আইনমন্ত্রী সংসদে বলেছেন, 'আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে, একজন সংসদ সদস্য হিসেবে, জনগণের কাছে জবাবদিহির যে দায়িত্ব আছে, সেই দায়িত্ববোধ থেকে ওই বিচারককে সরাতে প্রধান বিচারপতির কাছে অনুরোধ করেছি। আমি কি অন্যায় করেছি? তারা যদি বলেন, অন্যায় করেছি, বলতে পারেন। কিন্তু জনগণের চোখে আমি অন্যায় করিনি।'

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে একটি বিল বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর আলোচনার সময় তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাবের ওপর বক্তব্যে আইনমন্ত্রী এভাবে চিঠি দিতে পারেন কিনা, জাতীয় পার্টির এমপি ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী তা জানতে চান।

জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি বিচারিক রায়ের ব্যাপারে কোনো কথা বলিনি। আমি সুনির্দিষ্টভাবে বলেছি, উনি (বিচারক) বিচার যা করেছেন, রায় যা দিয়েছেন- সেটা উনার ব্যাপার। সেটা আপিলে সিদ্ধান্ত হবে। আমার আপত্তিটা হলো- উনি বলেছেন, কোনো ধর্ষণ মামলা ৭২ ঘণ্টা পরে নেওয়া যাবে না।

ফৌজদারি মামলার নীতি হচ্ছে, এটাকে সময় দিয়ে বাঁধা যাবে না। সেটা হলে ২১ বছর পর জাতির পিতার হত্যার বিচার করা যেত না। ওই হত্যার পর কোনো এফআইআর গ্রহণ করা হয়নি। ওই মামলার বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষী লালবাগ থানায় গেলে মামলা নেয়নি। পুলিশ বলেছিল, 'ব্যাটা তুইও মরবি, আমাদেরও মারবি। এখান থেকে যা।' সেই বিচারহীনতার সংস্কৃতি ইনডেমনিটি আদেশ বাতিলের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব হয়েছিল। সময় দ্বারা বাধিত হয় না বলেই এই বিচার করা সম্ভব হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি কাকে সরাবেন, রাখবেন, সে বিষয়ে তাকে আমি পরামর্শ দিতে পারি না। বিচার বিভাগের অভিভাবক প্রধান বিচারপতির কাছে আমি ওই (৭২ ঘণ্টা পর মামলা না নেওয়ার পর্যবেক্ষণ) ব্যাপারটি দেখতে বলেছি। সংসদের একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে, সরকারের একজন সদস্য হিসেবে জনগণের কাছে আমার যে জবাবদিহির দায়িত্ব রয়েছে, সেই দায়িত্ববোধ থেকেই এটা করেছি।

বিচারককে সরানোর চিঠিতে বিচার বিভাগের ওপর এক ধরনের হস্তক্ষেপ বলে অভিযোগ করে শামীম হায়দার বলেন, কোনো মামলার রায় প্রকাশ হওয়ার আগে এভাবে বিচারককে সরানোর চিঠি আইনমন্ত্রী দিতে পারেন কিনা- প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, একজন আইনমন্ত্রী যদি এভাবে বিচারককে সরাতে অনুরোধ করেন, সেটা তো আর অনুরোধ থাকে না। এটি পেছনের দরজার একটি নির্বাহী আদেশ হয়ে যায়। এ ধরনের পেছনের দরজার আদেশ বিচার ব্যবস্থার জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, একজন সাবেক প্রধান বিচারপতির বিচার হচ্ছে। বিচারক বদলি হচ্ছে। হাইকোর্টে তিনজন বিচারপতিকে দীর্ঘদিন বসিয়ে রাখা হচ্ছে। আমাদের মনে হচ্ছে, বিচার ব্যবস্থাকে দুর্বল ও ডিমরালাইজড করার চেষ্টা হচ্ছে।

তিনি বলেন, বিচার বিভাগকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিচার বিভাগের কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রটি দুর্বল করার চেষ্টা হচ্ছে। এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।