- বাংলাদেশ
- অনলাইন পরীক্ষা বর্জন করলেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা
অনলাইন পরীক্ষা বর্জন করলেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা অনলাইনে নেওয়া টার্ম ফাইনাল পরীক্ষা বর্জন করেছেন। সোমবার পূর্বঘোষিত তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষায় অংশ নেননি শিক্ষার্থীরা। একইভাবে মঙ্গলবারের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায়ও অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এর আগে গত রোববার দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায়ও অংশ নেননি শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, নির্দিষ্ট সময়ে ল্যাব কার্যক্রম শেষ না করা, রিভিশন ক্লাস ঠিকমতো না নেওয়া ও ঠিক সময়ে শেষ না করা এবং সিলেবাস বাকি রেখে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধান ও পরীক্ষার জন্য বাস্তবসম্মত নীতিমালা ছাড়া পরীক্ষায় অংশ নেবেন না তারা। আবাসিক হলে থেকে স্বশরীরে পরীক্ষা দিতে আগ্রহী তারা।
গত ২২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত অনলাইনে চূড়ান্ত পরীক্ষার নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পরীক্ষা শুরুর পাঁচ মিনিট আগে জুম ক্লাস লিংকে যুক্ত হতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ে যোগদানে ব্যর্থ বলে তিনি পরীক্ষায় অনুপস্থিত বলে গণ্য হবেন। পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষার্থীদের নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিকল্প ইন্টারনেটের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কোনো শিক্ষার্থী পাঁচ মিনিটের বেশি সময় জুম মিটিংয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকলে তাকে আবারও যোগদান করতে হলে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। এছাড়া পরীক্ষার্থীকে টেবিল থেকে বেশ উঁচুতে ভিডিও ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে যাতে পরীক্ষার্থী ও পরীক্ষার্থীর খাতা সম্পূর্ণভাবে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীরা জানান, চলতি টার্ম শেষ হওয়ার পরও দুই মাস কোনোরকম শিক্ষা কার্যক্রম বা পরবর্তী করণীয় কী হবে সেই বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা পাননি তারা। পরবর্তীতে একাডেমিক রুটিন দিয়ে এক মাসের কার্যক্রম প্রকাশ করা হয়। একটি টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন ছিল, সেই সময় তাদের দেওয়া হয়নি। এরকম অবস্থায় তাদের কাছে পরীক্ষা বর্জন ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিলো না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টির সুরাহা করবেন বলে আশা করছেন তারা।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, অনেক শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকায় তাদের পক্ষে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ কখনোই সম্ভব নয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দেখানো পদ্ধতিতে ক্যামেরা স্থাপন করতে হলে কমপক্ষে দুইটি ডিভাইসের প্রয়োজন যেটা অধিকাংশ শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব নয়। এসব সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা গত ২৭ সেপ্টেম্বর অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য সকল বিভাগীয় প্রধানের কাছে আবেদন করেন। সে আবেদনের কোনো যথোপযুক্ত উত্তর না পেয়ে তারা পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, 'টানা বৃষ্টির কারণে রোববার রাত ১১টা থেকে এখন পর্যন্ত বিদ্যুত নেই আমার এলাকায়। এরকম বৈদ্যুতিক গোলযোগে প্রশাসনের কঠিন নীতিমালায় পরীক্ষা দেওয়া প্রায় অসম্ভব। যেহেতু অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই হল খুলে পরীক্ষা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, সম্ভব হলে আমরাও এরকম একটি ঘোষণার আশা রাখি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছ থেকে।'
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে চুয়েটে উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম সমকালকে বলেন, 'অনলাইন পরীক্ষার নির্দেশনা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে কিছু ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। পরীক্ষা চলাকালে কেউ পাঁচ মিনিটের বেশি ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকলে ওই শিক্ষার্থীর সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা বাতিল হয়ে যাবে বিষয়টি এমন না। কেউ এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে ওই শিক্ষার্থী পরীক্ষা পর্যবেক্ষক, বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা সবসময় চাই আমাদের শিক্ষার্থীরা নিরাপদে থাকুক। তাই তাদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এবং একাডেমিক ক্যালেন্ডার এগিয়ে নেওয়ার জন্য আপাতত অনলাইন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ব্যাচগুলোকে ক্যাম্পাসে আনার চেষ্টা করব। সেক্ষেত্রে সিনিয়র ব্যাচকে প্রথমে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।'
মন্তব্য করুন