
চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি থেকে তোলা তিনটি খরগোশ ছানার ছবি - বখতিয়ার হামিদ
ভাদ্রের মাঠঘাট জলে থইথই, বাড়ির পুকুর-দিঘি জলে টইটম্বুর। ভাদ্রের বাতাসে মাঠগুলো মনে হচ্ছে ঢেউখেলানো নদী- ছোট ছোট ঢেউ খেলছে টলটলে জলে। বাড়ির পুকুরঘাট থেকে তিনখানা তালের ডোঙায় চড়ে বসে মোট পাঁচজন ছেলেমেয়ে। পুকুর থেকে বেরিয়ে তারা ঘুরে বেড়াবে জলভরা মাঠে- করবে হইচই, দুষ্টুমি করে ডুবিয়ে দেবে দু-একটি ডোঙা, আবারও ডোঙা তুলে জল সেঁচে ভাসাবে ডোঙা। দারুণ মজার খেলা। ভাদ্রের মাথাপোড়া রোদে ঘেমে গেলে পানকৌড়ি বা ডুবুরি পাখির মতো টুপটাপ গোটাকয় ডুব দিয়ে ঠান্ডা করে নেবে শরীর- সে শরীর শুকিয়ে যাবে আবার চড়া-কড়া রোদে। মাঝমাঠে গিয়ে শুরু করবে 'ডোঙাবাইচ'- প্রবল বেগে ডোঙা চালাতে গিয়ে ডোঙায় ডোঙায় ঠোকাঠুকি হয়ে দু-একখানা ডোঙা ডুবেও যেতে পারে। ডুবুক! আবারও জাগাও ডোঙা- চালাও টার্গেটের দিকে। জায়গায় জায়গায় (মাঠের ওই জায়গাগুলো উঁচু) মাথা তুলে আছে হোগলা-কাশ-ছিটকা ঝোপ, কলমি শাক ভেসে আছে এখানে-সেখানে। আছে সাদা শাপলা ও নীল শাপলা। মাথার ওপরে নির্মেঘ আকাশ- বলা যায় ইস্পাতনীল আকাশ, বালিহাঁসদের ওড়াউড়ি-ডাকাডাকি। দূরের রোপা আমন ক্ষেতের ভেতর থেকে ভেসে আসছে কোড়াপাখির জোরালো গলার ডাক। একঝাঁক শকুন আকাশে বৃত্তাকারে ঘুরপাক খেতে খেতে ক্রমে আরও ওপরে উঠে যাচ্ছে- দূরে কোথাও যদি নজরে পড়ে গরু-মোষের 'মড়ি'।
কাশবন, কাশফুলে এখন আর আগ্রহ নেই এই পাঁচজনের। ডোঙাবাইচের শেষ সীমানায় এসে পৌঁছাল তারা দ্রুতবেগে। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হলো তিনখানা ডোঙা। জলভরা মাঠের এ-প্রান্তের শেষেই ঝোপঝাড়পূর্ণ বেশ বড় একটা উঁচু মাঠ। জায়গায় জায়গায় মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো তাল-খেজুরের গাছ। ঘাসবন। নাটাকাঁটা ঝোপ। ছোট ছোট তাল-খেজুরের চারা। একটু বিশ্রামের জন্য ওরা এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল একটা উড়ে আমের ছায়ায়। জলের কিনারের উঁচু তালগাছ থেকে প্রচণ্ড শব্দে একটি পাকা তাল পড়ল আধা জল-আধা মাটিতে। সেকেন্ডের ভেতর গাছটার গোড়ার দুর্গম-দুর্ভেদ্য ঝোপ থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে একজোড়া বুনো খরগোশ বা 'লাফা' অথবা 'লাফারু' চোখের পলকে বেরিয়ে গিয়ে ঢুকে পড়ল দূরের গ্রামীণ বাগানটায়। উল্লসিত পাঁচজন আনন্দে চিৎকার দিয়ে ছুটল তালগাছটির দিকে। ছানা পাওয়া যাবে নিশ্চয়ই! পোষা যাবে তাহলে। দারুণ মজা হবে।
না, তালপড়া গাছটার গোড়ায় লাঠিসোটা দিয়ে খোঁচাখুঁচি করে ও বৈচির কাঁটায় মাথা-ঘাড় রক্তাক্ত করে আর তন্নতন্ন করেও পাওয়া গেল না কোনো ছানা। তবে ১০/১৫ হাত দূরের আরেকটা তালগাছের গোড়ার ঝোপ থেকে এ সময়ে তীক্ষষ্ট কণ্ঠের কান্নার মতো শব্দ ভেসে এলো, শোনা গেল ঝোপঝাড়ের শব্দ বা আলোড়ন। দৌড়ে এখানটায় পৌঁছানোর আগেই একটি খরগোশ ছানা মুখে ধরে বেশ হাসি হাসি মুখে ও গদাইলস্করি চালে খোলায় বেরিয়ে এলো মস্তবড় একটা গুইসাপ। ছেলেমেয়েরা করল তাড়া, গুইসাপটি কিছুটা দৌড়ে গিয়ে চড়ে বসল একটা আমগাছে। দুষ্টু ছেলেমেয়েগুলো লাঠিসোটা জোগাড় করে চড়ল গাছে- ব্যাটা গুইসাপ! খরগোশের বাচ্চা
খাবি! না, এটির নামও গুইসাপ! মাটি-বৃক্ষ ও জলে সমান সচল, সাবলীল। মুখের মজাদার খাবার কি আর ফেলে! অনেক উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়ল মাঠের জলে। তার পরে ডুব। একেবারে অদৃশ্য। ছেলেমেয়েগুলো জানে- জলের তলায় ডুব দিয়ে এরা আধাঘণ্টারও বেশি সময় থাকতে পারে।
অল্পক্ষণ খুঁজতেই দুষ্টু-মিষ্টি চেহারার ফুটফুটে চারটি তিন/চার দিন বয়সী খরগোশ ছানা ওরা পেয়ে গেল- ছাগলছানা বা বিড়ালছানার মতো আদর করে কোলে নিল, ছটফট সামান্য করছে বটে, ভয়ে কাঁপছে থিরথির করে। ওরা যদি ছানাগুলো না-ও আনত, বাঁচতে পারত না বোধ হয়। ওই গুইসাপটি আবারও আসত। খরগোশেরা ছানা স্থানান্তর করতে পারে বটে, গুইসাপ হলো তল্লাশিতে সেরা, সার্চ করে করে ঠিকই খোঁজ পেয়ে যেত।
চারটি ছানা নিয়ে পাঁচজনে ডোঙায় চড়ে বাড়ির হিজল তলার ঘাটে যখন পৌঁছল, তখন যে কী আনন্দ বাড়ির সবার! তবে এই আনন্দটা দু-একদিনের ভেতর বিষণ্ণতায় পরিণত হয়। ড্রপার বা ফিডারে ছাগল-গরুর দুধ পান করিয়েও বাঁচানো যায় না খরগোশ ছানাদের। আমার নিজের ও গ্রামের আরও অনেকের অভিজ্ঞতার আলোকে এ কথা বলছি।
হায় বুনো-খরগোশ! বাগেরহাট-খুলনায় পরিচিত ছিল 'লাফা' নামে। লাফাতে পারে ছন্দোময়-শিল্পিত গতিতে। লাফানোর সময় দর্শনীয় লম্বা কান দুটি সেঁটে থাকে ঘাড়ের দু'পাশে। ওই দুটি কান খাড়া করে যেমন বিপজ্জনক শব্দ শোনার চেষ্টা করে, তখন দেখতেও লাগে খুব সুন্দর- তার চেয়েও সুন্দর হলো বড় দুটি কানের 'কানতালি'। কানতালি বাজায় ওরা আনন্দে, শত্রুকে ভয় দিতে ও ছানাদের সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি খেলার সময়। ১৯৬০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বাগেরহাট-ফকিরহাটে বুনো খরগোশ টিকে ছিল- ৬০ থেকে ৮০ পর্যন্ত সন্তোষজনক সংখ্যায় ছিল। কৈশোরে চাঁদনি রাতে বন্দুক হাতে বাবা যখন যেতেন গ্রামের মাঠগুলোতে, তখন প্রায়ই সঙ্গে যেতাম আমি ও আমরা। বাবা প্রায় প্রতি রাতেই (শরৎকাল থেকে গ্রীষ্মমকাল পর্যন্ত) দু/তিনটি খরগোশ শিকার করতেন। তা থেকে একটিকে বহন করার সুযোগ আমি পেতাম। লম্বা একটি কান মুঠিতে পুরে মাটিতে হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচড়াতে বাড়িতে আনতাম বীরপুরুষের মতো। আরেকটু বড় হয়ে আমরা চাঁদনি রাতে মটরশুঁটি-ছোলা-মুগডাল-মসুর ও অন্যান্য স্থানে জোটবদ্ধ হয়ে খরগোশ তাড়াতাম। ওটা ছিল আমাদের কাছে খরগোশদের সঙ্গে 'গোল্লাছুট' খেলা। ধরতে তো আর পারতাম না, চাঁদের আলোয় আমরা যেন হারিয়ে যেতাম অপার্থিব বা রূপকথার জগতে। তবে কখনও কখনও বাচ্চা ধরে ফেলতাম, পিচ্চি হলে ছেড়ে দিতাম- ওগুলো খাওয়ার যোগ্য ছিল না, দুধ পান করার বয়সই ওদের শেষ হয়নি। খরগোশের মাংস বৃহত্তর খুলনা জেলায় খাওয়া হতো। জানা যায়, সারাদেশেই খাওয়া হতো, ধরতে পারলে আজও খাওয়া হয়। এদের পা অনেকটাই বিড়ালের থাবার মতো, তবে নখর বিড়ালের চেয়ে অনেক ছোট- অনেকটা 'বরই কাঁটার' মতো। মাংস সুস্বাদু। আমার বিচারে খরগোশদের সবচেয়ে প্রিয় খাদ্য হলো মুগডাল। তার পরে মসুর ডাল-মটরশুঁটি-নাগালে থাকলে কচি শিম-গাজর-শিকড়-পছন্দের কচিপাতা। গোল আলু খায় বলে শুনেছি, মিষ্টিআলুর কথাও শুনেছি। 'দুধধানের' সাদা তরল পান করে। মাটিতে পড়া পাকা তালপাকা খেজুর-গোলাপজাম-জাম-খুঁদিজামসহ মিষ্টি বরই, হামঝুমও খায়। বিশেষভাবে আমরা খেয়াল করেছি- শরতের মধ্যভাগ থেকে মাঘের শেষভাগ পর্যন্ত দূর্বাঘাসে জমা শিশির পান করে তৃপ্তিসহকারে। খুব পছন্দের আরেকটি খাবার হলো 'বীজতলার' কচি ধানের পাতা। খেজুর-তালের রস মাটিতে পড়লে চেটেপুটে খায়। এদের মূল আশ্রয়স্থল হলো (এরা মূলত নিশাচর, দিনেও বেরোয় কস্ফচিৎ) খড়বন-বেতঝোপ-পানের বরজ-আখক্ষেতসহ যে কোনো ধরনের ঝোপাল জায়গা। রাতে নানার সঙ্গে জালের ফাঁদ পাততে গিয়ে যেমন চাঁদনি বা আঁধার রাতে টর্চের আলোয় ওদের জ্বলন্ত চোখ দেখেছি, তেমনি রাতে বন্দুক শিকারি বাবার সঙ্গে গিয়েও তা দেখেছি। খরগোশ ধরা জাল সাধারণত মোটা সুতা দিয়ে বানানো হতো- পরে আসে নাইলনের সুতা, যা অনেকটাই লম্বা-চওড়ায় ব্যাডমিন্টন খেলার নেটের মতো। জালে ধরা পড়লে বা গুলি খাওয়ার পরে আহত খরগোশের টলটলে চোখে শিশিরবিন্দুর মতো জল জমতে আমি দেখেছি- নিজে গুলি করেও তা দেখেছি। কাঁদত কি! আমাদের উপজেলা ফকিরহাটের কিছু শৌখিন মানুষ জাল পেতে খরগোশ শিকার করত। শরতের শেষ থেকে পুরো শীতকাল ও বর্ষাকালের শিশিরভেজা মাটি ও বৃষ্টিভেজা মাটির ওপরের পায়ের ছাপ দেখে ওদের আশ্রয়স্থলের সন্ধান পাওয়া যেত। ওদের মলের (লেদি) চিহ্ন অনুসরণ করেও সন্ধান মিলত। পুরুষ খরগোশের লেদি বা মল অনেকটাই ছাগলের লেদির মতো, গোল গোল বড়ি যেন। আকারে খরগোশের লেদি ছোট। তবে মর্দাটার বা পুরুষের লেদি ডিম্বাকার, মেয়েটার লেদি গোলাকার। দিনে বা খুব ভোরে অথবা শেষ বিকেলে এরা মাঠের পাখি বুনো কোয়েল বা নাগরবাটইয়ের সঙ্গে মিলেমিশে চরে। হয়তো বা এর পেছনের কারণ হলো- বিপদ এলেই যেন কেউ না কেউ টের পায়, বিপদসংকেত দেয় দেহ ভাষায় তথা চোখের ভাষায়। নিরীহ প্রাণী খরগোশ। অথচ দিনের বেলায় এদেরকে দেখলেই ফিঙে-ছাতারে-বুলবুলি-শালিক ইত্যাদি পাখি ওদের ঘিরে বা যে ঝোপে লুকিয়েছে- সেই ঝোপের ওপরে উড়ে ঘুরে স্লোগান দেয়। এর কারণ আজও আমার কাছে অজানা। এই পাখিদের সঙ্গে শত্রুতার নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে! খরগোশেরা কি সুযোগ পেলে উল্লিখিত পাখিদের ডিম-ছানা খায়! কিন্তু সেটা সম্ভব কীভাবে!
দিনের আশ্রয়ের জন্য পাটের চারার ক্ষেত (যে গাছগুলো এক-দেড় ফুট বড় হয়েছে) খুবই আদর্শ স্থান এদের। কিন্তু আগে উল্লিখিত পাখিদের নজরে যদি পড়ে যায়, তাহলে কখনও কখনও বিপদ ঘটে। পাখিদের ওড়াউড়ি ফলো করে খেপজালে আটকাতে পারে কোনো মানুষ। গুলিও করা চলে। যে কোনো স্পটে গুলি লাগার সঙ্গে সঙ্গে খরগোশ ঝট করে খাড়া লাফ দেবেই। সঙ্গে হয়তো আছে তিন/চারটি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছানা। আনাড়ি ছানাগুলো কিছুই বোঝে না। বোঝে না মৃত্যু। চুপচাপ বসে থাকে। এই বয়সী ছানারা বেশ স্বাস্থ্যবান হয়ে থাকে। গোলগাল ছানাগুলো দেখলে আদর করতে ইচ্ছা করবে। বয়সী খরগোশরা একনজরে লালচে-বাদামি। ছানারা হয় কালচে-বাদামি। স্বাস্থ্যবান ও নাদুসনুদুস।
দ্রুতগতির এই প্রাণীরা আমার মতে বোকার হদ্দ। মানুষ বা কুকুরের ধাওয়া খেলে কিছুটা দৌড়ে গিয়ে ঝোপঝাড় বা কলাগাছের ভেতর মাথা গুঁজে দেবে। ওদের ধারণা- কেউ দেখছে না ওদের। দারুণ ভীতু আর অসম্ভব টেনশনে ভোগা খরগোশরা লাফ দেওয়ার সময়ে যদি একটি ছোট ঢিলের চোটও খায় মাথা বা শরীরের যে কোনো জায়গায়, পড়ে যাবে- বেহুঁশ হবে- এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
অনেক সময় সাহসী হতেও দেখা যায়। যেমন- বনবিড়াল-গুইসাপ-শিয়ালকে ভয় দেখায়; রুখে দাঁড়ায় (যদি কিনা ছানা থাকে)। ১৯৬৯ সালের চৈত্র মাসে ঝোপ থেকে প্রথমে ছিটকে বেরোতে দেখি একটি খ্যাঁকশিয়ালকে, তাকে তাড়া করে একজোড়া খরগোশ- চৈত্রের রোদে পোড়া বিশাল মাঠটি পাড়ি দিল দু'জাতের প্রাণীই- গ্রামীণ বন-মাঠের যারা চ্যাম্পিয়ন দৌড়বিদ। কিন্তু সেদিন যে দৌড় প্রতিযোগিতাটা আমরা অনেকেই দেখেছিলাম- তাতে খ্যাঁকশিয়ালই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। খরগোশের ছানা আমরা উল্লিখিত ঝোপটিতে খুঁজে পেয়েছিলাম।
বাংলাদেশের আবাসিক এই বুনো খরগোশটি ১৯৭০ সাল পর্যন্ত সারাদেশেই দেখা যেত। টিলা-পাহাড়-বনে ছিল। দেশের উত্তর প্রান্তের গারোপাহাড় শ্রেণিতে ছিল- ছিল দেশের শালবন অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। বাগেরহাটে সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল একজোড়াকে- ২০১৪ সালে। শেষ বিকেলে ওরা একটা ধানের বীজতলায় এসেছিল। আমি নিজে আমার এলাকায় সর্বশেষ দেখেছি ১৯৯১ সালে। এখন আর নেই।
বুনো খরগোশের ইংরেজি নাম Indian Hare/Rufous-tailed Hare। ফাইট্টা, লাফা, শশক ইত্যাদি নামেও পরিচিত। বৈজ্ঞানিক নাম Lepus nigricollis। দৈর্ঘ্য ৪০-৭০ সেন্টিমিটার। লেজ ১০ সেন্টিমিটার। ওজন ১.৩৫ থেকে ৭.০ কেজি। ১৯৭৮ সালে আমি ফকিরহাট বাজার থেকে (হাটবার) মুরগির ও ছাগলের হাটখোলা থেকে ১৪০ টাকায় একজোড়া খরগোশ কিনেছিলাম খাওয়ার জন্য। তখন নিয়মিত খাঁচাবন্দি বুনো খরগোশ বিক্রি হতো বাগেরহাটের বিভিন্ন হাটবাজারে। ওগুলো স্থানীয় জাল শিকারিরা যশোর-কুষ্টিয়া এলাকা থেকে ধরে আনতেন। বন্যপ্রাণী আইন তখন বোধ হয় কার্যকর ছিল না!
ডাগর চোখের নিরীহ এই স্তন্যপায়ীদের মূল প্রজননকাল (যদিও সারাবছরই ছানাসহ দেখা যায় এদের) অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি।
মেয়ে খরগোশ ৪১-৪৭ দিন গর্ভধারণের পর একসঙ্গে এক থেকে চারটি ছানা প্রসব করে। জন্মের সময় ছানাদের শরীরে কালচে ছোট ছোট লোম থাকে- ডাগর দুটি চোখ থাকে খোলা। এই বয়সী ছানাদের প্রথম লম্ম্ফঝম্প মনোমুগ্ধকর- যেন-বা প্রকৃতি-শোকেসের জীবন্ত শোপিস। ছানা দেওয়ার আগে এরা খড়বন-ঝোপঝাড়-কলাঝাড়ের গোড়া বা অন্য জুতসই স্থানে বাসা বানায়। শুকনো পাতা-ঘাস-লতা-কলাপাতা ইত্যাদি দিয়ে বাসামতোন বানায়। মাটিতে সামান্য গর্ত খুঁড়েও বাসা বানাতে পারে। একটি নির্দিষ্ট এরিয়ায় (৩০ ফুট ৩০ ফুট) চার/পাঁচটি আঁতুড়ঘর তথা বাসা করে। যাতে প্রয়োজন হলে ছানাদের অন্য বাসায় স্থানান্তর করা যায়। আখমহালও এদের খুবই পছন্দের জায়গা।
বিষয় : প্রাণিজগৎ বুনো খরগোশ
মন্তব্য করুন