বারবার তাগাদা সত্ত্বেও কর্ণফুলী নদীতীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ না করায় আগামী ১৫ দিনের মধ্যে হাইকোর্টের আদেশ অবমাননার অভিযোগ এনে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার চাইবে চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন। সোমবার দুপুরে চাক্তাই খালের মোহনায় কর্ণফুলীর তীরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়। সংগঠনের সভাপতি ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদের সভাপতিত্বে এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অধ্যাপক মনোজ কুমার দেব।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান, কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন সভাপতি এসএম পেয়ার আলী, সিনিয়র সহসভাপতি জাফর আহমেদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান দয়াল প্রমুখ।

লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, অবৈধ মাছ বাজার ও ভেড়া মার্কেট উচ্ছেদ করার বিষয়ে হাইকোর্টের আদেশ রয়েছে। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ তার তোয়াক্কা না করেই নতুন মাছ বাজার চালু রেখেছে। ১৫ বছরের চুক্তিনামা দিয়ে কর্ণফুলী নদী দখল ও ভরাট করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ হাইকোর্টের আদেশ অমান্য করেছে। ২০১৯ সালের আদেশের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে মাছ বাজার উচ্ছেদ করা বাধ্যতামূলক ছিল। বন্দর কর্তৃপক্ষ তা না করে নতুন করে বরফকল স্থাপনের জন্য কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে শাহআমানত ব্রিজের মাঝপিলার বরাবর দুই হাজার বর্গফুট নদী লিজ দিয়েছে, যা সরাসরি হাইকোর্টের আদেশের লঙ্ঘন।

হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীতে স্থাপিত মাছ বাজার ও বরফকলের চুক্তি বাতিল করতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর বন্দরের চেয়ারম্যানের কাছে ১০ দিনের সময়সীমা দিয়ে আবেদন করা হয়। গত রোববার ছিল তার শেষ দিন। কিন্তু এ বিষয়ে সোমবার পর্যন্তও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। একই তথ্য-উপাত্ত দিয়ে গত ৩ অক্টোবর চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের কাছে ১০ দিনের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে আবেদন করা হয়। তারাও এ পর্যন্ত কিছু জানায়নি।

অধ্যাপক মনোজ কুমার দেব জানান, ফিরিঙ্গি বাজার মোড় থেকে মেরিনার্স পার্ক নতুন মাছ বাজার, ভেড়া মার্কেট থেকে বাকলিয়া চরের মোড় পর্যন্ত ৪৭ ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের দখলে থাকা সহস্রাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গত ২০ ডিসেম্বর উচ্ছেদ নোটিশ দেয় জেলা প্রশাসন। কিন্তু তার পরও রহস্যজনক কারণে অভিযান চালানো হচ্ছে না। ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট হাইকোর্ট কর্ণফুলীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের রায় দেন। পরে প্রতিপক্ষ সুপ্রিম কোর্টে আপিল করায় ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে ৯০ দিনের সময় দিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন, বন্দর কর্তৃপক্ষ, চসিক মেয়র, সিডিএ চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনারকে হাইকোর্ট আদেশ দেন। গত বছরের ৫ থেকে ৯ ফেব্রুয়ারি মাত্র পাঁচ দিন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হলেও পরে বন্ধ হয়ে যায় কার্যক্রম। চলতি বছর লালদিয়া চরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করে বন্দর কর্তৃপক্ষ।