ঢাকা মহানগরী, শহরতলি ও পাশের তিন জেলায় চলাচল করা ৬ হাজার বাসের মধ্যে মাত্র ১৯৬টি গাড়ি সিএনজিতে চলাচল করছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ। তিনি জানান, সিএনজিতে চলা বাসের সংখ্যা মোট বাসের ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। 

রাজধানীতে ৯৫ শতাংশ বাস সিএনজিতে চলে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এর প্রতিবাদ জানান সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।

তিনি বলেন, সিএনজিচালিত বাসের সংখ্যা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রচার হয়েছে। দূরপাল্লার শতভাগ গাড়ি ডিজেলে চলে। 

তিনি জানান, ঢাকা মহানগরীতে চলা গ্রেট তুরাগ ট্রান্সপোর্টের ৪০টি, অনাবিল সুপার লিমিটেডের ৫টি, প্রভাতী বনশ্রী পরিবহন লিমিটেডের ১২টি, শ্রাবণ ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের ৩০টি, আসিয়ান ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের ২০টি, মেঘালয় ট্রান্সপোর্টের ৫টি, হিমালয় ট্রান্সপোর্টের ১৪টি, ভিআইপি অটোমোবাইলের ২টি, মেঘলা ট্রান্সপোর্টের ২৭টি, শিকড় পরিবহনের ৮টি, বিকল্প অটো সার্ভিসের ১টি, গাবতলী লিংক মিনিবাস সার্ভিসের ১১টি, ৬ নং মতিঝিল বনানী কোচ লিমিটেডের ২১টি বাস সিএনজিতে চলাচল করছে।  

সরকার নির্ধারিত নতুন হারের বেশি ভাড়া নেয়া হলে ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেন এনায়েত উল্লাহ।

তিনি জানান, বুধবার বিকেল ৩টায় সড়ক পরিবহন সমিতির কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে বৈঠক রেখেছেন তারা। মালিক-শ্রমিকদের পক্ষ থেকে ১১টি টিম থাকবে বিআরটিএ ও ডিএমপির মোবাইল কোর্টের সঙ্গে। তারা বাড়তি ভাড়া আদায় ও সব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তাদের পক্ষ থেকে সিএনজিচালিত ও ডিজেলচালিত বাসে স্টিকার যুক্ত করে দেয়া হবে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরই বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলনে নামেন মালিকরা। তাদের আকস্মিক ধর্মঘটের মুখে সরকার বাস ভাড়া বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।

পরে গত রোববার বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ৩৪ এর ২ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার ডিজেলের মূল্য বাড়ানোর কারণে ডিজেল চালিত বাস ও মিনিবাসের সর্বোচ্চ ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করেছে।

আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি যাত্রীকে প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৪২ পয়সার স্থলে এক টাকা ৮০ পয়সা সর্বোচ্চ ভাড়া দিতে হবে।

এছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে প্রতি যাত্রীকে প্রতি কিলোমিটারে যথাক্রমে এক টাকা ৭০ পয়সার স্থলে দুই টাকা ১৫ পয়সা ও এক টাকা ৬০ পয়সার স্থলে দুই টাকা পাঁচ পয়সা ভাড়া দিতে হবে। পাশাপাশি বাস ও মিনিবাসের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ভাড়া যথাক্রমে সাত টাকার স্থলে ১০ টাকা ও পাঁচ টাকার স্থলে আট টাকা করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, ঢাকা টান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) আওতাধীন জেলার (নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ ও ঢাকা জেলা) অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাস উভয় ক্ষেত্রে প্রতি যাত্রীকে প্রতি কিলোমিটারে এক টাকা ৬০ পয়সার স্থলে দুই টাকা পাঁচ পয়সা দিতে হবে।

প্রস্তুতকারক বা বিআরটিএ কর্তৃক অনুমোদিত আসন সংখ্যা কমিয়ে আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য বাস বা মিনিবাসের আসন সংখ্যা পুনর্বিন্যাস করা হলে আনুপাতিকভাবে ভাড়ার হার নির্ধারিত হবে। সেক্ষেত্রে রুট পারমিট অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ/যাত্রী ও পণ্য পরিবহন কমিটি) থেকে আনুপাতিকভাবে ভাড়ার হার অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।

এ ভাড়া বাড়ানো গ্যাস, অকটেন ও পেট্রোলচালিত যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। এছাড়া ভাড়ার এ হার সোমবার থেকে কার্যকর হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এই বাড়তি ভাড়া কার্যকর হয়েছে শুধু ডিজেলচালিত বাসের ক্ষেত্রে। সিএনজিচালিত পরিবহনের ভাড়া আছে আগের মতোই। তবে সিএনজিচালিত বাসেও বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠেছে প্রথম দিনেই।সিএনজিচালিত বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে রাজধানীসহ সারা দেশে চলা বাসের কত শতাংশ ডিজেল ও সিএনজিচালিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।