প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেতে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকেন। সবারই স্বপ্ন থাকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পছন্দসই বিষয়ে পড়াশোনা করার। কিন্তু সবার সে স্বপ্ন পূরণ হয় না। তবে কেউ কেউ স্বপ্ন পূরণ তো করেন, সেই সঙ্গে সাফল্যের চূড়ায় আরোহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা মানে একটা যুদ্ধ। যেখানে মেধা তালিকায় স্থান করে নেওয়ায় অনেক কঠিন। সেখানে প্রথম হওয়া তো অনেকটা কঠিন ব্যাপার। সেই কঠিন কাজটি করে দেখালেন মেফতাউল আলম সিয়াম। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হলেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) 'ক' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষাও প্রথম হন তিনি। সম্প্রতি বুয়েটের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়।

বুয়েটে প্রথম হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত মেফতাউল। তিনি জানান, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে পড়তে চান তিনি। এ বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা করার পরিকল্পনা আছে তার। সম্প্রতি প্রকাশিত দেশের তিনটি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় তৃতীয় হয়েছেন। এ ছাড়া ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম আর মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় ৫৯তম হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন বগুড়ার এই মেধাবী শিক্ষার্থী। বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন মেফতাউল। বগুড়া শহরের রহমাননগর এলাকার বাসিন্দা সিয়ামের বাবা খোরশেদ আলম অবসরপ্রাপ্ত এনজিও কর্মকর্তা আর মা মুনজিলা আলম গৃহিণী। পঞ্চম শ্রেণির পর থেকেই ভালো ফল করতে শুরু করেন মেফতাউল। এসএসসি ও এইচএসসি দুই পরীক্ষাতেই জিপিএ ৫ পান তিনি। মেফতাউল বলেন, 'ঢাবি আর আইইউটিতে প্রথম হলেও বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হতে পারব কি না, সেটি নিয়ে সংশয় ছিল। জেলা শহরের কলেজ থেকে পাস করে দেশের নামকরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেধাবীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হয়েছে। তবে আমি সব সময় আত্মবিশ্বাস ধরে রেখেছিলাম।'

ভর্তি পরীক্ষায় এমন সাফল্যের পেছনের কারণ জানতে চাইলে মেফতাউল বলেন, 'কেউ মেধাবী হয়ে জন্মায় না। সবার ভেতরেই মেধা সুপ্ত থাকে। জীবনের লক্ষ্য স্থির করে নিজের সুপ্ত মেধাকে জাগানোর জন্য সাধনা করতে হবে। স্বপ্ন ছোঁয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে। প্রচুর পড়াশোনা করতে হবে, পরিশ্রম করতে হবে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। সময়ের কাজ সময়েই করতে হবে। আর পাঠ্যবইয়ের বাইরেও পৃথিবীকে জানতে হবে। তাহলেই সাফল্য মিলবে। যতটুকু পড়বে, তার চেয়ে বেশি প্র্যাকটিস করবে। অনেককেই দেখা যায় নিজের ইচ্ছার চেয়ে মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়। মনের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিলে তাতে সাফল্য নাও আসতে পারে।' সিয়াম পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন বগুড়া বিয়াম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ ৫ লাভ করেন। অষ্টম শ্রেণিতে জিপিএ ৫ ও জেনারেল বৃত্তি পান। সেখান থেকেই এসএসসি পাস করেন। এসএসসিতে তিনি জিপিএ ৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। এরপর সিয়াম এইচএসসিতে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তি হন। সেখানেও তিনি মেধার স্বাক্ষর রাখেন। জিপিএ ৫ ও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান। ৩ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের 'ক' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। সিয়াম এই পরীক্ষায় ১২০ নম্বরের মধ্যে ১১৭ দশমিক ৭৫ নম্বর পান। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯৪ হাজার ৫০৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ১৬৫ জন। 'ক' ইউনিটের এই ভর্তি পরীক্ষা হয়েছিল গত ১ অক্টোবর। তার আগে গত এপ্রিল মাসে প্রকাশিত মেডিকেলের সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ২৮২ দশমিক ৭৫ নম্বর পেয়ে ৫৯তম হন সিয়াম। এর আগে মার্চে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ভর্তি পরীক্ষাতেও প্রথম হন তিনি। সিয়াম বলেন, আমি বুয়েটেই ভর্তি হবো। বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগে পড়তে চাই। এই বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা করার পরিকল্পনা আছে। এটা আমার স্বপ্ন। এ সাফল্যের পেছনে মায়ের পরিশ্রম আর বাবার অনুপ্রেরণা সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে- উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'চিকিৎসক-প্রকৌশলী হতেই হবে, পরিবার থেকে এমন কোনো চাপ ছিল না।

মা-বাবা পড়াশোনার ব্যাপারে সব সময়ই স্বাধীনতা দিয়েছেন।' সিয়ামের বাবা বলেন, 'আমি ছেলের সাফল্যে আনন্দিত। তার ইচ্ছাতেই আমি পড়াতে চাই। সে আগামীতে নিজের মেধা দিয়ে দেশের জন্য কাজ করবে, এটা আমার জন্য বড় পাওয়া।' কলেজে থাকাকালে সিয়াম বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ কেমিস্ট্রি অলিম্পিয়াডে জাতীয় পর্যায়ে প্রথম, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে কলেজ পর্যায়ে অষ্টম এবং বিজ্ঞান একাডেমির স্থানীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডে তিনি প্রথম হন।