জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রচনায় দেশের প্রান্তিক মানুষের চিত্র সাবলীলভাবে ফুটে উঠেছে। তার রচনার শব্দ-ছবিতে প্রবলভাবে প্রকাশিত হয়েছে তার 'স্বনির্ভর' দর্শন।

বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে 'বঙ্গবন্ধুর রচনায় স্বনির্ভর ভাবনা' শীর্ষক বঙ্গবন্ধু বক্তৃতামালার সপ্তম পর্বে আলোচকরা এ কথা বলেন। তারা বলেন, জাতির পিতার স্বনির্ভর ভাবনায় মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষমতার শর্তও গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে। তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় স্বনির্ভরতা।

'সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন আর্টস অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সেস (কারাস)' এবং 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি' যৌথভাবে এ বক্তৃতামালার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টি পরিচালক ও ইউজিসি অধ্যাপক ড. ফকরুল আলম। সঞ্চালনা করেন রিসার্চ ফেলো হাসান নিটোল।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, বঙ্গবন্ধু কোনো ক্যারিয়ারিস্ট মানুষ ছিলেন না। তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় স্বনির্ভরতা। দেশের মানুষের একসঙ্গে স্বনির্ভর হয়ে ওঠা। স্বনির্ভরতা বলতে কখনোই স্বয়ংসম্পূর্ণতা বোঝায় না। আমরা কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। সমাজে আমরা নিজ নিজ জায়গা থেকে একে অপরকে সাহায্য করে নিজেরা স্বনির্ভর হয়ে বেঁচে থাকি। বঙ্গবন্ধুর স্বনির্ভরতার ভাবনাও এই অর্থ বহন করে।

বক্তৃতামালায় 'বঙ্গবন্ধুর রচনায় স্বনির্ভর ভাবনা' শীর্ষক মূল প্রবন্ধে কারাসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো কাজী সামিও শীশ বলেন, জাতির পিতার ব্যক্তিজীবন ও রাজনৈতিক জীবনের ভাব-অনুভবে মানুষ, মানবকল্যাণ বোধ গভীরভাবে মিশেছিল বলেই তিনি যা ভাবতেন, তাই অকপটে লিখেছেন এবং বলতেনও। তার জীবনের মতোই রচনায়ও কোনো ভণিতা, কোনো অহং ছিল না।

মূল প্রবন্ধে প্রবন্ধকার আরও বলেন, তার জীবন শিক্ষাকেন্দ্রীক 'স্বনির্ভর' ভাবনার বিষয়গুলো 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'তে যেমন আছে, তেমনি আছে 'কারাগারের রোজনামচা' ও 'আমার দেখা নয়াচীন' গ্রন্থেও। কোথাও কোনো পার্থক্য নেই, ভিন্নতা বা ব্যতিক্রম খুঁজে পাওয়া যায় না। গ্রন্থগুলো কারাগারে রচিত হয়েছিল বলেই রচনাগুলোয় তার ব্যক্তিগত দুঃখ-অনুভূতি-হতাশা-ব্যর্থতা-দায় অনুভবের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বঙ্গবন্ধুর রচনায় স্বনির্ভর ভাবনায় মানবকল্যাণের পাশাপাশি নারী এবং শিশুর প্রতিও সবিশেষ গুরুত্ব পেতে দেখি। তার এই ভাবনায় মানুষের বেঁচে থাকার জন্য মৌলিক চাহিদা পূরণে সক্ষমতার শর্তটিও গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কারাসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন ভাসানটেক সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মোহন।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ফকরুল আলম বলেন, বঙ্গবন্ধু জেলে থাকার সময় 'আমার দেখা নয়াচীন', 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' এবং 'কারাগারের রোজনামচা' বই তিনটি লিখেছেন। তার এই তিনটি বইয়ের বাইরেও আমাদের গবেষণার পরিধি বাড়াতে হবে। বঙ্গবন্ধুর গবেষকদের বিভিন্ন গ্রন্থের ওপর নির্ভর করতে হবে।