মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার জন্য ৫০ ভাগ পর্যন্ত কম দামে বিমান টিকিট বিক্রির বিজ্ঞাপন বার্তা পাঠানো হয় হোয়াটসঅ্যাপে। করোনা পরিস্থিতিতে যখন বিমান চলাচল সীমিত, তখন এমন লোভনীয় অফার পেয়ে অনেকে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা তড়িঘড়ি যোগাযোগ শুরু করেন। তাদের জানানো হয়, সৌদি আরবের একটি ট্রাভেল এজেন্সিতে চাকরি করেন চট্টগ্রামের বোরহান উদ্দিন। তিনি স্বল্পমূল্যে টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারবেন। তবে এজন্য অগ্রিম টাকা পরিশোধ করতে হবে। এজন্য একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর দেওয়া হয়, যেগুলো বোরহানের স্ত্রী হুমায়রা আক্তার মুন্নীর। টাকা নেওয়ার পর তাদের সব নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

সৌদি আরবের মোবাইল ফোন নম্বরে খোলা হোয়াটসঅ্যাপ থেকে কথা বললেও স্বামী-স্ত্রী দু'জনই দেশে আছেন। পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) বলছে, মূলত প্রতারণাই তাদের পেশা। বিমান টিকিট বিক্রি ছাড়াও নানাভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ওই দম্পতি পাঁচ বছরে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ভুক্তভোগীরা তাকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য দুই লাখ টাকা পুরস্কারও ঘোষণা করেন। অবশেষে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া থানার কেরানীরহাট বাজার সংলগ্ন এলাকা থেকে বোরহানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার সমকালকে বলেন, অষ্টম শ্রেণি পাস করা বোরহান এক সময় মধ্যপ্রাচ্যে ছিলেন। তবে দেশে ফেরার পর কয়েক বছর ধরে তিনি ও তার স্ত্রী পাঁচ উপায়ে প্রতারণা করে আসছিলেন- কম দামে বিমান টিকিট বিক্রি, প্রবাসীদের মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্ট পাঁচ দিনের মধ্যে নবায়ন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জন্মনিবন্ধন সনদ, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স ও ভিসার ব্যবস্থা করা।

তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা জানান, একটি ট্রাভেল এজেন্সির মালিক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী গত ৭ আগস্ট হোয়াটসঅ্যাপে একটি বিজ্ঞাপনী বার্তা পান। তাতে লেখা ছিল- 'বাংলাদেশে আটকে পড়া আরব আমিরাত প্রবাসীদের জন্য সুখবর! বিশেষ ফ্লাইটে দুবাই যাওয়ার ব্যবস্থা। ফুল প্যাকেজ ফেয়ার দেড় লাখ টাকা। যাদের জন্য এই সুবিধা- ইনভেস্টর ভিসা, পার্টনার ভিসা ও বিজনেস ভিসা। আপাতত অন্য কোনো ভিসায় যাওয়ার সুযোগ মিলবে না। শুধু পাসপোর্ট ও ভিসার কপি লাগবে। ভ্যাকসিন দেওয়া না হলেও সমস্যা নেই। তবে করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট লাগবে।' তিন দিন পর তাকে আরেকটি বার্তা পাঠানো হয়। পরে গোলাম মাহফুজ হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করে টিকিট কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তখন বোরহান নিজেকে সৌদি আরব প্রবাসী বলে পরিচয় দেন এবং বিশেষ ফ্লাইটে লোক পাঠানোর প্রমাণ হিসেবে বোর্ডিং পাসের ছবি পাঠান। এরপর ভুক্তভোগী দুবাই যাওয়ার টিকিট চাইলে তাকে একটি ব্যাংক হিসাবে অগ্রিম এক লাখ টাকা পাঠাতে বলা হয়। সেই টাকা পাঠানোর পর আরও ১০ হাজার টাকা চান। এজন্য দেওয়া হয় মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট নম্বর। সেই টাকা পাঠানোর পর তার সঙ্গে যোগাযোগের সব নম্বর বন্ধ পান মাহফুজ। অন্য ট্রাভেল এজেন্সির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে তিনি জানতে পারেন, বোরহান একজন প্রতারক। একই কায়দায় বহু ট্রাভেল এজেন্সির মালিকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।

বোরহানকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, বোরহানের স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবে প্রতারণার বিপুল অর্থ লেনদেনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।