- বাংলাদেশ
- মধ্যবিত্তের ফ্ল্যাট যেন সোনার হরিণ
চট্টগ্রামে আবাসন মেলা
মধ্যবিত্তের ফ্ল্যাট যেন সোনার হরিণ

আবদুল হাকিম ও রুজিনা বেগম। স্বামী ব্যাংকার। স্ত্রী গৃহিণী। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন নগরের বুকে এক টুকরো বাসস্থান নিশ্চিতের। গতকাল শুক্রবার স্বামী-স্ত্রী এসেছিলেন চট্টগ্রাম নগরের র্যাডিসন ব্লুর আবাসন মেলায়। একটি স্থায়ী ঠিকানার খোঁজে ঘুরে ঘুরে দেখেছেন আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্টল। কিন্তু ফ্ল্যাট পছন্দ হলেও দাম সাধ্যের বাইরে। শেষে নিরাশ হয়ে ফিরেছেন তারা।
শুধু আবদুল হাকিমই নন; রিহ্যাব আবাসন মেলায় ফ্ল্যাট কিনতে আসা ক্রেতার অধিকাংশকেই নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। কারণ, ফ্ল্যাটের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। আবাসন ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফ্ল্যাটের দাম কমাতে তৎপর আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব। এ জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়মিত ধরনা দিচ্ছেন তারা। স্টলের বিক্রয়কর্মীরা জানান, চট্টগ্রাম নগরে এক হাজার ৩০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট বিক্রি হচ্ছে এক কোটি ১০ লাখ টাকা। প্রতি বর্গফুটের দাম পড়ে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা। এলাকাভেদে এই দাম বাড়ে, কমে।
এ প্রসঙ্গে রিহ্যাব চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ূম চৌধুরী বলেন, 'একদিকে ভূমির দাম বাড়ছে, অন্যদিকে নগরে ভূমির সংকটও তৈরি হচ্ছে। নিবন্ধন খরচও বেশি। নির্মাণ সামগ্রীর দামও অনিয়ন্ত্রিত। সব মিলিয়ে কম দামে ফ্ল্যাট নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও স্বল্প ও মধ্যম আয়ের মানুষের বাসস্থান নিশ্চিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে রিহ্যাব। তবে এটি সরকারের সাহায্য ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে যদি ভূমি দেওয়া হয়, তাহলে খুব কম টাকায় গ্রাহকদের ফ্ল্যাট দেওয়া সম্ভব হবে।'
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে চার দিনের রিহ্যাব আবাসন মেলা। 'স্বপ্নিল আবাসন সবুজ দেশ, লাল-সবুজের বাংলাদেশ' প্রতিপাদ্য নিয়ে আয়োজিত এবারের মেলায় ২৯টি আবাসন প্রতিষ্ঠান, ছয়টি অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ও ১০টি নির্মাণসামগ্রী প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সব স্টলে ছিল দর্শনার্থী ও ক্রেতার ভিড়। ২০১১ সাল থেকে স্থবিরতা থাকলেও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সুদের হার এক সংখ্যায় নেমে আসায় চাঙ্গা হচ্ছে আবাসন খাত। ২০১৪ সালের হিসাবে, চট্টগ্রামে রিহ্যাবের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ১০ হাজার ফ্ল্যাটের মধ্যে অবিক্রীত পড়েছিল পাঁচ হাজার। এখন সেটি হাজারের নিচে নেমে এসেছে বলে সূত্রে জানা গেছে।
র্যাঙ্কস এফসি প্রোপার্টিজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ দিদারুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের ১৪টি প্রকল্পের ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি হচ্ছে।'
মেলায় ফ্ল্যাটের খোঁজে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি কলেজের এক শিক্ষক সমকালকে বলেন, 'সরকারি কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ গৃহঋণ দেওয়া হয় ৭৫ লাখ টাকা। অথচ একেকটি ফ্ল্যাটের দাম কোটি টাকার ওপরে। দাম শুনে মনে হচ্ছে, নগরে একটি ফ্ল্যাটের মালিক হওয়ার স্বপ্ন মধ্যবিত্তদের অধরাই থেকে যাবে।'
অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৭ শতাংশ সুদের হার এক অঙ্কে নেমে আসায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে স্বস্তি নেমে এসেছে। মেলায় বিভিন্ন হারে গৃহঋণের অফার নিয়ে অংশ নিয়েছে ছয়টি প্রতিষ্ঠান। ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ৭ দশমিক ৯৯ শতাংশ সুদে গৃহঋণ দিচ্ছে ডেলটা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স করপোরেশন লিমিটেড (ডিবিএইচ)। তাদের প্রসেসিং ফি পড়বে দশমিক ৫ শতাংশ। ৭ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ দিচ্ছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। ৭ দশমিক ৫ শতাংশ সুদে ঋণ দিচ্ছে ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড। প্রসেসিং ফি পড়বে দশমিক ৫ শতাংশ। সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিতে হবে গ্রাহককে।
মন্তব্য করুন