ফুলটি প্রায় দুই দশক আগে ঢাকায় একটি বাগানে দেখেছি। প্রকৃতিতে তখন শরতের আবহ। গাঢ়-গোলাপি রঙের ফুলগুলোর পাপড়ি দেখতে অনেকটা পাখির পালকের মতো। দূর থেকে বাগানবিলাসও মনে হতে পারে। বর্ণবৈচিত্র্য তৈরির জন্য অনেকেই ব্যক্তিগত সংগ্রহে রেখেছেন। শোভাবর্ধনের জন্য ধীরে ধীরে সংগ্রহের পরিমাণ আরও বাড়ছে। ফুলটি আমাদের দেশি না হলেও এরই মধ্যে পুষ্পপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে। সেদিন ফুলটি বেশ চেনা মনে হলেও সঠিক শনাক্তের জন্য অধ্যাপক দ্বিজেন শর্মার শরণাপন্ন হয়েছিলাম। তিনি জানালেন, গাছটির বৈজ্ঞানিক নাম  Justicia brandegeeana (Syn. Beloperone guttata).. প্রচলিত কোনো বাংলা নাম নেই।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হার্বারিয়ামের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সরদার নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, 'এটি আলঙ্কারিক বৃক্ষ হিসেবেই অনেকে ঘরের বারান্দায় কিংবা একচিলতে বাগানে চাষ করছেন। এ গাছ আমাদের দেশে এসেছে অতি সম্প্রতি।' এদের আদি আবাস মেক্সিকো, গুয়েতেমালা ও হন্ডুরাস। ইংরেজি নাম Maxican Shrimp Plant বা Shrimp Plant. অর্থ চিংড়ি গাছ। ফুলের গড়ন চিংড়ি মাছের সঙ্গে কিছুটা সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় সম্ভবত এমন নামকরণ। তবে আমরা চিংড়ি গাছ নামটি গ্রহণ করব কিনা তা বিষয়-বিশেষজ্ঞরা নির্ধারণ করবেন। সারা পৃথিবীতে এদের অনেক আবাদিত জাত দেখা যায়। তাতে বর্ণবৈচিত্র্যও অঢেল।

গুল্ম শ্রেণির গাছ। শাখাগুলো ছড়ানো ধরনের। ৩০ থেকে ৯০ সেমি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। কাণ্ড কাষ্ঠল ও দাগবিশিষ্ট। পাতা ডিম্বাকৃতির, ২ থেকে ৫ সেমি হতে পারে। পত্রবৃন্ত আকস্মিকভাবে ক্রম সূক্ষ্ণ থেকে সরু, গাঢ় সবুজ রঙের, উভয় পিঠই রোমশ, শিরা ৬ থেকে ৭ জোড়া। মঞ্জরিপত্র ডিম্বাকৃতির, প্রায় দেড় সেমি সাদা রোমযুক্ত গোলাপি লাল রঙের। বৃত্যংশ ৫টি, ৬ মিমি লম্বা, নিম্নাংশে যুক্ত, হালকা সবুজাভ-সাদাটে। পুংকেশর ২টি, দেড় সেমি লম্বা, নলাকার ও সাদা, ভেতরের দিকে বিন্দুর মতো রক্তাভ বর্ণের, উপরে ২-খণ্ডিত, নিচে ৩-খণ্ডিত, ভেতর এবং বাইরের পিঠ রোমশ। এদের দলনল, পরাগধানীকোষ দুটি প্রশস্ত যোজনীর মাধ্যমে সংযুক্ত, একটির উচ্চতা অন্যটির চেয়ে বেশি। গর্ভদণ্ড প্রায় আড়াই সেমি লম্বা, অবিভক্ত ও হালকা রোমশ।

জন্মস্থানে ফুল ফোটার প্রধান মৌসুম অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি হলেও আমাদের দেশে বর্ষা থেকে হেমন্ত অবধি বিস্তৃত। এ ফুল পাখি ও প্রজাপতিকে আকৃষ্ট করে। অসংখ্য জাস্টিসিয়া প্রজাতির ফাইটোকেমিক্যাল উপাদানগুলোর ওপর গবেষণা করা হয়েছে, তাতে অ্যান্টিটিউমার, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিডায়াবেটিক উপাদান রয়েছে। বংশবৃদ্ধি কন্দ ও বীজে। সাধারণত টবেই চাষ।