- বাংলাদেশ
- সুযোগ পেলে ‘অনুভূতির’ মামলা করেন ইমরুল
সুযোগ পেলে ‘অনুভূতির’ মামলা করেন ইমরুল

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে গত বছর ২৫ অক্টোবর তিনি মামলা করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিয়া রহমানের বিরুদ্ধে। এরপর গানের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে বাউলশিল্পী রিতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে মামলা করেন চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে। সর্বশেষ তিনি একই ধরনের অভিযোগে মামলা করেছেন দেশের জনপ্রিয় 'মেঘদল' ব্যান্ডের বিরুদ্ধে।
মামলাকারী ব্যক্তির নাম ইমরুল হাসান। পেশায় তিনি আইনজীবী। আগের দুটি মামলা তিনি করেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। আর গত ২৮ অক্টোবর মেঘদলের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৯৫ (ক) এবং ১০৯ ধারায়।
মেঘদল নিয়ে মামলা করার বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট ইমরুল হাসান সমকালকে বলেন, এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না।
তবে ফেসবুকে অ্যাডভোকেট ইমরুল হাসান অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের পেজে মামলা দায়ের সম্পর্কে ভুল বানানে কয়েকটি বাক্য লিখেছেন- ‘সাধারন (সাধারণ) মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানায় গান পরিবেশনকারী দল/মেঘদূত (মেঘদল) বাংলাদেশি ব্যান্ড এর সংশ্নীষ্ট (সংশ্নিষ্ট) গায়কসহ জড়িত সহযোগী সকলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলাম। আসা (আশা) করি কেউ আর এমন দুঃসাহস দেখাবে না।’
পোস্টে মামলার কপিও সংযুক্ত করেছেন ইমরুল।
এতে দেখা যায়, তিনি ইসলামে গানবাজনা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে কিছু হাদিস তুলে ধরেছেন। আবার পাঁচ নম্বর পয়েন্টে লিখেছেন, বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনভাবে গানবাজনা করিবে, ইহা তাহার সাংবিধানিক অধিকার এবং ইহা বাংলাদেশের চলমান আইনেও নিষিদ্ধ নয়।
তিনি মেঘদল ব্যান্ডকে ‘মেঘদূত’ বলেও উল্লেখ করেছেন। আবার ‘সহিংসতাবিরোধী কনসার্ট’কে ‘সহিংসতা কনসার্ট’ উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন- ‘২৬-১১০-২১ইং তারিখে’ মেঘদলের গান শোনেন।
এর আগে গত বছর ২ ডিসেম্বর এই আইনজীবীরই করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে মানিকগঞ্জের শিল্পী রীতা দেওয়ানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি মামলাটি করেছিলেন ইমরুল। পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান রীতা।
গত বছরেরই ২৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্রিমিনোলজি বিভাগের অধ্যাপক জিয়া রহমানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ঢাকা বারের সদস্য ইমরুল।
এতে তিনি অভিযোগ করেন, অধ্যাপক জিয়া টেলিভিশনে এক টক শোতে যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হেনেছে। আদালত মামলাটি গ্রহণ করে পুলিশের সিটিটিসি বিভাগকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাট্যকার মামুনুর রশীদ সমকালকে বলেন, ‘সংগীত হচ্ছে আরাধনার একটি অনুষঙ্গ। এই ভারত উপমহাদেশে বাউল সংগীত সাধক, সুফিবাদই শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা বিশ্ব মানবতার কথা বলেছেন। সংগীতের বিরুদ্ধে আঘাত তাই মানবতার বিরুদ্ধে আঘাত। যারা সংগীতের মর্ম বোঝে না তারাই অনুভূতিতে আঘাতের কথা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায়। সংগীত ও শিল্পীদের বিরুদ্ধে এভাবে আক্রমণ উদ্বেগজনক।’
সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু সমকালকে বলেন, ‘যে গানটির জন্য এই আইনজীবী মামলা করেছেন সে গানটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীতে রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানেও পরিবেশন করা হয়েছিল। এটা চারটি ধর্মের মধ্যে ঐক্য ও মানবতার পক্ষের একটি গান। এই গানে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার মতো কোনো বিষয় নেই। সংগীতচর্চার নিজস্ব একটি ভাষা আছে। বাংলার লোকসংগীত, বাউল গান, পঞ্চকবির গান, নজরুলের গান, রবীন্দ্রনাথের গানের মধ্য দিয়েই শান্তির বাণী উচ্চারিত হয়েছে।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি একের পর এক শিল্পীর বিরুদ্ধে মামলা করছেন, তিনি অন্যায় করছেন এবং শান্তির বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। আমরা তার শাস্তি দাবি করছি।’
মন্তব্য করুন