দেশে করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে দীর্ঘ ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর খুলে দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) আবাসিক হল। বুধবার সকাল ১০টা থেকে সব বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্যে হলগুলো খুলে দেওয়া হয়। যেসব শিক্ষার্থী অন্তত এক ডোজ করোনার টিকা নিয়েছেন তারা টিকা সনদ দেখিয়ে হলে প্রবেশ করেছেন।

সকালে তিতুমীর হল, শেরে বাংলা হল, সোহরাওয়ার্দী হল, ড. এম. এ. রশীদ হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পর খোলায় শিক্ষার্থীদের বরণে হলগুলোতে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। হলগুলোর প্রধান ফটক সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। হলের সামনে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ক বিভিন্ন নির্দেশনা সম্বলিত ব্যানার টানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বরণে হলের প্রাধ্যক্ষ, হাউজ টিউটরসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রবেশপথে অপেক্ষা করছেন। শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করলে তাদের ফুল, চকলেট, স্যানিটাইজার এবং মাস্ক দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। তবে অনলাইনে ক্লাস চলার কারণে হলে শিক্ষার্থীদের সমাগম কম ছিল।

হলে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত তীতুমীর হলের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব বলেন, দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকার কারণে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছিলাম। অনলাইনে ক্লাস করলেও বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়নি। হলে আসার পর উৎসবমুখর পরিবেশে আমাদের বরণ করা হয়েছে এবং সব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। খুবই ভালো লাগছে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের বরণে হলের ব্যবস্থাপনায়ও সন্তোষ প্রকাশ করেন।

হলের আরেক শিক্ষার্থী জাভেদ ওমর বলেন,শিক্ষার্তীদের বরণ করে নিতে হলের ব্যবস্থাপনা সন্তোষজনক। হলের পরিবেশও বসবাসের জন্যে খুবই উপযোগী। সর্বোপরি, সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আমি সন্তুষ্ট।

তীতুমীর হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আবু সায়েম বলেন, প্রায় দুই বছর পর বুয়েট ছাত্রদের জন্যে হল খুলে দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের বরণ করতে হলের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়ার প্রমাণ দেখিয়ে শিক্ষার্থীরা হলে উঠছেন।

তিনি আরও বলেন, হলে ঢোকার সময় শিক্ষার্থীদের ফুল, চকলেট, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মাস্ক দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। হলের প্রবেশপথে হাত ধোয়ার জন্যে বেসিন বসানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা হাত ধুয়ে হলে প্রবেশ করছে।

তিনি বলেন, হলের ডাইনিং, হলরুম, গেস্টরুম, বাথরুমগুলো সংস্কার করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের হলে থাকার জন্যে যেসব চাহিদা রয়েছে, তা সবই পূরণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের কম উপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, আগামী ১৩ তারিখ থেকে দুই সপ্তাহ অনলাইনে ক্লাস হবে। এরপর সশরীরে ক্লাস হবে বুয়েটে। একারণে যেসব শিক্ষার্থীর বাড়ি দূরে, তারা হয়তো বাসায় বসে অনলাইনে ক্লাস করছে। পরে সশরীরে ক্লাস নেওয়া শুরু হলে তারা হলে উঠবে।

সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল আমিন সিদ্দিক বলেন, হলের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আবাসিক কক্ষগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের হলে তুলতে প্রধান ফটকসহ পুরো হল বর্ণিল সাঁজে সাঁজানো হয়েছে। হলে প্রবেশের সময় শিক্ষার্থীদের ফুল, মাস্কসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহ করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়ার প্রমাণপত্র দেখে হলে ওঠানো হচ্ছে। এর বাইরে কাউকে তোলা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, শিক্ষার্থীদের বরণে সব হলের প্রাধ্যক্ষরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে হলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সংস্কার কাজসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অন্তত এক ডোজ টিকা নিয়েছে এমন শিক্ষার্থীদের যেন হলে তোলা হয় এটি নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল থেকে হলগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যেসব শিক্ষার্থী এখনও টিকা নিতে পারেনি, তাদের ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের যেসব কোভিড হাসপাতাল রয়েছে, সেখানে গত ৭ নভেম্বর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার জন্যে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এটি  ১১ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে।  

দেশে করোনার সংক্রমণ দেখা দিলে গত বছরের মার্চে বুয়েটের আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে চলমান রাখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।