায়ের, দীপ্ত টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী জাহিদুল হাসান, দেশ টেলিভিশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান, ডিবিসি ২৪ চ্যানেলের প্রধান সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম বৈঠকে যোগ দেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আইন অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বা ক্লিনফিড বাস্তবায়নের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে দুই বছর আগে থেকে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। আগস্ট মাসের বৈঠকে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছিল, যে পয়লা অক্টোবর থেকে আমরা এই আইন কার্যকর করব। কিন্তু এটি নিয়ে একটি মহল থেকে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা হয়েছে। আমি আশা করব, এই বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে তারা বিরত থাকবে। সরকার আইন বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর এবং প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে সাহস না জোগালে আমরা এ কাজগুলো কখনো করতে পারতাম না।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, দেশের গণমাধ্যম শিল্পের সবার স্বার্থে আমরা আইন অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেলের বিজ্ঞাপনমুক্ত সম্প্রচার বা ক্লিনফিড বাস্তবায়নের কাজ করছি। সুতরাং দেশ ও সবার স্বার্থের বিপক্ষে কেউ অবস্থান গ্রহণ করবেন বা তাদের পক্ষে কেউ ওকালতি করবেন এটি কখনও কাম্য নয়।’
‘বাংলাদেশের আকাশ উন্মুক্ত, বাংলাদেশে কোনো চ্যানেল সরকারের পক্ষ থেকে বন্ধ করা হয়নি, বন্ধ করতেও বলা হয়নি’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের দেশের চ্যানেলগুলো ভালো অনুষ্ঠান প্রচার করতে পারে এবং অনেকেই করে। যে সমস্ত বিদেশি চ্যানেল আমাদের আইনকে তোয়াক্কা করে না, আমাদের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে, আমাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতিকে চোখ রাঙ্গায় সেগুলোর পক্ষে ওকালতি করা সমীচীন নয় বলে আমি মনে করি। অবশ্যই সব চ্যানেলের জন্যই আমাদের দ্বার উন্মুক্ত। কিন্তু আইন মেনে দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করে সেই চ্যানেল সম্প্রচার হতে হবে।’
বিদেশি চ্যানেলের পরিবেশক ও ক্যাবল অপারেটরদের উদ্দেশে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যে সমস্ত বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে ক্লিনফিড দেয়, আকাশ ডিটিএইচ এগুলো চালাচ্ছে। অন্যরাও যদি এগুলো না চালায় তাহলে লাইসেন্সের শর্তভঙ্গ হবে। সুতরাং শর্ত ভঙ্গের কাজ কেউ করবেন না। ‘
সম্প্রচারমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিদেশি চ্যানেলগুলো পাকিস্তানে, নেপালে, শ্রীলংকায় ক্লিনফিড পাঠায়। আর ক্লিনফিড পাঠানোর জন্য যে বড় রকমের বিনিয়োগ ও কারিগরি সুবিধা লাগে এসব কথামালা বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টারই অংশ। এখন ডিজিটাল প্রযুক্তিতে এগুলো সহজেই করা সম্ভব এবং সেটি সংশ্লিষ্ট চ্যানেল করতে পারে। এই দায়িত্ব প্রথমত সংশ্লিষ্ট চ্যানেলের, দ্বিতীয়ত যারা সেই চ্যানেল ডাউলিংক করার অনুমতি নিয়েছেন, তাদের। তারা ব্যবসা করার স্বার্থেই এই সমস্ত চ্যানেল ডাউনলিংক করার জন্য অনুমতি নিয়েছেন এবং লাইসেন্স দেয়ার সময় ক্লিনফিডের শর্তের কথা বলা আছে। ক্যাবল অপারেটরেরাও সেই শর্তের কথা মেনেই তারা লাইসেন্স নিয়েছেন। এমন নয় যে, তারা ছাড়া আর বাংলাদেশে কেউ ক্যাবল অপারেটরের লাইসেন্স চায় না।’
তথ্য মন্ত্রণালয়ে বহু ক্যাবল অপারেটরের লাইসেন্সের দরখাস্ত জমা পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। সুতরাং আইন ভঙ্গ করলে, শর্তভঙ্গ করলে বা বিভ্রান্তি ছড়ালে আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সভায় মন্ত্রী জানান, ক্যাবল অপারেটরদের পাশাপাশি সবপক্ষকে নিয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী ১ নভেম্বর থেকে ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ক্যাবল অপারেটিং সিস্টেমকে ডিজিটালাইজ করা হবে।
বৈঠকে অ্যাটকোর সভাপতি অঞ্জন চৌধুরী বলেন, ‘ক্লিনফিডের বিষয়টি আমাদের প্রাণের দাবি। ২০০৬ সালে বাস্তবায়নের জন্য আইন করা হলেও সেটি বাস্তবায়ন করা যায়নি। সবাইকে চিন্তা করতে হবে দেশের জন্য ভালো কোনটি। সারা পৃথিবীতে ক্লিনফিডের বিষয়টি রয়েছে। এর ফলে প্রচুর অর্থ দেশ থেকে চলে গেছে। এখন শুধু টেলিভিশন মালিকরা লাভবান হবে না, পুরো দেশ লাভবান হবে।’
এর আগে ডিবিসি২৪ চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ‘ক্যাবল অপারেটরদের ওপর নির্দেশ ছিলো যে সব চ্যানেলের ক্লিনফিড আছে, সেগুলো চলবে। কিন্তু সব চ্যানেল বন্ধ করে দিয়ে তারা বিদেশের কাছে ভুল বার্তা দিয়েছে।’
অ্যাটকোর সিনিয়র সহ-সভাপতি মোজাম্মেল হক বাবু বলেন, ‘টিআরপির ক্ষেত্রে নৈরাজ্য চলছিল। কোনো অনুমতি ছাড়া একটি প্রতিষ্ঠান টিআরপি করছিল। তারা কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে সুবিধা দিত। এটি বন্ধ করার গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্যও তথ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’
মন্তব্য করুন