পাহাড়িদের অবিসংবাদিত নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাকে বুধবার ঢাকা এবং রাঙামাটিতে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বালনের মধ্য দিয়ে সঙ্গে স্মরণ করা হয়েছে।

এদিন ছিল তার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর নিজ দলের বিভেদপন্থীদের হাতে নিহত হন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিষ্ঠাতা এই মানুষটি। সেই থেকে আঞ্চলিক এই রাজনৈতিক দলটির হাল ধরে আছেন তারই ছোট ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা।

সন্ধ্যার দিকে বড় বোন জ্যোতিপ্রভা লারমা মিনুকে সঙ্গে নিয়ে সন্তু লারমা তার রাঙামাটি শহরের কল্যাণপুরের নিজ বাসভবনে মোমবাতি জ্বালিয়ে ভাইয়ের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

রাজধানীতে এম এন লারমা স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল 'বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি'। কমিটির আহ্বায়ক খুশী কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মেসবাহ কামাল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সহ-সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. কাজল দেবনাথ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রংসহ দেশের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

বুধবার সন্ধ্যায় বড় বোন জ্যোতিপ্রভা মিনুকে সঙ্গে নিয়ে এম এন লারমার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা

অধ্যাপক খাইরুল ইসলাম চৌধুরী স্বাগত ও জাতীয় কমিটির বক্তব্য এবং ড. জোবাইদা নাসরীন কণা শোক প্রস্তাব পাঠ করে শোনান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতার অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন।

এম এন লারমার মৃত্যুর দিনটিকে একটি বেদনার দিন আখ্যা দিয়ে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, 'এই দিনে প্রতিশ্রুতিশীল জাতীয় এক নেতাকে হত্যা করা হয়েছে। তার ক্লাসমেট ও জেলমেট হিসাবে আমি গর্বিত।' তিনি নিজেকে লারমার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনার দূতিয়ালি করার কথা উল্লেখ করে বলেন, 'বাঙালি উগ্র জাতীয়তাবাদী ও ধর্মান্ধ নেতাদের দাপটে এম এন লারমাকে অপমান করা হয়। কিন্তু পরে বঙ্গবন্ধুর ভুল ভেঙেছিল। তাই লারমাকে ডেকে পাহাড়ে বিশেষ স্বায়ত্বশাসনের ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস দিয়েছিলেন। সেই বিশেষ স্বায়ত্ত্বশাসনের সংক্ষিপ্ত রূপই পার্বত্য চুক্তি।

আমির-উল ইসলাম বলেন, 'মানুষের প্রতি মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার সহমর্মিতা ছিল ভীষণ। গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্ন ছিল তার। আমাদের খুব সৌভাগ্য ইন্টিগ্রেটেড বাংলাদেশ যেখানে বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি ও বহু জাতির বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠান জন্য তাদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এম এন লারমা। তার চিন্তাগুলো নতুন প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া দরকার যিনি শোষণ ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।'

এম এন লারমার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন

রাঙামাটিতে এম এন লারমা স্মরণ: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার উদ্যোগে সংগঠনের কার্যালয়ে অস্থায়ী শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন।

এসময় সংক্ষিপ্ত শোক সভায় বক্তব্যে দেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির নেতা সৌখিন চাকমা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি সুমন মারমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশন নেত্রী আশিকা চাকমা প্রমুখ। বিকেলে শহরের দেবাশীষ নগর এলাকায় এমএন লারমা মোমোরিয়েল ফাউন্ডেশন ও এমএন লারমা গণস্মৃতি পাঠাগারের উদোগে শোক সভার আয়োজন করা হয়।